ভূমধ্যসাগর থেকে ৫৩২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে স্পেন৷ উদ্ধার করাদের অধিকাংশই উত্তর আফ্রিকা ও সাহারার আশপাশের দেশের নাগরিক৷ তাঁদের বহনকারী কিছু নৌযানের অবস্থা এতই নাজুক ছিল, উদ্ধারের কিছুক্ষণ পরই সেগুলো ডুবে যায়৷
বিজ্ঞাপন
এ সব অভিবাসনপ্রত্যাশী ১৫টি নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসছিলেন৷ স্পেনের উদ্ধারকারী নৌযান রোববার দক্ষিণ উপকূলে অভিযান চালিয়ে আটটি নৌযান থেকে ২৫০ জন এবং তার আগেরদিন নয়টি নৌযান থেকে প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করে৷
এদের মধ্যে রোববার ওই অভিবাসপ্রত্যাশী উদ্ধারের পরপরই তিনটি নৌযান ডুবে যায়৷ উদ্ধারকারীরা বলছেন, নৌযানগুলো খুবই নাজুক ছিল৷
চোরাকারবারিদের পথ ধরে আসছেন শরণার্থীরা
ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে ক্রমেই আরো বেশি উদ্বাস্তু সীমান্তের এভ্রস নদী পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসছেন৷ কিন্তু এ পথেও বিপদ কিছু কম নয়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সীমান্ত বলতে এভ্রস নদী
মাত্র পাঁচ থেকে ছ’মিনিটের মধ্যে এভ্রস নদী পার হওয়া যায়৷ নদী ছোট হলেও তাতে স্রোতের কিছু কমতি নেই৷ এককালে স্মাগলাররা এই পথ দিয়ে মাল পাচার করতো৷ উদ্বাস্তুরা সে পথ ধরার পর থেকে এই রুটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
দু’দেশের সেন্ট্রি টাওয়ার
সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের একাধিক সেন্ট্রি টাওয়ার খাড়া রয়েছে৷ দৃশ্যত তা সত্ত্বেও উদ্বাস্তুরা এই পথ দিয়ে গ্রিসে ঢোকার চেষ্টা করে চলেছেন৷ জার্মান ‘স্পিগেল’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, তুরস্ক জ্ঞাতসারে উদ্বাস্তুদের এই নতুন পথ ধরে ইউরোপে আসতে দিচ্ছে৷ এমনকি গ্রিসের দু’জন সৈন্য ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করলে তুরস্কে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর থেকে গ্রিস নীরব রয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
এভ্রস পার হওয়ার পর
ভূমধ্যসাগর দিয়ে এলে গ্রিসের কোনো দ্বীপে ১৫,০০০-এর বেশি অধিবাসী সম্বলিত কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে হয় – তারপরেও তুরস্কে ফেরত পাঠানোর ভয় থাকে৷ এভ্রস রুট দিয়ে এলে সেখান থেকে বিনা বাধায় দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেললাইন ধরে হেঁটে পাইস শহর অভিমুখে
এভ্রস উদ্বাস্তুদের গ্রিসে ঢোকার পর রেজিস্ট্রি করা হয় ও গ্রিসে অবস্থানের জন্য তিন মাসের ভিসা দেওয়া হয়৷ শুধু এপ্রিল মাসেই ২,৯০০ উদ্বাস্তু এভ্রস হয়ে গ্রিসে ঢুকেছেন৷ গোটা ২০১৭ সালেই এসেছিল মাত্র ১,৪৫০ জন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
রেল স্টেশনে বিশ্রাম
পাইস শহরটি এভ্রস নদী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে৷ উদ্বাস্তুরা এখানে খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন৷ বিশেষ করে শিশুরা পথের কষ্ট আর অভাব-অনটনে কাহিল হয়ে পড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
নি ভিসা শহরের কাছে পুলিশের অপেক্ষায়
এখান থেকে পুলিশ উদ্বাস্তুদের প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাবে৷ উদ্বাস্তুদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে স্থানীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন৷ সিরিয়া বা ইরাক যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এভাবেই উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
পুলিশের গাড়িতে চড়ে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে
উদ্বাস্তুদের ফিলাকিও শহরে অবস্থিত প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তবে সেখানেও কর্মকর্তারা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কাঁটাতারের বেড়ার পিছনে
ফিলাকিও-র প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দেখলে মন খুশি না হওয়ারই কথা৷ উদ্বাস্তুদের আগমন বাড়ার ফলে জায়গা ও পর্যাপ্ত কর্মকর্তার অভাব৷ এভ্রস রুট আপাতত সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কে ইইউ আর তুরস্কের চুক্তির আওতায় পড়ে না৷ এর ফলে উদ্বাস্তুরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে যান৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
বাসে চড়ে বড় শহরে
ফিলাকিও-য় রেজিস্ট্রি করার অল্প পরেই উদ্বাস্তুদের বাসে করে এথেন্স বা থেসালোনিকিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু সেখানেও উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই, কর্মকর্তারাও ব্যতিব্যস্ত৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
9 ছবি1 | 9
জিব্রাল্টার প্রণালীতে আবহাওয়া ভালো থাকায় আফ্রিকা ও সাব-সাহারা অঞ্চলের অনেকেই মরক্কো থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে স্পেনে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ পরে স্পেন থেকে অন্য ইউরোপের কোনও দেশে এসব অভিবাসী ছড়িয়ে পড়বেন৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিব্রাল্টার দিয়ে মরক্কো হয়ে স্পেনে প্রবেশের পথটি ইউরোপ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ কেননা, ভূমধ্যসাগর হয়ে ইটালির মধ্য দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের আগের রাস্তাটিতে কড়াকড়ি চলছে৷ ইটালি সরকার তার উপকূলগুলোতে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযান জারি রেখেছে৷
এবছর এখন পর্যন্ত ৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা ভূমধ্যসাগর দিয়ে স্পেনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, এটি গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ৷
ইউরোপের বর্ডার এজেন্সি ফ্রনটেক্স, এর আগে জানুয়ারি থেকে স্পেন দিয়ে দ্রুতগামী নৌযানের মাধ্যমে অভিবাসীরা অনেক বেশি হারে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা চালাবে বলে সতর্কতা দিয়েছিল৷
এইচআই/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷