1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিজ্ঞানীর মৃত্যুদণ্ড

৩০ অক্টোবর ২০১২

২০০৯ সালে ইটালির লাকিলা শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঠিক আগে একদল বিজ্ঞানী জোর গলায় বলেছিলেন, ভূমিকম্পের কোনো আশঙ্কাই নেই৷ আদালত তাদের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷

ছবি: dapd

প্রাচীনকালে চীনে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলে মানুষ নাকি বেশ ভয় পেত৷ রাজসভায় তখন দুই বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়েছিল যাদের কাজ ছিল এমন অলক্ষুণে ঘটনা সম্পর্কে পূর্বাভাষ দেওয়া৷ তারা ফুর্তিতে ডুবে থাকতে থাকতে একবার ঠিক সময়ে রাজাকে আগাম খবর দিতে পারে নি৷ তখন তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ এটা গল্প না সত্য ঘটনা, তা বলা কঠিন৷ প্রাচীন যুগে কুসংস্কারের বশে মানুষ না হয় এমন অন্যায় করেছে৷ কিন্তু আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগেও কি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাষ না দিতে পারলে কাউকে শূলে চড়ানো যায়?

ইটালিতে অনেকটা সেরকম কাণ্ডই ঘটেছে৷ ২০০৯ সালের ৬ই এপ্রিল লাকিলা শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩০৯ জন প্রাণ হারায়৷ সবাই জানে, ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব নয়৷ এক্ষেত্রে কেউ এমন পূর্বাভাষ চায়ও নি৷ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার ব্যার্নার্দো দে ব্যার্নার্দিনিস আগ বাড়িয়ে ঠিক সেটাই করেছিলেন৷ ভূমিকম্পের ঠিক আগে তিনি শহরবাসীকে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা শান্ত একটা সন্ধ্যা উপভোগ করুন৷ চাইলে এক পাত্র রেড ওয়াইনও পান করতে পারেন৷'' ব্যার্নার্দিনিস একা নয়, আরও ৭ জন বিজ্ঞানী এমন কথা বলেছিলেন৷ এক আদালত তাদের ৬ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে৷

ইঞ্জিনিয়ার ব্যার্নার্দো দে ব্যার্নার্দিনিস শহরবাসীকে শান্ত একটা সন্ধ্যা উপভোগ করতে বলেছিলেনছবি: AFP/Getty Images

তাহলে কি বিজ্ঞানীরা সত্যি দোষ করেছিলেন? তাদের গাফিলতির কারণেই কি ৩০৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দায়ে কাউকে কি শাস্তি দেওয়া চলে? অবশ্যই নয়৷ তবে এমন সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাষ দিয়ে ব্যার্নার্দো দে ব্যার্নার্দিনিস সত্যিই অন্যায় করেছিলেন বলে মনে করেন আরেক বিজ্ঞানী৷ সুনামি, ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার ক্ষেত্রে যতটা নিশ্চিত পূর্বাভাষ দেওয়া যায়, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তা এখনো সম্ভব নয় বলে তাঁরা মনে করেন৷ তাই ‘আজ ভূমিকম্প হবে না' এমন কথা হলফ করে বলা যায় না৷ বললে সেটা হবে মারাত্মক এক ভুল৷

জার্মানির রাজধানী বার্লিনের উপকণ্ঠে পটসডাম শহরে জার্মান ভূ-তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র – জি এফজেড প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে নানা কাজ করে থাকে৷ অধ্যাপক রাইনার কিন্ড ও তাঁর সহকর্মীরা ইটালির বিজ্ঞানীদের পরিণতি দেখে হতবাক হয়ে পড়েছেন৷ ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু'-র দায়ে এমন কারাদণ্ডের ঘটনা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও তর্ক-বিতর্ক চলছে৷ হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাইনহার্ড ম্যার্কেল মনে করেন, এই শাস্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিজ্ঞানীদের আশ্বাসের জের ধরে ৩০০রও বেশি মানুষের মৃত্যুর পর তাদের কাঁধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু'-র দায় চাপালেও ৬ বছরের কারাদণ্ড একেবারেই মানানসই নয়৷

জার্মানিতে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু'-র সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড৷ তবে অপরাধের মাত্রা বেশি হলে তবেই এত কড়া সাজা দেওয়া হয়৷

অনেকে সন্দেহ করছে, ইটালির কর্তৃপক্ষের চাপেই হয়তো বিজ্ঞানীরা শহরের মানুষের মধ্যে অরাজকতা এড়াতে এমন কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ বিপদের আশঙ্কার কথা বললে হয়তো গোটা শহরের মানুষকে আগাম উদ্ধার করতে হতো৷ সেই বিশাল ব্যয়ভার নিয়ে সমস্যা হতো৷ অধ্যাপক রাইনার কিন্ড মনে করেন, অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা জনসাধারণকে সত্য কথা বলতে বাধ্য৷ সে ক্ষেত্রে তাঁদের বলা উচিত ছিল, ‘‘কোনো বড় ভূমিকম্পের হুমকি আছে কি না, তা আমরা জানি না৷''

ছবি: AP

সুইজারল্যান্ডের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান স্টেফান ভিমার মনে করেন, ইটালির বিজ্ঞানীরা আসলে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্য কথাই বলেছিলেন৷ কারণ লাকিলা অঞ্চলে একের পর এক ছোট আকারের ভূমিধস দেখা গিয়েছিল বটে, কিন্তু এগুলিকে আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে বিশ্বাস করা কঠিন৷ মাত্র এক শতাংশ ক্ষেত্রে সত্যি ভূমিকম্পের আশঙ্কা থেকে যায়৷

এই প্রসঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে৷ জনসাধারণকে সতর্ক করার দায়িত্ব কি শুধু বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত? বা তাঁদের কথাই শেষ কথা হিসেবে গণ্য করা উচিত? আগাম উদ্ধারকার্যের ক্ষেত্রেও কর্তৃত্বের প্রশ্ন উঠে আসে৷ অধ্যাপক কিন্ড মনে করেন, এমনটা একেবারেই ঘটা উচিত নয়৷ কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তা বাহিনীকে সেই কাজ করতে হবে৷ অতীতের গবেষণার রেকর্ডকে সম্বল করে বিজ্ঞানীরা বড় জোর সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন৷

লাকিলার ভূমিকম্প ও তার পূর্বাভাষ করতে গিয়ে ইটালির বিজ্ঞানীদের দুরবস্থা দেখে বিশ্বের বাকি বিজ্ঞানীরাও কি আরও অনেক সতর্ক হয়ে যাবেন? অধ্যাপক কিন্ড মনে করেন, তাঁদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই৷ কোনো রকম বাইরের চাপের পরোয়া না করে শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের সঠিক তথ্য পরিবেশন করা উচিত৷

প্রতিবেদন: ইয়ুডিট হার্টেল/এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ