তুরস্ক বা সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত কাউকে বের করা যেন এক অলৌকিক ঘটনা৷ এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷ তবে ভবিষ্যতে উদ্ধার-কাজে রোবট ব্যবহার করা হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশ দুটিতে উদ্ধারকারীরা এখনো যারা বেঁচে আছেন, তাদের উদ্ধারের জন্য দিন-রাত কাজ করছে৷ তারপরও জীবিতদের সবাইকে উদ্ধারের সম্ভাবনা দিনে দিনে কমছে৷
বিভিন্নভাবে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া জীবিত ব্যাক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ যেখানে জীবিত মানুষ পাওয়ার সম্ভাবনা, উদ্ধারকারীরা সেখানে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন৷ চিৎকার করে অবস্থান জানানোর পাশাপাশি মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের বার্তা দেয়ারও অনুরোধ করছেন উদ্ধারকারীরা৷
তবে এ ধরনের উদ্ধার তৎপরতায় সাধারণত আধুনিক যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করতে হয়৷ নতুন নতুন অনেক সরঞ্জাম যুক্ত হচ্ছে উদ্ধার কাজে৷
অনুসন্ধান অভিযানে রোবোটিক সরঞ্জাম ও উন্নত সেন্সর সমন্বিত ইনফ্রারেড এবং থার্মাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপের মাঝে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মানুষের প্রোটিন বাতাসে পরীক্ষা করা হবে৷ ফলে জীবিত কেউ থাকলে তা জানা সম্ভব হবে৷ এরপর উদ্ধারকারীরা লাউডস্পিকার এবং মাইক্রোফোনের সাহায্যে সম্ভাব্য বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন৷ এ ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয়ে ড্রোনের নেয়া থ্রি-ডি চিত্র কাজে আসবে৷
ধ্বংসস্তূপ সরানোর অসম লড়াইয়ে তুরস্ক-সিরিয়া
চারদিকে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা৷ ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা৷ অথচ নানা প্রতিকূলতায় দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
ভয়ঙ্কর ভোর
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর সোয়া চারটা৷ বেশিরভাগ মানুষ তখনও ঘুমন্ত৷ এ সময় সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল৷ মুহূর্তেই ধসে পড়ে হাজারো ভবন৷
ছবি: Omer Yasin Ergin/AA/picture alliance
শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা
ভূমিকম্পের পাশাপাশি অঞ্চলটিতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র হিমেল হাওয়া৷ বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বাইরে খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ধূলিসাৎ হাজারো ভবন
শুধু তুরস্কেই অন্তত দুই হাজার ৮০০ ভবন ধসে পড়েছে, যার একটি কাহরামানমারাসের এই ভবনটি৷
ছবি: IHA/REUTERS
খালি হাতে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবিতদের সন্ধান করতে থাকেন তারা৷ অনেকেই উদ্ধারের যন্ত্রপাতি ছাড়া খালি হাতেই অনুসন্ধান চালান৷
ছবি: DHA
জীবিতের খোঁজে
তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি কাহরামানমারাস৷ সেখানে ধসে পড়া ভবনের ভিতরে প্রাণের স্পন্দন আছে কিনা তা বোঝার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন একজন৷
ছবি: Cagla Gurdogan/Reuters
অর্ধশত কম্পন
মূল ভূমিকম্পের পর অন্তত অর্ধশত আফটার শক বা পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সবচেয়ে ভয়াবহটি ছিল ৭.৫ মাত্রার৷
ছবি: Sertac Kayar/Reuters
বন্দরে আগুন
ভূমিকম্প আঘাত হানা তুর্কি শহর ইস্কেনবেরুনের সমুদ্র বন্দরে মঙ্গলবার আগুন লাগে৷ এতে বহু কন্টেইনার পুড়ে যায়৷ টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়৷ ভূমিকম্পের কারণে একটির উপর আরেকটি কন্টেইনার উঠে আগুন লেগে যায় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা৷
ছবি: Serdar Ozsoy/Depo Photos via AP/picture alliance
বিধ্বস্ত ইদলিব
ভূমকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ ইদলিব৷ গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়লো দেশটির মানুষ৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ভূমিকম্পের কারণে আরেক দফা চললো ধ্বংসলীলা৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
হতভাগা সিরীয়রা
সিরিয়ার এক স্থানীয় সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাড়িঘরেই আশ্রয় নেন ইদলিবেব মানুষ৷ রাশিয়ার বিমান হামলায় আগে থেকেই নাজুক বাড়ি-ঘরগুলো দ্রুতই ধসে পড়ে৷ নতুন ভবনগুলোও রেহাই পায়নি৷ পুরো পরিবারশুদ্ধ মানুষ চাপা পড়েন ভবনের নীচে৷’’
ছবি: Omar Albam
উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকরা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মানুষকে সহায়তার জন্য গঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দ্য হোয়াইট হেলমেটস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করে৷ জারদানায় জীবিত মানুষের খোঁজ করছেন এই দুইজন৷
ছবি: Ahmad al-Atrash/AFP
উদ্ধার হওয়া শিশু
ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া বাড়িগুলোর ভিতর থেকে অনেক জীবিতদেরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার তুরস্কের হাতায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেন এই কর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
ভেঙে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ভবন
ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও৷ তুরস্কের মাল্টায়া প্রদেশে ১৩ শতকের একটি বিখ্যাত মসজিদ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে সোমবার তুষার ঝড়ে কর্মীদের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Volkan Kasik/AA/picture alliance
ইউনেস্কো সাইট
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত একটি দুর্গের ভিতরে অবস্থিত একটি মসজিদ৷ ভূমিকম্পের আগে ও পরে মিনারের চিত্র দেখুন৷
ছবি: AFP
ন্যাটো ও ইইউর সাহায্য কামনা
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো ও ইইউর কাছে সহায়তা চেয়েছে তুরস্ক৷ তাতে সাড়া দিয়ে ১৭টি দেশ থেকে উদ্ধারকর্মীর ২০টি দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই এমনকি ইউক্রেনও তুরস্কের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP
২০ হাজার ছাড়াতে পারে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুযায়ী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে৷ কর্তৃপক্ষের মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক-সিরিয়া মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ বিরূপ আবহাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যাচ্ছে না৷
‘‘জীবিতদের অনুসন্ধান উদ্ধারকারী দলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক,” কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও রাইনল্যান্ড-পালাটিনেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব কাইজারস্লটার্ন-লান্ডাউয়ের রোবোটিক সিস্টেম চেয়ারের প্রধান কার্স্টেন বার্নস জানান৷
বার্নস রোবট ভূমিকম্পে উদ্ধারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ৷ ২০১৬ সালে তার দল ইইউ'র একটি প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিল৷
তার মতে, বৃহৎ আকারের রোবট আটকে পড়া মানুষদের ত্রান পৌঁছে দেয়া ছাড়াও ভেঙে পড়া ভবনের বড় অংশ বিশেষ সরিয়ে ফেলতে সক্ষম৷ ধসে পড়া ভবনের যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ গ্যাস পাইপ থেকে বিস্ফোরণের ঝুঁকি আছে রোবটগুলো সেখানে ঢুকেও কাজ করতে পারে৷
দুটি প্রকল্পের আওতায় কিছু রোবটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ এর ফলে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পে উদ্ধার-কাজে রোবট ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে৷
তবে সত্যিকার ভূমিকম্পের উদ্ধারে রোবট এখনো ব্যবহৃত হয়নি৷ এছাড়াও ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে ব্যবহার করতে হলে নতুন করে রোবট তৈরি করতে হবে, যা অনেক ব্যয়বহুল৷ এ কারণে সিরিয়া ও তুরস্কের উদ্ধার তৎপরতায় এগুলো ব্যবহার করার কোনো সম্বাভনা নাই৷ তাই আপাতত উদ্ধারকারী কুকুরের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷