নেপালে মঙ্গলবারের সাত দশমিক তিন শক্তির ভূমিকম্পে অন্তত আরো ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহতের সংখ্যা প্রায় দু'হাজার৷ বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে চৌতারা নামের একটি ছোট্ট শহর৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা মাইক হাতে মানুষজনকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিত্যাগ করতে বলেছেন৷ চৌতারার অধিকাংশ বাসিন্দা অবশ্য মঙ্গলবার ভূমিকম্পের পর পরই বাড়ি ছেড়ে খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছেন, রাত কাটিয়েছেন তাঁবুতে কিংবা প্লাস্টিকে শীটের নীচে৷
অথচ এই চৌতারাই ২৫শে এপ্রিলের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর ত্রাণকর্মী এবং ত্রাণসাহায্য পাঠানোর একটি কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ সেই সঙ্গে আরো দুঃসংবাদ: ইউএস মেরিন কোর-এর একটি হেলিকপ্টার ছ'জন মেরিন সেনা ও দু'জন নেপালি সৈন্য সহ নিখোঁজ হয়েছে৷ কাঠমান্ডুর ৮০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে সুনখানি অঞ্চলে তার খোঁজ চলেছে৷
মঙ্গলবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল কাঠমান্ডু থেকে ৮৩ কিলোমিটার পূর্বে মাউন্ট এভারেস্ট-এর কাছে, ১৫ কিলোমিটার গভীরতায় – যেখানে ২৫শে এপ্রিলের সাত দশমিক নয় শক্তির ভূমিকম্প ঘটেছিল মাটির মাত্র দশ কিলোমিটার নীচে৷ বুধবার সকালের মধ্যে যে ৬৫ জনের মৃত্যুর খবর যাচাই করা সম্ভব হয়েছে, তার অধিকাংশই ঘটেছে দোলাখা জেলায়৷
ধ্বংসস্তূপে প্রাণের আভাস
ধ্বংস আর বিনাশের মধ্যে ত্রাণকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, যখন এক কিশোরকে ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরে উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/R. Schmidt
পাঁচ দিন পরে উদ্ধার
ভূমিকম্পে চাপা পড়া মানুষদের কারোকে জীবন্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়ার আশা যখন ফুরোতে চলেছে, তখনই কাঠমান্ডুতে উল্লাস! বিপজ্জনক পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোঁজের পর ১৮ বছর বয়সি পেম্বা তামাংকে কাঠমান্ডুর ভেঙে পড়া হিল্টন হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়, নেপালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ঠিক পাঁচ দিন পরে৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
বাঁধ ভাঙা আনন্দ
নেপালের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পুলিশ অফিসার এল বি বাসনেট-কে কাঁধে তুলে নিয়ে উল্লাস! বাসনেট তাঁর হেডল্যাম্পের আলোয় ১৮ বছর বয়সি পেম্বাকে আবিষ্কার করেন এবং টেনে বার করেন৷ পেম্বা নাকি প্রথম দর্শনে তাঁকে ধন্যবাদও জানিয়েছে বলে বাসনেট পরে জানান৷
ছবি: Reuters/N, Chitrakar
আবহাওয়ার দুর্যোগ
ব্যাপক বৃষ্টির ফলে নেপালের সর্বাধিক বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ পাঠানোয় ব্যাঘাত ঘটছে৷ এমনকি হেলিকপ্টারও সেই সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছতে পারছে না৷ এই আবহাওয়ায় সে সব জায়গায় পৌঁছতে পাঁচ দিন লেগে যেতে পারে বলে ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Hussain
বাস তুলে ত্রাণ শিবিরে
কাঠমান্ডুর হাজার হাজার মানুষের মতো গৌতম পরিবারের সদস্যরাও বাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন৷ গৌতমদের গোটা আবাসিক এলাকাটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: DW/A.Singh Choudary
ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে
ত্রাণ যে ধীরগতিতে ভূমিকম্প নিপীড়িতদের কাছে পৌঁছচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ রুষ্ট৷ সরকারি কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে, মানুষের প্রত্যাশা মেটানো সম্ভব হয়নি৷ মানুষজন যাতে কাঠমান্ডু ছেড়ে নিজেদের গাঁয়ে ফিরতে পারেন, সেজন্য পর্যাপ্ত বাস দেওয়া হয়নি বলে রাজধানীতে সরকারি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
ধ্বংসলীলা
ভূমিকম্পের নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে, আহতের সংখ্যা দশ হাজারের বেশি৷ সাত দশমিক আট শক্তির ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কাঠমান্ডুর প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে, এবং মাত্র দশ কিলোমিটার গভীরতায়, যার ফলে ধ্বংসের মাত্রা বেড়েছে৷ নেপালের ৭৫টি জেলার মধ্যে অন্তত ৩০টি জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে৷ অর্থনৈতিক ক্ষতি কোটি কোটি ডলার ছাড়াবে৷
ছবি: Reuters/IFRC/Palani Mohan
বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষতি
কাঠমান্ডু উপত্যকাকে বলা হয় নেপালের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র: এখানে সাতটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট আছে৷ তাদের মধ্যে পড়ে সুবিখ্যাত স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
মাউন্ট এভারেস্টে পর্বতারোহণ আবার শুরু হচ্ছে
আগামী সপ্তাহেই আবার মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়৷ শনিবারের ভূমিকম্পে এভারেস্টে ওঠার পথে ধস নেমে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন পর্বতারোহী ও শেরপা, আহত হয়েছেন আরো ৬০ জন৷ চীন কিন্তু এভারেস্টের নর্থ ফেস এবং তিব্বতের যাবতীয় পর্বতে চড়া এ বছরের মতো নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/R. Schmidt
8 ছবি1 | 8
মঙ্গলবার প্রথম ভূকম্পনের ৩০ মিনিটের মধ্যে ছয় দশমিক তিন শক্তির একটি ‘আফ্টারশক' অনুভূত হয়৷ তার পরে অন্তত ১৭টি কম-বেশি জোরদার আফ্টারশক ঘটেছে৷ সব মিলিয়ে এই ভূমিকম্পে বাস্তবিক প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো পূর্ণাঙ্গ খতিয়ান এখনই পাওয়া কিংবা দেওয়া সম্ভব নয়, বিশেষ করে যখন হিমালয়ের প্রত্যন্ত এলাকার বহু গ্রাম এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে৷
নেপালের প্রতিবেশী দেশগুলিতেও সর্বাধুনিক ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, শুধু অনুভূত নয়, ভারতে বাড়ির ছাদ বা দেয়াল ধসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬ জন৷ চীনা সংবাদমাধ্যম তিব্বতে একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে৷ তবে মঙ্গলবারের ভূমিকম্পকে স্বভাবতই এপ্রিলের ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করা চলে না৷
প্রথমবার প্রায় আট হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ভূমিকম্পের কবলে পড়ে৷ মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে পীড়িত হয়েছিল মাত্র ৬৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা৷ অন্যভাবে বলতে গেলে: এপ্রিলের ভূমিকম্পের কোপে পড়েছিলেন প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ; মঙ্গলবার বিপন্ন মানুষদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫ হাজার, কেন না ভূমিকম্প পীড়িত এলাকাটিতে এবার কোনো বড় শহর ছিল না এবং জনবসতিও ছিল অপেক্ষাকৃত কম৷