বুধবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তুরস্কের ইস্তাম্বুল। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ছয় দশমিক দুই।
তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে ১৫১জন আহত হয়েছেন। ছবি: Ali Cevahir Akturk/Anadolu/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, ১৫১ জন আহত হয়েছেন। ইস্তাম্বুলের গভর্নরের অফিস থেকে জানানো হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে ঝাঁপ দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন মানুষ। তারা আরো জানিয়েছেন, "আহতদের চিকিৎসা চলছে। কেউই গুরুতর আহত হননি।"
ইস্তাম্বুলের ৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে মারমারা সমুদ্রে এই কম্পনের উৎস হলেও ইস্তাম্বুলে এর ভালোই প্রভাব পড়েছে। ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি জুলিয়া হান জানিয়েছেন এই কম্পনের পর শহরের বাসিন্দারা হতভম্ব এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, "মানুষরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাদের এই ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কারণ, তুরস্ক পৃথিবীর ভূমিকম্প-প্রবণ দেশগুলির একটি। ১৯৯৯ সালে একটি তীব্র কম্পনে কেঁপে উঠেছিল ইস্তাম্বুল। ২০২৩-এর দুটি তীব্র ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণপূর্ব বিস্তীর্ণ অঞ্চল সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সেই স্মৃতি এখনো তাজা।"
তুরস্কে ভূমিকম্প: গৃহহীনদের আশ্রয় ট্রেনে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্য়া ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার৷ যারা বেঁচে আছেন, তাদেরও অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব৷ তুরস্কের ইস্কেন্দেরুনে বেশকিছু পরিবার থাকার জায়গা না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে ট্রেনে৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ট্রেন যখন ঘরবাড়ি
তুরস্কের হাতায় প্রদেশের বন্দরনগরী ইস্কেন্দেরুনের প্রধান ট্রেন স্টেশন এটি৷ ট্রেনের বগিগুলোকে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে৷ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে দেশটিতে গৃহহীন হয়েছেন ১৫ লাখের বেশি মানুষ৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
সম্ভাব্য সবকিছুই আশ্রয়কেন্দ্র
এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকার৷ তাঁবু, জাহাজের কন্টেইনার, হোটেল, রিসোর্ট, স্কুল, সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানেই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যেসব ট্রেনের বগি আপাতত ব্যবহার হচ্ছে না, সেগুলোই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষও৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
বিয়েটা কি হবে?
ইউসুফ কুরমা এবং আয়সেল ওজসেলকের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে ভূমিকম্পের আগেই৷ ভূমিকম্পের পর দুজনেই একে অপরকে জীবিত খুঁজে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন৷ কিন্তু এখন কি বিয়েটা হবে? সম্ভবত না৷ নিজেরা আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেনে৷ অন্যদিকে, স্বজনসহ অনেকেই মারা গিয়েছেন৷ আপাতত বিয়েটা পিছিয়ে দেয়ার কথাই ভাবছেন তারা৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
স্মৃতিচারণ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা
কদিন আগেই বিয়ে নিয়ে এত উৎফুল্ল ছিলেন এই ভবিষ্যত দম্পতি৷ কিভাবে আয়োজন করা হবে, সে নিয়ে স্বপ্নের জালও বুনছিলেন তারা৷ অথচ মুহূর্তেই সব ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল৷ তবে এই দুঃখের সময়টাতেই নিজেদের সবচেয়ে বেশি একে অপরকে প্রয়োজন৷ আর সেটিই করার চেষ্টা করছেন তারা৷ বিয়ে না হয় আপাতত স্থগিত, ভালোবাসাটা জোরদার করতে ক্ষতি কী?
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ট্রেনের ভেতরেই ১৮ ঘণ্টা
৫৭ বছরের সাবরিয়ে কারান এবং তার ১৩ বছরের মেয়ে নেহির কারান ট্রেন স্টেশনে হাঁটছেন৷ ট্রেনের বগি অনেক ছোট এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের তেমন কিছুই নেই৷ তবে শীতের কবল থেকে বাঁচাতে তাঁবুর চেয়ে ট্রেনটি বেশি আরামদায়ক৷ এজন্য দিনের ১৮ ঘণ্টাই তারা ট্রেনের মধ্যে থাকেন৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
খাবারের জন্য ত্রাণই ভরসা
কেবল হাঁটাহাঁটি করার জন্য এবং ত্রাণের খাবার সংগ্রহের জন্য বাইরে বের হন ট্রেনে আশ্রিতরা৷ থাকার জায়গা, কাজ কিছুই নেই৷ এমনকি দোকানপাট, বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত৷ ফলে খাবারের জন্যও বিভিন্ন সংস্থার দেয়া ত্রাণের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে কারানের মতো অন্য আশ্রিতদেরও৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ভবিষ্যৎ অন্ধকার?
আরাফাত আতেসের বয়স ৬৩, তার স্ত্রী জেলিহা আতেসের বয়স ৫৩৷ তারাও আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেনের বগিতে৷ নিজেদের সঙ্গে আনতে পেরেছেন কেবল কিছু কাপড়চোপড়৷ যারা আগে এসেছে, তারা ঘুমানোর ব্যবস্থাসহ স্লিপার কেবিন পেলেও আতেসরা পেয়েছেন ফার্স্ট ক্লাসের বগি৷ তাই ঘুমাতেও হয় সোজা বসেই৷ কবে আবার তারা নিজেদের একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন, কিছুই জানা নেই৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
হতাশা কাটবে কবে?
বুচে চেরমির বয়স ২০ বছর৷ তার বাবা একজন ট্রেনচালক৷ ফলে অন্য অনেকের আগেই ট্রেনটিকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করার সংবাদ পেয়ে স্লিপার কেবিনে আশ্রয় নিতে পেরেছেন তিনি৷ ট্রেনের অন্যদের চেয়ে তিনি ভালো আছেন বটে, কিন্তু এর ফলে দুশ্চিন্তা কমছে না একটুও৷ বরং সব স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কিভাবে কাটবে সময়, সেটিই এখন চিন্তার বিষয়৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
8 ছবি1 | 8
ছুটির দিনে ভূমিকম্প
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানান এই ভূমিকম্প স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা বেজে ৪৯ মিনিটে শুরু হয় এবং ১৩ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এর পর ৫০টির মতো আফটারশক হয়।
এদিন তুরস্কে ছুটি ছিল। শিশুরা স্কুলে যায়নি। সাধারণ মানুষরাও রাস্তায় ছুটি উদযাপন করছিলেন।
প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান বলেন, "সৌভাগ্যবশত আর কোনো সমস্যা নেই। ঈশ্বর আমাদের দেশকে সমস্ত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন।"