বছর পঞ্চাশেক আগে ইউরোপে যে সেতু তৈরি হয়েছিল সেগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা ছিল না৷ এখন সেই সেতুগুলোকে নিরাপদ করে তুলতে ইউরোপীয় কমিশন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে৷
বিজ্ঞাপন
এর আওতায় ইউরোপীয় কমিশনের এক গবেষণা কেন্দ্রে কৃত্রিম উপায়ে ভূমিকম্প পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷ এভাবে দু'টি স্তম্ভের শক্তি পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ গবেষক মার্টিন পোলইয়ানেক বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় স্তম্ভের উপরের দিকে কীরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা এই দুই অ্যাকচুয়েটরের মাধ্যমে বোঝা যাবে৷ তারা স্তম্ভ দুটিকে সামনে আর পেছনে নাড়াবে৷’’
সেন্সর আর শক্তিশালী ক্যামেরার মাধ্যমে পরীক্ষার সময় স্তম্ভগুলোর যে অবস্থা হয়, তার তথ্য নেয়া হবে৷ এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেতুগুলোর অবস্থা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি বা উপায় বের করা হবে৷
৫০ বছর আগে সেতু নির্মাণের সময় ভূমিকম্পজনিত নিরাপত্তার বিষয়টি শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল না৷
ইউরোপে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা
07:27
অবকাঠামো মূল্যায়ন কর্মকর্তা আর্টুর পিন্টো ভিয়েরা বলেন, ‘‘ইউরোপের সেতু ও ভায়াডাক্টগুলোকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, আজকের পরীক্ষা সেক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে৷’’
মার্টিন পোলইয়ানেক বলেন, ‘‘ভূমিকম্প সাধারণত ১০-১৫ কিংবা ২০ সেকেন্ড ধরে হয়৷ আর ল্যাবে ৩-৪, এমনকি ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়৷ ফলে ভূমিকম্পের পুরো সময়টায় কীভাবে ক্ষতি সংঘটিত হয়, তা জানা যায়৷’’
পরীক্ষার পর দেখা যায়, যে স্তম্ভটি বল-বেয়ারিংয়ের সাহায্যে ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, সেটি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আর সেতুর অন্যান্য অংশের অবস্থার মডেল, ডিজিটাল উপায়ে প্রস্তুত করা হয়৷
আরেক গবেষক পিয়ের পেগোঁ বলেন, ‘‘সব স্তম্ভসহ একটি সেতুর কম্পিউটার মডেল আমাদের কাছে আছে৷ আর যে দুটো স্তম্ভ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তার মডেলও আছে৷ যেসব তথ্য পাচ্ছি তা দিয়ে প্রথমে এই দুই স্তম্ভ এবং পরে পুরো সেতুর মডেল পরিমাপ করা হয়৷’’
তাহলে কি পুরনো সেতুগুলো এখনই ভূমিকম্প উপযোগী করে সংস্কার করতে হবে, নাকি ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ঠিক করা কম ব্যয়সাপেক্ষ হবে? ভার্চুয়াল মডেল প্রতিটি সেতুর জন্য সেরা সমাধান বেছে নিতে সহায়তা করবে৷
প্রকৃতি ‘রাগ’ প্রকাশ করলে যা হয়
প্রতি বছর গড়ে দশ হাজারের মতো মানুষ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায়৷ ভূ-কম্পনের ফলে সুনামিসহ আরো বিস্তৃত দুর্যোগ সৃষ্টি হয়৷ ভয়াবহ কয়েকটি ভূমিকম্প সম্পর্কে জেনে নিই চলুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barret
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প
রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছে চিলির সমুদ্র উপকূলে, ১৯৬০ সালে৷ নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রায় দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল৷ তাতে অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেই সময় চিলিতে পাঁচ হাজার সতশ’র মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামিতে জাপানে ১৩০ ব্যক্তি এবং হাওয়াইতে মারা যায় ৬১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘গুড ফ্রাইডে’ ভূমিকম্প
এখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি ‘গুড ফ্রাইডে’ বা ‘গ্রেট আলাস্কান’ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত৷ ১৯৬৪ সালের ২৭ মার্চের সেই ভূমিকম্পে ১৩৯ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: Getty Images/Central Press
জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প
জাপানের রেসকিউ ডগ অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য এবং তাঁর কুকুর ভুক্তভোগীদের খুঁজছেন৷ জাপানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির আঘাতে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ এতে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Chiba
২০০৪-এর ভারত মহাসাগর ভূমিকম্প
সমুদ্রের তলদেশে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ১৪টি দেশের ২৮০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ এতে সমুদ্র উপকূলে একশ’ ফুট উঁচু অবধি ঢেউ আছড়ে পড়ে৷ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল এটি৷
ছবি: Getty Images/P.M. Bonafede/U.S. Navy
চিলি ভূমিকম্প, ২০১০
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিলির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উপকূলে আট দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ ভূমিকম্প এবং কম্পন পরবর্তী সুনামিতে প্রাণ হারায় ৪৫০ ব্যক্তি৷ এতে স্থানীয় মৎস শিল্পের প্রায় ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
চীনে ভূমিকম্প, ১৯৭৬
চীনের তাংজিশিয়ানের একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে কোচ৷ ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাইয়ের ভূমিকম্পে শিল্পঅঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২৪২,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর বেসরকারি হিসেব বলছে, প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচলাখের মতো৷
ছবি: Getty Images/Keystone/Hulton Archive
২০১০ হাইতি ভূমিকম্প
হাইতির পোর্ট অফ প্রিন্সে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারিতে সাত মাত্রার সেই ভূমিকম্পে কমপক্ষে দু’লাখ মানুষ প্রাণ হারায়৷