সুনামিতে দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের ট্যুরিস্ট রিসোর্ট পালুসহ দুটি শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে দুই মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস৷ কমপক্ষে ৪০০ মানুষের মৃত্যুর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর এ সুনামিতে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ৷
সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী পালুর পাশাপাশি ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ৮০ কিলোমিটার দূরে থাকা ডোঙ্গালা শহরেও আঘাত হেনেছে সুনামি৷ পালু ও ডোঙ্গালায় প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস করেন৷
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৮৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ সংস্থাটি বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই পালুর বাসিন্দা৷ তবে এ সংখ্যা চারশ' ছাড়িয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো৷
সুনামির আঘাতে পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ফলে স্বাভাবিক উদ্ধার তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে৷ রানওয়ে ও কন্ট্রোল টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে শহরটির বিমানবন্দর৷ দ্রুত বিমানবন্দর মেরামত করে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পালু শহরে সুনামি যখন আঘাত করে, আতঙ্কে লোকজন ছুটাছুটি করছেন৷
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো জানিয়েছেন, অঞ্চলটিতে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করতে সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে৷
‘তীব্র ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা'
শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মাটির খুব বেশি গভীরে ছিল না৷ ফলে শত শত কিলোমিটার দূরেও এর ভয়াবহতা টের পাওয়া গিয়েছিল৷ শনিবার সকাল পর্যন্তও এর আফটারশক টের পাওয়া যাচ্ছিলো৷
অগভীর এসব ভূমিকম্প সাধারণত মাত্রা কম হলেও বেশি বিধ্বংসী হয়ে থাকে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই ও আগস্টে লম্বক দ্বীপের যে ভূমিকম্পে কয়েকশ' মানুষ নিহত হয়েছিলেন, এবারের ভূমিকম্প তার চেয়েও ভয়ঙ্কর৷
ইন্দোনেশিয়া একটি তীব্র ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত৷২০০৪ সালে ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে ভারত মহাসাগরে ভয়াবহ আকারের সুনামির সৃষ্টি হয়৷ এ সুনামিতে ১৩টি দেশে অন্তত দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ নিহত হন৷ শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই নিহত হয়েছিলেন এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ৷
প্রকৃতি ‘রাগ’ প্রকাশ করলে যা হয়
প্রতি বছর গড়ে দশ হাজারের মতো মানুষ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায়৷ ভূ-কম্পনের ফলে সুনামিসহ আরো বিস্তৃত দুর্যোগ সৃষ্টি হয়৷ ভয়াবহ কয়েকটি ভূমিকম্প সম্পর্কে জেনে নিই চলুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barret
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প
রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছে চিলির সমুদ্র উপকূলে, ১৯৬০ সালে৷ নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রায় দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল৷ তাতে অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেই সময় চিলিতে পাঁচ হাজার সতশ’র মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সুনামিতে জাপানে ১৩০ ব্যক্তি এবং হাওয়াইতে মারা যায় ৬১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘গুড ফ্রাইডে’ ভূমিকম্প
এখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি ‘গুড ফ্রাইডে’ বা ‘গ্রেট আলাস্কান’ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত৷ ১৯৬৪ সালের ২৭ মার্চের সেই ভূমিকম্পে ১৩৯ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: Getty Images/Central Press
জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প
জাপানের রেসকিউ ডগ অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য এবং তাঁর কুকুর ভুক্তভোগীদের খুঁজছেন৷ জাপানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরবর্তীতে সুনামির আঘাতে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ এতে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Chiba
২০০৪-এর ভারত মহাসাগর ভূমিকম্প
সমুদ্রের তলদেশে নয় দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ১৪টি দেশের ২৮০,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ এতে সমুদ্র উপকূলে একশ’ ফুট উঁচু অবধি ঢেউ আছড়ে পড়ে৷ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল এটি৷
ছবি: Getty Images/P.M. Bonafede/U.S. Navy
চিলি ভূমিকম্প, ২০১০
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিলির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উপকূলে আট দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ ভূমিকম্প এবং কম্পন পরবর্তী সুনামিতে প্রাণ হারায় ৪৫০ ব্যক্তি৷ এতে স্থানীয় মৎস শিল্পের প্রায় ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
চীনে ভূমিকম্প, ১৯৭৬
চীনের তাংজিশিয়ানের একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে কোচ৷ ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাইয়ের ভূমিকম্পে শিল্পঅঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২৪২,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়৷ আর বেসরকারি হিসেব বলছে, প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচলাখের মতো৷
ছবি: Getty Images/Keystone/Hulton Archive
২০১০ হাইতি ভূমিকম্প
হাইতির পোর্ট অফ প্রিন্সে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারিতে সাত মাত্রার সেই ভূমিকম্পে কমপক্ষে দু’লাখ মানুষ প্রাণ হারায়৷