ভেজালের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কি হচ্ছে?
১১ জুন ২০১৯বছরের ১১ মাস তেমন তৎপরতা চোখে না পরলেও রোজার মাসে বাংলাদেশে ভেজালবিরোধী অভিযান গতি পায়৷ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়াও বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মন্ত্রণালয় এই সময়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচলনা করে৷
গত রমজানে ১২ মে সচিবালয়ে ভেজাল বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন,‘ ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজনে নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হবে'৷ এরপর ২০ মে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম খাদ্যে ভেজালকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানান৷ তিনি বলেন,‘ ভেজালকারীদের অপরাধ একাত্তরের ঘাতকদের চেয়ে কম নয়'৷ একই সময়ে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধন করে খাবারে ভেজাল মেশানোর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করেন৷
২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন প্রনয়ন করে এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড আর সর্বনিম্ন ছয়মাস আর একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে৷
নিরাপদ খাদ্য কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘ আমরা এরইমধ্যে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি৷ আইন প্রয়োগে কিছু জটিলতা আছে তা আমরা ঠিক করবো৷ শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ কেউ মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাবও করেনি'৷ তিনি বলেন,‘ এই আইনটি নাকি কড়া তাই এই আইনে তেমন মামলা হয় না৷মামলা হয় ভোক্তা অধিকার আইনে৷'
তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য(আইন) মাহবুব কবির জানান,‘ আমরা খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি৷ এক মাসের মধ্যেই তা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে উপস্থাপন করব৷ এরপর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রশ্ন আসবে৷ আমরা ভেজালের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর বা যাজ্জীবনের প্রস্তাব করব৷ ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাবও আসতে পারে সেখানে৷ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়'৷
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘খাদ্যে ভেজালের অপরাধে যারা মৃত্যুদণ্ড চান তারা এখনো আমাদের কাছে কোনো প্রস্তাব দেননি৷ তারা আগে প্রস্তাব দিক তারপর আমরা দেখবো'৷ তিনি বলেন,‘ তবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করলে কোনো আসামি যদি বিদেশে পালিয়ে যায় এবং তার মৃত্যুদণ্ড হয় তাহলে তাকে সারাজীবনে আর দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না৷ কারণ সারাবিশ্বে দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হচ্ছে৷ কোনো কোনো দেশ এরইমধ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করেছে৷ নতুন আইন করলে এটা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে'৷
তিনি আরো বলেন,‘দেশে প্রচলিত আইনেই খাদ্যে ভেজালের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে৷ বিশেষ ক্ষমতা আইন দেখেন সেখানে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা আছে৷ কিন্তু কেউ এই আইনে মামলা করে না৷ফলে আইনেরও প্রয়োগ হয় না'৷
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) এর ১(ঙ) ধারায় খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল মেশালে বা ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ বিক্রি করলে বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করার অপরাধ প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন বা ১৪ কারাদণ্ডের বিধান আছে৷ তবে এই এই আইনটিতে কারুর শাস্তির নজির নেই৷
ভেজালের বিরুদ্ধে দেশে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৫, দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ রয়েছে৷ এসব আইনের অধীনেই আবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান আছে৷
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনগুলোর একটা সমন্বয়ও প্রয়োজন৷ নয়তো একই অপরাধে শাস্তির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়৷ শাস্তি নির্ভর করে কোন আইনে মামলা হয় তার ওপর৷