ইটালির ভেনিস শহরের আকর্ষণে পর্যটকদের ঢল নামে৷ বিশেষ করে কার্নিভাল উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ সেই বর্ণাঢ্য উৎসবের পোশাক তৈরি উঁচু দরের শিল্পের পর্যায়ে পড়ে৷ কস্টিউমের পেছনে রয়েছে অনেক পরিশ্রম, ভাবনাচিন্তা৷
বিজ্ঞাপন
নিজেকে হারান ভেনিস কার্নিভালে
03:11
ভেনিস শহরে সেন্ট মার্কস স্কোয়্যার কার্নিভাল উৎসবের প্রাণকেন্দ্র৷ এখানেই পর্যটকরা শহরের শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাদ পান৷ মুখোশশিল্পী থেকে শুরু করে মুচিরা তাঁদের হাতের কাজ দেখানোর সুযোগ পান৷
ফ্রানচেস্কো ব্রিজি তাঁদের মধ্যে একজন৷ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঐতিহাসিক কস্টিউম ডিজাইন ও তৈরি করছেন৷ তিনি নিজে এবার সপ্তদশ শতাব্দীর ভেনেশীয় নাগরিকের পোশাক পরেছেন৷ ইতিহাস তাঁকে মুগ্ধ করে৷ ব্রিজি বলেন, ‘‘অতীতে উঁকি দিয়ে জানতে পারা যায় ফ্যাশন কীভাবে বদলে গেছে৷ প্রত্যেকটি নতুন পোশাকই একেবারে নতুন৷ কখনোই দুটি পোশাক হুবহু একরকম তৈরি করবো না৷''
ভেনিসের কার্নিভাল
২০১৭ সালের ভেনিস কার্নিভাল শুরু হয়েছে শহরটির প্রখ্যাত ক্যানাল বা খালগুলির উপর একটি চোখ ধাঁধানো শো দিয়ে৷ যেমন মুখোশ, তেমন সাজগোজ, তেমন দর্শকদের ভিড়...৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
গন্ডোলা ছাড়া ভেনিস হয় না...
গন্ডোলার পর গন্ডোলা, উৎসবের সাজে, যেন ‘খালের’ জলে পদ্ম ফুটেছে! এ বছর সাগর আর চাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘সাগরের রানি’ বেরিয়েছেন ভেনিসের মুখ্য কানারেজিও খালের জল থেকে, সঙ্গে সাগরের নানা কাল্পনিক প্রাণী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bertorello
এক অপূর্ব পরিবেশ
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূলমন্ত্র হলো ‘সৌন্দর্য, সমুদ্র ও অহমিকা’৷ শিল্পীদের কয়েকজন যেন প্রজাপতির নীল পাখা মেলে বাতাসে ভাসছেন – নীচে মশাল বয়ে নিয়ে যাচ্ছে গন্ডোলিয়াররা৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
সে অনেকদিন আগের কথা...
ভেনিস কার্নিভাল নাকি শুরু হয় ১১৬২ সালে৷ বহু দশক ধরে বন্ধ থাকার পর এই কার্নিভাল আবার শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ ভেনিসের জনসংখ্যা সাড়ে আট লাখ, কিন্তু কার্নিভালের সময় ত্রিশ লাখ মানুষ ভেনিসে আসেন কার্নিভাল দেখতে৷
ছবি: REUTERS/T. Gentile
কে এই নারী? রোমাঞ্চের সঙ্গে কিছুটা রহস্য...
কার্নিভাল বলতে লোকে প্রধানত নাচ-গান-ভাঁড়-শোভাযাত্রার কথাই ভাবে৷ কিন্তু ভেনিস কার্নিভাল যেন কিছুটা রহস্যময়, কিছুটা অজ্ঞাত৷ মুখোশ পরে বলনাচ, গন্ডোলার সারি, সেই সঙ্গে এক বিউটি কনটেস্ট – এক আলাদা জগৎ!
ছবি: REUTERS/A. Bianchi
গন্ডোলায় অপরিচিতা
বিগত অতীতের বেশবাসধারী মানুষ ভেনিসের (জল) পথে পথে: ডামাস্ক, ব্রোকেড, ভারী সিল্কের তৈরি ড্রেস আর মুখের বদলে ভেনিসের প্রখ্যাত মুখোশ পরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bertorello
নানা ধরনের মুখোশ
নানা ধরনের মুখোশ দেখতে পাওয়া যায় ভেনিসের কার্নিভালে৷ ‘বাউতা’ হলো গিল্টি করা একটি মুখোশ, যা সারা মুখ ঢাকে – থুতনির কাছটা হয়ত পাখির ঠোঁটের মতো ব্যাঁকানো, কাজেই মুখোশধারী মুখোশ না খুলেই খেতে, পান করতে ও কথা বলতে পারেন৷ ‘কলম্বিয়ানা’ হলো একটি আধা মুখোশ, প্রায়শই সোনালি-রূপোলি রং বা পালক দিয়ে সাজানো৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/T. Hennecke
কার্নিভালের পোশাক
কার্নিভালমোদীরা সেন্ট মার্কস স্কোয়ারের প্রখ্যাত কাফে ফ্লোরিয়ান কফির দোকানটিতে মিলিত হয়ে নিজেদের সাজপোশাক দেখেন ও দেখান৷
ছবি: REUTERS/A. Bianchi
দেবদূতের মর্তে আগমন
প্রথাটির উৎপত্তি নাকি রেনেসাঁসের আমলে৷ আগের বছরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিজয়িনী একটি তার বেয়ে সেন্ট মার্কস টাওয়ারের ওপর থেকে সটাং নেমে আসেন সেন্ট মার্কস স্কোয়ারের মাঝখানে জনতার ভিড়ে৷ কাজেই এটাকে দেবদূতের উড়াল না বলে ‘পরীর পাখনায়’ বললে কোনো দোষ থাকে না৷
ছবি: Reuters/A. Bianchi
8 ছবি1 | 8
তবে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে৷ কার্নিভালের জন্য ব্রিজি ১২টি রোব বা আলখাল্লা তৈরি করেছেন৷ এই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় পরের কার্নিভালের এঞ্জেল বা দেবদূত বাছাই করা হয়৷
বিখ্যাত এই দর্জির কাজের জায়গায় পৌঁছানো সহজ নয়৷ প্রায় লুকানো ছোট্ট সেই গলি খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ আগে থেকে বলে সেখানে যেতে হয়৷ দোকানে প্রায় ৪০০ কস্টিউম রয়েছে৷ প্রত্যেকটির দাম প্রায় ২,০০০ ইউরোর মতো৷ ঐতিহাসিক রীতি অনুযায়ী সেগুলি তৈরি করা হয়, কাপড়ের মানও বেশ ভালো৷ ফ্রানচেস্কো ব্রিজি বারোক যুগের চিত্রশিল্পী পিয়েত্রো লংগি-র নামে নিজের দোকানের নাম রেখেছেন৷ কারণ প্রাচীন চিত্রকর্ম থেকেই তিনি প্রেরণা পান৷ ব্রিজি কস্টিউম ভাড়া দেন, তবে মাপ অনুযায়ী পোশাক তৈরিও করে দেন৷ ফ্রানচেস্কো ব্রিজি বলেন, ‘‘যে সব মানুষ এখানে আসেন, তাঁরা বুঝতে পারেন আমরা কী করছি৷ কারণ তাঁরা দেখতে পান, কারিগররা হাতে করে সেগুলি তৈরি করছেন৷ তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন৷ আজকাল সহজে এমনটা দেখা যায় না৷''
মাসিমিলইয়ানো ফ্রাৎসোনি এই দোকানের নিয়মিত গ্রাহক৷ আজও তিনি একটি কস্টিউম ভাড়া নিতে এসেছেন৷ ষোড়শ শতাব্দীর শেষ যুগের সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক সাজতে চান তিনি৷ সেই সাজসজ্জা বেশ জটিল৷ ব্রিজি বলেন, ‘‘আমরা এটাকে গর্জিয়েরা বলি৷ আট মিটার লম্বা লেস বা ফিতা দিয়ে হাতে তৈরি ও হাতে সেলাই করা হয় এই পোশাক৷ প্রায় ২ দিন সময় লাগে৷''