1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভেনিস

সুসানে ডাউস/এসি২৯ অক্টোবর ২০১৫

ভেনিস! জলের ওপর ভেসে থাকা প্রাসাদের সমষ্টি, যা দেখতে প্রতি বছর আসেন প্রায় দু' কোটি পর্যটক৷ অথচ একদিকে বিশ্বের উষ্ণায়ন, অন্যদিকে পর্যটক সমাগমের ধাক্কায় সেই ভেনিসের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷

Bildergalerie Venedig UGC
ছবি: Mehrnaz

‘ভাপোরেতো' মানে হচ্ছে জলজ স্কুটার ট্যাক্সি৷ সেই ভাপোরেতো করে কিংবা গন্ডোলায় চড়ে স্বপ্নের শহর ভেনিসে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানো যায়৷ রিয়ালটো ব্রিজ সহ ভেনিসের ক্যানাল বা খালগুলোর উপর মোট চারশো সেতু বা সাঁকো আছে৷

স্থপতি সিলভিয়া রাফায়েলা ইটালির মানুষ৷ ভেনিসে তাঁর পেশার মানুষজনের অনেক কাজ আছে বলে তাঁর ধারণা৷ তিনি বলেন, ‘‘একবার দেখুন, কি চমৎকার! নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যেন সৌন্দর্যের অভ্যন্তরে, ইতিহাসের অভ্যন্তরে বাস করছি৷ ভেনিসের স্থাপত্যের অর্থ বাকি জগতের চেয়ে কিছুটা আলাদা – কারণ আমাদের প্রধান কাজ হল এই স্থাপত্যকে বাঁচিয়ে রাখা, এর রূপান্তর ঘটানো৷''

পুরো শহরটাই যেন কোনো শিল্পীর ‘মাস্টারপিস'৷ ১১৮টি দ্বীপ জুড়ে এই ‘শিল্পকর্ম' ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কোর তরফ থেকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়৷

ভেনিস তার মৌলিকতা বজায় রেখেছে৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শিল্পী ও স্থপতিরা ক্যানালের ধারে অপরূপ প্রাসাদগুলি গড়ে তুলেছেন৷ শিল্পকলা বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া গ্র্যুনব্যার্গ বলেন, ‘‘একমাত্র অনন্য বা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ শহরেরই উত্তরাধিকারের খেতাব পাবার অধিকার আছে৷ বহু দ্বীপ আর উপহ্রদ মিলিয়ে ভেনিস এতোই অসাধারণ যে, বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় তার স্থান পাওয়াটা স্বাভাবিক৷ বলতে কি, ভেনিস ছাড়া ঐ তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যেতো৷'

বিপন্ন ঐশ্বর্য

কিন্তু ভেনিস আজ বিপন্ন৷ সাগরের জল এসে যখন ভেনিস ভাসিয়ে দেয়, এমনকি সান মার্কো চত্বরেও জল ওঠে, তখন সেই জলকে ভেনিসের মানুষরা বলেন ‘আকোয়া আল্টা'৷ ভেনিসের প্রাসাদগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে খাড়া করে পোঁতা গাছের গুঁড়ির ওপর; তবুও তারা প্রতিবছর কিছুটা করে ডুবে যাচ্ছে৷

ভেনিস যাতে একদিন পুরোপুরি সাগরের জলে হারিয়ে না যায়, সেজন্য ‘মোসে' নামধারী একটি প্রকল্প সৃষ্টি করা হয়েছে৷ পানির উচ্চতা এক দশমিক এক মিটার অতিক্রম করলেই বানের পানির বিরুদ্ধে চলমান বাঁধগুলি খুলে যাবে৷ এই সুবিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পটি ইউনেস্কোর অর্থানুকুল্যে বাস্তবায়িত হয়েছে৷ নিউ ভেনিস কনসর্টিয়াম মহাপরিচালক হের্মেস রেডি বলেন, ‘‘আমরা জানি পানি কতোদূর উঠবে৷ সেই অনুযায়ী আমরা পাল্লাগুলো খুলে দেব, যাতে সাগর থেকে উপহ্রদে জল ঢুকতে না পারে৷''

আরেকটি বিপদ হল পর্যটকদের ভিড়৷ বছরে দু'কোটির বেশি টুরিস্ট ভেনিসে আসেন৷ কাজেই বহু ভেনিসবাসী শহরের কেন্দ্র থেকে বিদায় নিচ্ছেন, যা ভেনিসের সত্তা ও মৌলিকতার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷ ভেনিস শেষমেষ একটা মিউজিয়াম হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ ক্লাউডিয়া গ্র্যুনব্যার্গ বলেন, ‘‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার পরিষদ ভেনিসকে তার কর্তব্য স্থির করে দিতে না পারলেও তাদের একটা প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে৷ তারা কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হতে, টুরিস্টদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বলতে পারে, যাতে টুরিস্ট এবং ক্রুজ জাহাজের সর্বোচ্চ সংখ্যা স্থির করা যায়৷ নগর কর্তৃপক্ষ তা না করলে পরিষদ ভেনিসকে তথাকথিত লাল তালিকায় রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে – এটি হল বিপন্ন বিশ্ব উত্তরাধিকারসমূহের তালিকা৷ লাল তালিকায় ফেলাটা একটা বড় আকারের প্রতীকী পদক্ষেপ৷''

ভেনিসকে বাঁচাতে হলে

তা এড়ানোর জন্য একটা বিশেষ পর্যটন নীতি নিয়োগ করতে হবে৷ টুরিস্টদের ভিড় শহরের কেন্দ্র থেকে উপকণ্ঠে সরিয়ে দিতে হবে৷ শিল্পকলার মাধ্যমে অন্যান্য আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হবে৷ এই ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান নিয়ে কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা এবং বেসরকারি, একক ব্যক্তিরা৷ ক্লাউডিয়া গ্র্যুনব্যার্গ-এর ভাষ্যে, ‘‘পর্যটন বিভাগ সংশ্লিষ্ট, প্রশাসন সংশ্লিষ্ট, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট৷ বিভিন্ন বড় বড় প্রাসাদের মালিকরাও সংশ্লিষ্ট৷ সবাই মিলে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন, কীভাবে এই শহরটাকে প্রধানত তার বাসিন্দাদের জন্য ধরে রাখা যায়, বেঁচে থাকার উপযোগী করে রাখা যায়৷ বিনিয়োগের অর্থ আসবে বিজ্ঞাপন থেকে – আর পর্যটন থেকে৷''

বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হওয়ার কারণে ভেনিসকে তার ঐতিহাসিক সম্পদ রক্ষা করতে হবে৷ কেননা এই ‘ভাসমান' শহরের সৌন্দর্য আর মৌলিকতাকে বাঁচাতে গেলে সকলকেই সক্রিয় হতে হবে – শুধু পর্যটকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ