ভেনেজুয়েলার ভ্যালেন্সিয়া শহরের একটি জেলখানার বন্দিরা পালানোর চেষ্টা করার সময় আগুন লেগে যায়৷ এ পর্যন্ত ৬৮ জন মারা গেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে সে দেশের জেলগুলিতে বন্দির সংখ্যা ও পরিবেশ নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
স্থানটি দৃশ্যত কারাবোবো রাজ্যের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স৷ ঘটনার তদন্তের জন্য চারজন কৌঁসুলি নিয়োগের কথা বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ সরকারি কৌঁসুলি তারেক উইলিয়াম সাব৷ নিহতদের জন্য সরকারিভাবে শোক পালনের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারের এক কর্মকর্তা৷
ভেনেজুয়েলার জেলগুলিতে বন্দিদের নোংরা ও বিপজ্জনক পরিবেশে রাখা হয় বলে বন্দিদের আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ৷ স্থান অনুপাতে মাত্রাধিক বন্দি, সেই সঙ্গে অঢেল মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র– এসব সমস্যার কোনোটাই অজ্ঞাত নয়৷
আগুন লাগার পর বন্দিদের আত্মীয়স্বজন অকুস্থলে ছুটে যান৷ পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাঁধে৷ রাইফেলধারী, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিহিত ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সদস্যরা উত্তেজিত জনতাকে কর্ডন করে রাখে৷
আলোচিত কয়েকটি জেল পলায়নের কথা
জেলে থাকতে কে চায় বলুন? তাই সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে থাকেন অনেক কয়েদি৷ সবসময় যে সফল হন তা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়বার
২০১৫ সালের জুলাই মাসে আবার জেল থেকে পালিয়েছেন মেক্সিকোর মাদক সম্রাট গুসমান৷ গত ১৪ বছরে দ্বিতীয়বার এই কাণ্ড করলেন তিনি৷ এবার জেলখানায় নিজের সেলের গোসলখানার নীচে টানেল তৈরি করে পালিয়েছেন তিনি৷ তাকে কিন্তু মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট আলতিপ্লানো কারাগারে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/PGR/Attorney General's Office
ভাল চেষ্টা, কিন্তু..
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন তিনি কীভাবে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি৷ ব্যাগের মধ্যে থাকা মেক্সিকোর এই আসামির নাম হুয়ান রামিরেস তিহেরিনা৷ অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তার সাজা হয়েছিল৷ ২০১১ সালে তার স্ত্রী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় এই ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন৷ পরে স্বামীকে ব্যাগে করে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sspqr
বন্দুক আর ছুরি দিয়ে
ইউরোপের সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তাবিশিষ্ট জেলখানাগুলোর মধ্যে একটি আয়ারল্যান্ডের দ্য মেজ৷ ১৯৮৩ সালে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের স্বপ্ন দেখা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির ৩৮ সদস্য৷ গোপনে সংগ্রহ করা বন্দুক আর ছুরি দিয়ে তারা জেলের নিরাপত্তা কর্মীদের পরাস্ত করে পালিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Mcerlane
ব্যাংক ডাকাতের পালানো
১৯৬২ সালে সান ফ্রান্সিসকো বে-র জেল থেকে পালিয়েছিলেন তিন ব্যাংক ডাকাত৷ ধারালো চামচ আর ড্রিল দিয়ে তারা নিজেদের সেলে গর্ত খুঁড়ে পালিয়ে যান৷ নিরাপত্তা কর্মীদের বোকা বানাতে তারা তাদের বিছানায় নকল মাথা বসিয়ে রেখেছিলেন!
ছবি: imago/Kai Koehler
হেলিকপ্টারে করে পলায়ন
মনে হবে যেন কোনো হলিউড ব্লকবাস্টার মুভির কাহিনি৷ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি পাসকাল পায়ে ফ্রান্সের একটি গ্রামের কারাগার থেকে অপহরণ করা হেলিকপ্টারে করে একবার নয়, দুবার পালিয়ে যান৷ প্রথমবার ২০০১ সালে, পরের বার ২০০৭ সালে৷ শুধু তাই নয়, জেলখানায় নিজের সঙ্গে থাকা তিন কয়েদিকেও একবার হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Horvat
ওজন কমিয়ে পলায়ন!
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নারী খুন করে আলোড়ন তুলেছিলেন থিওডোর রবার্ট বান্ডি৷ প্রথমবার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পর দ্বিতীয়বার কলোরাডোর একটি জেল থেকে পালানোর জন্য নিজের ওজন ১৩.৫ কেজি কমিয়েছিলেন তিনি! সেলের উপর দেয়ালে লাইট বসানোর জন্য তৈরি করা গর্তের মধ্যে নিজের দেহ ঢোকাতে এই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি৷ সফলও হয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য আবারও ধরা পড়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
ইস্টারের ডিমের জন্য!
১৯৮১ সালে সুইজারল্যান্ডের কয়েদি ভাল্টার স্টুয়র্ম করাত দিয়ে নিজের সেলের জানালা কেটে নীচে নেমে তারপর মই দিয়ে কারাগারের সীমানা পেরিয়ে যান৷ পালানোর আগে তিনি তার সেলে একটি নোট লিখে যান৷ তাতে লিখা ছিল, ‘ইস্টারের ডিম নিতে যাচ্ছি!’
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
‘আ উইন্ডো টু ফ্রিডম’ এনজিও-র বিবরণ অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে আটক বন্দিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ত্রাণকর্মীদের জেলের দেয়াল ভেঙে ঢুকতে হয়৷ এনজিওটির অভিযোগ, বড় জেলগুলির মতো ছোট জেলগুলিতেও বন্দির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে, কেননা, বন্দিদের মুক্তিদান অথবা বিচারপ্রক্রিয়ার আগে অনেকদিন ধরে তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখা হচ্ছে৷ দৃশ্যত এইসব জেল বা ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ এমন সব করিডর ও কুঠুরি আছে, যেখানে পুলিশ প্রহরীরা পা দিতে পর্যন্ত ভয় পান, যার একটি কারণ হলো, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রহরীদের কল্যাণে বন্দিদের কাছে অস্ত্রশস্ত্রের কোনো অভাব নেই৷
বন্দিরা নিজেই আগুন লাগায়
সরকারি কৌঁসুলির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্দিরা নিজেই আগুন লাগায়৷
‘উনা ভেন্তানা আ লা লিবার্তাদ্’ বা ‘আ উইন্ডে টু ফ্রিডম’ এনজিও-র বিবরণ অনুযায়ী, বন্দিরা এক প্রহরীর আগ্নেয়াস্ত্র চুরি করার পর সেলের বিছানাপত্রে আগুন ধরায় – ফলে কিছু বন্দি পুড়ে মারা যায় ও বেশ কিছু বন্দি ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারায়৷ নিহতদের মধ্যে দৃশ্যত দু'জন মহিলা আছেন, যারা সম্ভবত কারো সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷
অগ্নিকাণ্ডের পর আত্মীয়-স্বজনেরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাঁদের নিরস্ত করে৷ আইন অনুযায়ী, এ ধরনের জেলখানায় বন্দিদের ৪৮ ঘণ্টার বেশি রাখার নিয়ম নেই৷
১৯৯৪ সালে পশ্চিম ভেনেজুয়েলার জুলিয়া রাজ্যের একটি কারাগারে আগুন লেগে ১০০ জনের বেশি বন্দি প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ সহিংসতাও ভেনেজুয়েলার জেলে নিত্যনৈমিত্তিক৷ ২০১৭ সালে সহিংসতা, অপুষ্টি বা যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৮ জন বন্দি দেশের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘স্বাধীনতার অলিন্দ’ এনজিও-টির দাবি৷ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণের আমাজোনাস রাজ্যের একটি জেলখানায় দাঙ্গা বেঁধে গেলে ১৭ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হন৷ সে-বছরের এপ্রিল মাসে পুবের বার্সেলোনা শহরের একটি জেলে বন্দিদের দু'টি গ্রুপের মধ্যে সংঘাতে ১২ জন নিহত ও ১১ জন আহত হন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
কারাগারের জীবন এমন ভয়ংকর!
ফিলিপাইন্সের কেসন শহরের কারাগার, যেটির অবস্থান রাজধানী ম্যানিলার খুব কাছে৷ সেখানকার বন্দিদের জীবনযাপনের ভয়াবহ চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
খোলা জায়গায় থাকা
গারদে যাদের জায়গা হয় না, তাদের খোলা জায়গায় রাত কাটাতে হয়, যেখানে কোনো ছাদ নেই৷ এখন ফিলিপাইন্সে বর্ষাকাল৷ প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, আর এ সময় এমন খোলা জায়গায় রাত কাটানো কতটা কষ্টকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
গারদে কয়েক ধাপ
একটি গারদে অনেকগুলো হ্যামক ঝোলানো আছে৷ একটি হ্যামকেও যদি জায়গা পাওয়া যায়, তাহলে তার ভাগ্য ভালো৷ ৬০ বছর আগে কারাগারটি নির্মিত হয়েছে, যেখানে থাকতে পারে ৮০০ বন্দি৷ অথচ বর্তমানে সেখানে আছে ৩,৮০০ বন্দি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
শান্তিতে শ্বাস নেয়ার জায়গার অভাব
কারাগারের প্রতিটি ইঞ্চি পরিপূর্ণ-এক ফোটাও জায়গা যে নেই ছবি দেখলেই তা বোঝা যায়৷ বন্দিদের বেশিরভাগই পাতলা কাপড়ের উপর বা কেবল খালি মেঝেতে ঘুমিয়ে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
স্বাস্থ্যের দিকে নজর
ব্যায়ামাগারে এক বন্দি শরীর চর্চা করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কঠিন নিয়ম
পেছনের সাইনবোর্ডে বন্দিদের কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে কারাগারের নিয়ম সম্পর্কে৷ এখানে কয়েকজন বন্দিকে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া পড়া অবস্থায়, যারা বিচারের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
পরিচ্ছন্নতা কাজ
অন্যরা যখন এমনি বসে সময় নষ্ট করছে, তখন একজন বন্দি কারাগারের টয়লেট পরিষ্কার করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কাপড় ধোয়া এবং গোসল
কখনো কখনো বন্দিরা নিজেদের পরিষ্কার করার এবং কাপড় ধোয়ার সুযোগ পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
রাতের বন্দিশালা
সন্ধ্যায় কারাগারের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক নিরাপত্তারক্ষী, যেখানে কয়েদিরা আর একটি দুঃসহ রাত পার করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
ভয়াবহ পরিস্থিতি
কারাগারের এই অমানবিক পরিস্থিতির জন্য নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডুতের্তেকে দায়ী করছেন অনেকে৷ মাদকের বিরুদ্ধে তার প্রচারণা এতটাই কড়া যে, কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হয় না৷ তিনি মাদকাসক্তদের মেরে ফেলার জন্য মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল৷ এ পর্যন্ত ৬ লাখ মাদক পাচারকারী ও মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷