ভেনেজুয়েলায় এপ্রিল মাসের শুরু থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে৷ আন্দোলন প্রশমনে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় মাঝরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দু'জন বিরোধী নেতাকে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে যান বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তার হওয়া দুই নেতা হলেন লেওপোল্ডো লোপেজ ও রাজধানী কারাকাসের মেয়র অ্যান্টোনিও লেডেজমা৷ তাঁরা দেশটির শীর্ষ বিরোধী নেতা এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কঠোর সমালোচক বলে পরিচিত৷ সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলেন লোপেজ ও লেডেজমা৷
লোপেজের স্ত্রী লিলিয়ান টিনটোরি তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও টুইটারে প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘আমার বাসা থেকে লেওপোল্ডোকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত৷ আমরা মাথা নোয়াবো না৷’’
এদিকে, দেশটির বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সাংসদ গ্যাবি আরেলানো কারাকাসের মেয়র লেডেজমাকে গ্রেপ্তারের ভিডিও টুইট করেছেন৷ সেই সময় লেডেজমাকে ঘুমের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে৷
এই দুই নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিরোধী সাংসদ ফ্রেডি গুয়েভারা বলছেন, ‘‘আমাদের ভয় দেখাতে এবং আমাদের মনোবল ভেঙে দিতে এই গ্রেপ্তার৷’’
উল্লেখ্য, সরকারবিরোধী আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া শত শত মানুষ আহত ও আটক হয়েছেন৷
আন্দোলনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো৷
তবে দেশটিতে যে চরম খাদ্য ও ওষুধের সংকট চলছে তার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি৷ দেশটিতে অপরাধের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে চলেছে৷
জেডএইচ/ডিজি (ইএফই, এএফপি, রয়টার্স)
আন্দোলন শুরুর সময়কার ঘটনাবলী নিয়ে ২০ এপ্রিলের এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন...
ভেনেজুয়েলায় সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে
একাধিক প্রতিবাদকারীর মৃত্যর পরও থেমে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই৷ বরং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে আরো কড়া আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধীরা৷ তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ নিয়ে দেখুন বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
বুধবার দুই প্রতিবাদকারীর মৃত্যু
ভেনেজুয়েলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বুধবার গুলিতে নিহত হন এক ১৭ বছর বয়সি তরুণ এবং ২৩ বছর বয়সি নারী প্রতিবাদকারী৷ কারাকাসের বাইরে এক সৈনিকের মৃত্যু ঘটেছে বলেও জানিয়েছে গণমাধ্যম৷ সবমিলিয়ে সেদেশে সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা অন্তত আটজন৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
খাদ্য, নির্বাচনের দাবি
খাদ্য স্বল্পতা এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামা কয়েকহাজার মানুষকে শক্তহাতে প্রতিরোধ করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরো বিশৃঙ্খল করে তুলছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রতিবাদকারীরাও অবশ্য পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়েছে৷ কারাকাস এবং অন্যান্য শহরেও সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
লুটপাট
এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে রাতের বেলা কারাকাসের পশ্চিমে বেকারি, সুপারমার্কেট এবং খাদ্য জমা রাখার সেন্টারে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে৷ প্রতিবাদকারীরা দাবি করেছেন যে মাদুরো ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/F. Liano
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রাণহানির পরও মোটেই দমে যাননি প্রতিবাদকারীরা৷ বরং বৃহস্পতিবার আরো বড় পরিসরে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তাঁরা৷ লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা৷ সেদেশের ঊধ্বর্তন বিরোধী নেতা হেনরিক কাপরিল্স বুধবার রাতে বলেন, ‘‘আজ আমাদের মতো কয়েক লাখ লোক রাজপথে ছিল৷ কাল আমাদের মতো আরো অনেকের বের হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/M. Bello
মাদুরোর উপর চাপ
বলাবাহুল্য, ২০১৪ সাল ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মাদুরোর উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে ভেনেজুয়েলার তেলের দাম কমে যাওয়ায় সেদেশে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে৷ সম্প্রতি আবার নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় আরো সমালোচনার মুখে পড়েন মাদুরো৷
ছবি: REUTERS
জরিপে নেতিবাচক ফল
এদিকে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি দশজন ভেনেজুয়েলানের মধ্যে সাতজনই মাদুরোর উপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন৷ অথচ প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর ক্ষমতায় থাকার কথা ২০১৯ সাল অবধি৷
ছবি: Reuters/C.Veron
সমর্থকরাও মাঠে
বিরোধীদের পাশাপাশি মাদুরোর সমর্থকরাও তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে৷ আর তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক, সেদেশের সামরিক বাহিনীও মাদুরোর প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছে৷ যদিও বিরোধী দল বর্তমান পরিস্থিতির অবসানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে৷