দেখতে আর দশটা ভেন্ডিং মেশিনের মতোই, তবে ভ্যাঙ্কুভারে নতুন বসানো এসব মেশিনে পয়সা ফেললে চকলেট, চিপসের বদলে বেরিয়ে আসে গাঁজার পোটলা৷
বিজ্ঞাপন
ক্যানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরের অলিগলিতে সব সময়ই গাঁজা বিক্রি হয়েছে, তবে তা নিষিদ্ধ মাদক হিসাবে৷ অন্য সব শহরের মতোই এই নিষিদ্ধ জগতের নিয়ন্ত্রণ থাকতো কোনো না কোনো ‘গ্যাং' এর হাতে৷ সেই কারবারের জমাখরচের হিসাবও কখনো অর্থনীতির খাতায় উঠতো না৷
চিকিৎসার জন্য গাঁজার ব্যবহার ‘বৈধতা' পাওয়ার পর এই ‘অর্থনীতি' দিনকে দিন চাঙ্গা হচ্ছে৷ ভ্যাঙ্কুভার শহরে গত কিছুদিনে প্রায় চারশ ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘মেডিকেল মারিজুয়ানা ডিসপেনসারি'৷
এসব মেশিনে চার ক্যানাডিয়ান ডলার ফেললে বেরিয়ে আসছে একটি গাঁজাভর্তি প্লাস্টিক বল, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কটন ক্যান্ডি' বা হাওয়াই মিঠাই৷ অবশ্য আরেকটু ভাল মানের ‘পিঙ্ক কুশ' চাইলে দিতে হবে ছয় ডলারের কয়েন৷
আফগানিস্তানে বাড়ছে আফিম চাষ
আফগান চাষীরা আবারো বেশি করে ঝুঁকছেন আফিম চাষের দিকে৷ এর মধ্যেই উৎপাদনের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: AP
বিশ্ব নেতা
আফিম চাষের দিক থেকে বিশ্বের কোনো দেশই আফগানিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবে না – তাই এক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে ‘বিশ্ব নেতা’ বলা যেতে পারে৷ ২০১৩ সালে দেশটিতে ২ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পপি ফুলের চাষ হয়েছে৷ এই পপি ফুলের বীজ থেকেই তৈরি হয় আফিম এবং হেরোইন৷ বিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ চেতনানাশক মাদক উৎপাদন হয় এখানে৷
ছবি: dapd
বৃহৎ জমি, ব্যাপক উৎপাদন
২০১৩ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বলা হয় যে, ২০১৩ সালে এর আগের বছর, মানে ২০১২ সালের তুলনায় আফিমের উৎপাদন ৫০ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেনা প্রত্যাহার কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
এই হারে আফিমের উৎপাদন বাড়ায় আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে জাতিসংঘকে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে তা পোষাতে আফিমের উৎপাদন আরো বাড়াতে বাধ্য হবেন চাষীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য
জাতিসংঘের অনুমান, ২০১৩ সালে আফগানিস্তানে যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার মূল্য অন্ততপক্ষে ৯৫ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
অর্থের মোহ
স্বল্প উৎপাদনে বিপুল লাভের কারণে পপি উৎপাদনে চাষীদের লোভ বাড়ছে৷ এক কেজি আফিম আফগানিস্তানে বিক্রি হয় ১৫০ মার্কিন ডলারে৷ ফলে এটা তাঁদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
হেলমন্দ – সমস্যাগ্রস্ত প্রদেশ
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে গত বছর যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার অর্ধেক উৎপাদন হয়েছে দেশটির হেলমন্দ প্রদেশে৷ এই প্রদেশটি জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বৃথা লড়াই
মাদকবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০১৩ সালেই দু’দেশের মধ্যে ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি সই হয়েছে৷ আফগান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ২ লাখ পরিবার আফিম চাষের উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: AP
মাদক বাণিজ্য তালেবানের জন্য লাভজনক
আফগানিস্তানের এই মাদক বাণিজ্য থেকে একটা বড় লাভের অংশ যায় তালেবানের হাতে৷ কাবুল সরকার এবং আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থের জন্য আফিম চাষীরা বরাবরই তাদের লাভের একটা অংশ তালেবান জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়৷
ছবি: AP
মাদকাসক্ত শিশু
ব্যাপক উৎপাদনের সাথে ব্যাপক আসক্তির ব্যাপারটাও জড়িত৷ আফগানিস্তানে কেবল যে মাদক উৎপাদন হচ্ছে তাই না, স্থানীয়রা এই মাদক বেচা-কেনাও করে৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো দেশে ১৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত এবং এদের মধ্যে ৩ লাখই নাকি শিশু৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা চুক ভ্যারাবিয়ফ সরকারের অনুমোদন নিয়ে ‘ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পেইন সোসাইটি' নামে এরকম একটি ‘পট স্টোর' চালাচ্ছেন৷ তিনি জানান, রেফ্রিজারেটর আকৃতির এক একটি মেশিনে বিভিন্ন দামের এবং বিভিন্ন ধরনের গাঁজা পাওয়া যায়৷ স্বাস্থ্যসম্মত ও মান ঠিক রাখতে সেগুলো রাখা থাকে মুখবন্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগে৷
এ সোসাইটি থেকে গাঁজা কিনতে হলে বয়স হতে হবে ১৯ বছর বা তার বেশি৷ সেই সঙ্গে দেখাতে হবে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র৷ কেনার পর সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে, আবার চাইলে সেখানে বসেও সেবন করা যাবে৷
সোসাইটির পরিচালক ভ্যারাবিয়ফ জানান, শ্বাসকষ্ট আছে বলে তিনি নিজে কখনো গাঁজা সেবন করেন না৷ তবে ব্যথার উপশম হয় বলে চিকিৎসার জন্য গাঁজার ব্যবহার তিনি সমর্থন করেন৷
ক্যানাডা সরকার ১৯৯৯ সালে চিকিৎসার জন্য গাঁজার ব্যবহারকে বৈধতা দিলেও এর উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্ক ও আইনি লড়াই চলছে৷ আদালতের সাম্প্রতিক এক রায়ের পর ভ্যাঙ্কুভারে ‘মেডিকেল মারিজুয়ানা ডিসপেনসারি' চালু হয়েছে, যদিও ক্যানাডার অন্যান্য শহর এতোটা ‘উদার' নয়৷
আগের আইনে ক্যানাডায় মোট ৩০ হাজার বাড়িতে গাঁজা চাষের অনুমতি ছিল৷ তবে সরকার ১ এপ্রিল থেকে যে নতুন নিয়ম চালু করেছে তাতে এর উৎপাদন হবে অনেক বেশি বাণিজ্যিক, বিপণনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ীর হাতে৷
আইন অনুযায়ী, এ নিয়মের বাইরে গিয়ে গাঁজা উৎপাদন বা বিক্রি করলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ তবে ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ হেরোইন, কোকেনের অবৈধ কারবার বন্ধে যতটা তৎপর, গাঁজার ক্ষেত্রে ততটা নয়৷
গাঁজাকে পুরোপুরি বৈধ করে দেয়ার জন্য ক্যানাডীয় পার্লামেন্টে দুই দফা বিল তোলারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যদিও তাতে আইনপ্রণেতাদের সাড়া পাওয়া যায়নি৷