বাংলাদেশ ও ভারতসহ সার্কের চারটি সদস্যরাষ্ট্র নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সার্ক-এর চেয়ার নেপাল অবশ্য চাইছে ভেন্যু পরিবর্তন করে হলেও শেষ পর্যন্ত শীর্ষ সম্মেলন করতে৷
বিজ্ঞাপন
‘সাউথ এশিয়ান অ্যাসেসিয়েশন ফর রিজিওনাল কর্পোরেশন' বা সার্ক-এর চার্টার অনুযায়ী, কোনো একটি সদস্যরাষ্ট্রের যোগ না দেয়াই সংগঠনটির শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ৷ কিন্তু মঙ্গলবার থেকেই এক এক করে সার্ক-এর চার-চারটি সদস্য দেশ এবারের সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়৷ তাই ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার আদৌ আর কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, সেটাই এখন প্রশ্ন৷
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন৷ তিনি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘একটি দেশ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অব্যাহতভাবে হস্তক্ষেপ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ৷ আমরা সার্ক সচিবালয়কে জানিয়েছি যে, এ ধরনের পরিবেশ সম্মেলনের উপযোগী নয়৷ নতুন পরিবেশে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হলে বাংলাদেশ এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে৷''
আশফাকুর রহমান
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘‘আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া ও পরবর্তীতে তাদের ফাঁসি কার্যকরের প্রশ্নে কখনো আপোস করিনি, করবোও না৷''
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে৷ আমরা এখনও দু'দেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা করছি৷''
তবে শাহরিয়ার আলমের কথায়, ‘‘সার্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন আছে৷ অন্য কোনো রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত৷''
শুধু বাংলাদেশ নয়, মঙ্গলবার ভারত, আফগানিস্তান এবং ভুটানও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার কথা জানায়৷ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বিকাশ স্বরূপ মঙ্গলবার একটি টুইটার-বার্তায় বলেন, ‘‘ভারতে আন্তঃসীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে লাগাতার একটি সদস্যদেশের হস্তক্ষেপের ফলে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা ১৯তম সার্ক সম্মেলন করার জন্য সহায়ক নয়৷''
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘‘আফগানিস্তানে আরোপিত সন্ত্রাসবাদের কারণে সহিংসতা ও লড়াইয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে৷ প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং কমান্ডার ইন চিফকে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে৷ এ কারণেই তাঁরা সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না৷''
আর ভুটান জানিয়েছে, ‘‘আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাওয়ার কারণে সার্ক সম্মেলন সফলভাবে করার মতো পরিবেশ রয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে শঙ্কা থাকার কারণে এবারের সম্মেলন বর্জন করা হচ্ছে৷''
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৮ই সেপেটম্বর ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা এবং ১৮ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার জের ধরেই সার্ক সম্মেলন নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ এছাড়া বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ শুরু থেকেই মেনে নেয়নি৷
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারো এই প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে৷ কি চায় কাশ্মীরের জনগণ? আর ভারত সরকার কি সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে? কাশ্মীরের বর্তমান সংকট নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Mustafa
সংঘর্ষের সূত্রপাত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সংঘর্ষে স্থানীয় হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে৷ বুরহান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা সড়কে নেমে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা গুলি চলে তাদের ওপর৷ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪০ এরও বেশি নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
কারফিউয়ে জনজীবন অচল
কাশ্মীরি নেতাদের বনধের ডাকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না প্রতিবাদকারীদের৷ অন্যদিকে, খাবার ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট এবং ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
আরো সেনা মোতায়েন
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বাড়তি ৮শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ
সাম্প্রতিক সহিংসতার নিহত ৪৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ৷ তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে৷ আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে শতাধিক মানুষ
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কারফিউয়ের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রক্তের অভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রায় শতাধিক মানুষের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা৷ দ্রুত চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷
ছবি: Reuters/D.Ismail
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করায় দু’পক্ষের সম্পর্ক আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারত সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে৷ ইসলামাবাদে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Information Bureau
চাপে মোদী সরকার
কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সরকারের একাংশের আশঙ্কা৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়েও৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে৷ পাঠানকোট হামলার পর পরিস্থিতি বদলে যায়৷ আর কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার৷
ছবি: DW/J. Akhtar
কাশ্মীর কার ভূখণ্ড?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে৷ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ওই অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই রাষ্ট্র৷ এই সময়ের মাঝে দুটি দেশই দুইবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
যে কারণে সহিংসতা
মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাশ্মীরের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়৷ এরপর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Tauseef
9 ছবি1 | 9
এরপরেও সার্ক-এর বর্তমান চেয়ার নেপাল এবং ১৯তম সম্মেলনের ভেন্যু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন স্থগিত করার কোনো ঘোষণা আসেনি৷ ভারত ও নেপালের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সার্ক-এর বর্তমান চেয়ার নেপাল চাইছে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ভেন্যু পরিবর্তন করে শীর্ষ সম্মেলন করতে৷
এ পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক আশফাকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্ক-এর নিয়ম অনুযায়ী কোনো একটি সদস্যরাষ্ট্র যদি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয় তাহলে সম্মেলন হয় না৷ এখানে সবকিছু হয় সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তে৷ আর বাংলাদেশসহ চারটি রাষ্ট্র যেহেতু সম্মেলনে যোগ দেবে না বলেছে, তাই প্রাথমিকভাবে বলা যায় সম্মেলন হচ্ছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন দু'টি পথ খোলা আছে৷ ‘হোস্ট কান্ট্রি' পাকিস্তান সম্মেলন স্থগিত করে পরে অথবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এনে সম্মেলন করতে পারে৷ অথবা ভেন্যু পরিবর্তন করা যেতে পারে৷ তবে সেটা খুব সহজ বলে মনে হয় না৷''
এই কূটনীতিক বলেন, ‘‘পাকিস্তান কূটনৈতিক পথে এগোয়নি৷ তারা মিলিটারি শক্তি দিয়ে সমাধান চায়৷ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বার বার হস্তক্ষেপ করেছে৷ ভারতের সঙ্গেও তারা সঠিক আচরণ করেনি, যার প্রভাব এখন সার্ক-এর ওপরে পড়েছে৷''
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসের ৯-১০ তারিখে ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল৷
অপরূপ কাশ্মীরের আসল রূপ
কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য নিয়ে অনেক কবিতা, বহু গান রচিত হয়েছে৷ আমাদের রবীন্দ্রনাথও কাশ্মীরের ঝিলম নদী নিয়ে কবিতা লিখেছেন৷ অপরূপ সেই কাশ্মীর নিয়েই দেখুন ছবিঘর৷
ছবি: M.Davari
সব ধর্মের অবস্থান
নানা সংস্কৃতি আর ভাষার মানুষের বসবাস কাশ্মীরে৷ আছে নানা ধর্মের মানুষও৷ কাশ্মীক উপত্যকার অধিকাংশ মানুষ মুসলমান৷ হিন্দুদের বাস জম্মু এলাকায়৷ আর লাদাখে আছেন বৌদ্ধরা৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid
জাফরান
কাশ্মীরের আরেকটি বিখ্যাত জিনিস জাফরান৷ ইরান আর স্পেনের পর ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান রপ্তানিকারক৷
ছবি: imago/Xinhua
‘পুবের সুইজারল্যান্ড’
সুন্দর সব ফুলের বাগান আর বরফে ঢাকা সাদা পাহাড়চূড়ার দেখা পাওয়া যায় কাশ্মীরে৷ তাই অনেকে কাশ্মীরকে পুবের সুইজারল্যান্ড বলে ডাকেন৷ ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ১১ লক্ষ পর্যটক গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বরফ সাদা কাশ্মীর
শীত এলে পুরো কাশ্মীরের রঙ সাদা হয়ে যায়৷ তখন শীতকালীন খেলাধুলার জন্য কাশ্মীর উপযুক্ত হয়ে ওঠে৷ কিন্তু অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে সেটা সম্ভব হয় না৷
ছবি: UNI
নদী
কাশ্মীরের হিমালয় অংশ থেকে ঐ অঞ্চলের প্রায় ২০টি নদী পানি পেয়ে থাকে৷ নদীগুলোর মধ্যে সিন্ধু, চেনাব আর ঝিলম সবচেয়ে বড়৷ এছাড়াও রয়েছে নীলম, রবি, দোদা ইত্যদি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নদী৷ বেশিরভাগ নদীই ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত হয়েছে৷
ছবি: UNI
কাঠ
জাফরানের মতো কাশ্মীরের কাঠও বেশ বিখ্যাত৷ ভালো ক্রিকেট ব্যাটের জন্য কাশ্মীরের কাঠের যেন বিকল্প নেই৷ এই কাঠ দিয়ে নৌকাও তৈরি হয়৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto/Y. Nazir
সুফিবাদ
ষোড়শ শতকে কাশ্মীরে সুফিবাদের আগমন ঘটেছিল৷ সেই থেকে সেখানকার মানুষ সুফিবাদের চর্চাকারীদের পছন্দ করেন৷
ছবি: AP
মুভিতে কাশ্মীর
গত শতকের আশির দশকে বলিউডের ছবি নির্মাতাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘লোকেশন’ ছিল কাশ্মীর৷ সেই সময়টা ছিল কাশ্মীরের জন্য স্বর্ণযুগ৷ কিন্তু এখন সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাতের ঘটনা ঘটছে৷ ফলে নির্মাতারাও সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ বর্তমানে সারা বছরে মাত্র এক থেকে দু’টি ছবির শ্যুটিং হয় কাশ্মীরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘাত কবে থামবে?
১৯৪৮ সাল থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে৷ অদূর ভবিষ্যতে সেটার সমাধান হবে কিনা তার কোনো উত্তর কারও জানা নেই৷
ছবি: dapd
9 ছবি1 | 9
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
দেবারতি গুহ
বন্ধু, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন কি শেষ পর্যন্ত হবে? আপনার কি মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷