1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটের দিনে সহিংসতার আশঙ্কা, বিশ্লেষকদের ভিন্ন কথা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের দিন ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ওই দিন ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কার কথাও উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে৷ বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে ৷

Bangladesch Parlamentswahlen
ছবি: DW/M. Mamun

সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সবাই প্রত্যাশা করছেন, ভোটের দিন যেন পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে, উৎসবমুখর হয়৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোটের সময় সহিংসতা নিয়ে সব সময়ই উদ্বেগ থাকে৷ তবে আমরা যদি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখি, তাহলে দেখব, এবার নিহতের সংখ্যা কিন্তু কম৷ আগের ৬টি নির্বাচনে ভোটের আগ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা গড়ে ৯০ জনের মতো৷ এবার কিন্তু এত মানুষের মৃত্যু হয়নি৷ আর আহতের সংখ্যা গড়ে ৩ হাজারের মতো৷ এবার হয়ত আহতের সংখ্যা ৩ হাজার হতে পারে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সহিংতা হলেও মানুষ কিন্তু ভোট কেন্দ্রে গেছে, ভোট দিয়েছে৷ ২০০৮ সালের নির্বাচন বাদে অন্য নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ আর ২০০৮ সালে ভোট পড়েছে গড়ে ৮৩ থেকে ৮৭ শতাংশ৷ এবার দেখা যাক মানুষ ভোট দিতে যায় কিনা৷'' 

‘এবার হয়ত আহতের সংখ্যা ৩ হাজার হতে পারে’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে একটি বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন৷ ওই টুইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে সন্ত্রাস, হুমকি ও বলপ্রয়োগহীন পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব৷ গুতেরেস বলেন, এই নির্বাচনে সংখ্যালঘু ও নারীসহ সকল বাংলাদেশি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অবশ্যই নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাস বোধ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই সপ্তাহের প্রচারের সময় উচ্চমাত্রার সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন৷সহিংসতায় সব রাজনৈতিক দল আক্রান্ত হয়েছে৷ সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ও নারী প্রার্থীরাও শিকার হয়েছেন৷ বিরোধী দলের প্রার্থীরা বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, সহিষ্ণু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে৷ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি৷

এই উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনের দিন যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়, সে কারণে নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে তার সবকিছুই সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে৷ আমি মনে করি, তাদের উদ্বেগ থাকতে পারে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থাই নিয়েছে৷ আর কূটনীতিকদের কাছে সহিংসতার ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকলে তা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে সহযোগিতাও তারা করতে পারেন৷ আমার বিশ্বাস, কোনো তথ্য পেলে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে৷'' 

‘বিরোধী দলের প্রার্থীরা বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকে, যার ফলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে৷ একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ এবং সমাবেশের সুযোগ থাকতে হবে৷ নির্বাচনি সংবাদ প্রকাশের সময় গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে৷ পাশাপাশি নির্বাচনে যারা পর্যবেক্ষক থাকবে, তাদের সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ভোট প্রত্যাশা করে৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে এবার ভোটের দায়িত্বে রাখা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখের বেশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে৷ শুধু ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে ৮০ হাজার ১৬৬ জন পুলিশ৷ আনসার-ভিডিপি'র নারী-পুরুষ সদস্য থাকবে ৪ লাখ ৭০ হাজার৷ গ্রাম পুলিশ থাকবে ৪০ হাজার৷ এর বাইরে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কোস্ট গার্ড মিলে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোট কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে৷ তারা ভেতরে বা ভোটগণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না৷

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে দুইদিন, ভোট গ্রহণের দিন এবং ভোট গ্রহণের পরের দিন, অর্থাৎ মোট চারদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছিল৷ এবার গতবারের তুলনায় বেশি সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখা হচ্ছে৷ তবে রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসাররা চাইলে কেবলমাত্র স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবে৷ এছাড়া ভোটের আগে-পরে ১০ দিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকছে৷ শুক্রবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনী চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে৷

‘নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থাই নিয়েছে’

This browser does not support the audio element.

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে৷ জানা গেছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ-১জন (অস্ত্রসহ), আনসার-১জন পিসি (অস্ত্রসহ), আনসার-১ জন এপিসি (অস্ত্র/ লাঠিসহ), আনসার সদস্য (নারী -৪, পুরুষ-৬) ১০ জন , গ্রাম পুলিশ-১ জনসহ মোট ১৪ জন থাকবে৷ আর মেট্রোপলিটন এলাকায় দুই জন অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে৷

এবার ভোটের দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা যা নেয়া হয়েছে, তা কি পর্যাপ্ত? এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, যা ব্যবস্থা নেওয়ার তার সবই নেওয়া হয়েছে৷ বিদেশিরা সব সময়ই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ কারণ, তাঁরা চান সবাই যেন নির্বিঘ্নে-নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন৷ দেশের জনসংখ্যাও বেড়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও বেড়েছে৷ ফলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই৷ তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ