শর্ত মেনে ঋণ গ্রহণের পক্ষে রায় পেয়েছেন আলেক্সিস সিপ্রাস৷ সংসদে বিরোধী দলেরও সমর্থন পেয়েছেন, তবে নিজের দল থেকেই এসেছে বিরোধিতা৷ সিপ্রাস বলেছেন, ‘‘অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো খুব কঠোর৷ আমাকে এ সব মানতে বাধ্য করা হয়েছে৷''
বিজ্ঞাপন
জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে বামপন্থি সিরিসা পার্টি৷ আলেক্সিস সিপ্রাস হন প্রধানমন্ত্রী৷ শুরু থেকেই সিপ্রাস এবং তাঁর সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত মেনে ঋণ নেয়ার বিপক্ষে৷ তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র কঠোর অবস্থানের কারণে গত সোমবার শর্তসাপেক্ষে ঋণ নিয়েই গ্রিসকে আরো বড় রকমের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করার অঙ্গীকার করতে হয়েছে সিপ্রাসকে৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত সংসদেরও অনুমোদন পেয়েছে৷ ৩০০ আসনের গ্রিক সংসদে শর্ত মেনে ঋণ গ্রহণের পক্ষে ভোট পড়েছে ২২৯টি, ৬৪ জন সংসদ সদস্য ভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, বাকিরা ভোট দেননি৷
এই ভোটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নিজের দলের ৪৯জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩২ জনেরই সমর্থন পাননি সিপ্রাস৷ তাঁরা বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ ৬ জন ভোটে অংশ নেননি আর একজন সংসদেই আসেননি৷ বিপক্ষে ভোট দেয়া সংসদ সদস্যরা মনে করেন, গণভোটের মাধ্যমে যে বিষয়ে জণগনের সমর্থন নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে উল্টো অবস্থান দুঃখজনক৷ সিপ্রাস অবশ্য ভোট গ্রহণের আগে সবার সমর্থন আহ্বান করে বক্তব্য রাখার সময় বলেছেন, ‘‘আমিও মনে করি যেসব অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে সেগুলো খুবই কঠোর এবং গ্রিসের অর্থনীতির জন্য এ সব কোনো সুফল বয়ে আনবে না৷ তবে এসব মেনে নিতে আমাকে বাধ্য করা হয়েছে৷''
গ্রিসের প্রতি ইইউ-র ‘ছোট’ দেশগুলোও নারাজ
পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশই আজ ঋণ মকুব করে গ্রিসকে সাহায্য করতে নারাজ৷ ব্যয় সংকোচ ও কড়া সংস্কারের সুফল ভোগ করে এ সব দেশ আজ প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের সাফল্য অর্জন করেছে৷ গ্রিসও সংস্কার চালাক – এটাই তাদের প্রত্যাশা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y. Behrakis
সাফল্যের গর্বে লিথুয়েনিয়া
লিথুয়েনিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবাউসকাইটে ইউরো এলাকার জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করেন৷ তাঁর মতে, গ্রিস শুধু কথার খেলাপ করে চলে৷ আজ কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে সেটা আগামীকাল ঠেলে দেয়৷ উল্লেখ্য, প্রায় ২৫ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল লিথুয়েনিয়া৷ কঠিন সংস্কার ও অনেক ত্যাগের পর সে দেশ আজ নিজস্ব সাফল্যে গর্বিত৷
ছবি: DW
ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি এস্টোনিয়া
সোভিয়েত আমলের বিশাল আমলাতন্ত্র ঝেড়ে ফেলে এস্টোনিয়া আজ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চমকপ্রদ সাফল্য দেখাচ্ছে৷ অথচ সরকারের কড়া সংস্কার কর্মসূচি সত্ত্বেও সে দেশের মানুষ চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেন৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট টোমাস হেন্ডরিক ইলভেস বলেন, ইউরো এলাকার বাকি ১৮টি দেশে গ্রিসকে বাঁচাতে কর বাড়ানোর প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করলে মানুষ কী রায় দেবে, একবার ভেবে দেখেছেন?
ছবি: Lingvist
বাণিজ্যে লাটভিয়ার সাফল্য
লিথুয়েনিয়ার মতো লাটভিয়াও অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেলে নিজস্ব কৌশলগত অবস্থানের ফায়দা তুলেছে৷ রাশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি৷ ২০০৪ সালে লিথুয়েনিয়ায় ইউরো চালু হয়৷ ফলে অঞ্চলের অন্যান্য অনেক দেশের মতো সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভাল্ডিস ডমব্রফস্কিস মনে করেন, গ্রিসেও সংস্কার ছাড়া কোনো সমাধানসূত্র সম্ভব নয়৷ এই সত্য মেনে না নিলে ‘গ্রেক্সিট’ অনিবার্য৷
ছবি: Reuters
স্লোভাকিয়ার গাড়ি শিল্প
শুধু সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে নয় – শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মূলধন করে স্লোভাকিয়া গাড়ি নির্মাতাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ জার্মানির ফলক্সভাগেন বা দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়া কোম্পানি সে দেশে উৎপাদন করতে এগিয়ে এসেছে৷ অপেক্ষাকৃত কম মজুরি স্লোভাকিয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে এনেছে৷ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নতি আরও তরান্বিত করেছে৷
ছবি: DW/E. Schuhmann
সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ায় দক্ষতার প্রতীক স্লোভেনিয়া
ইয়ুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেছে৷ স্লোভেনিয়া কিন্তু তার অতীতের সুনাম ও সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তিতে অতি কম সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো এলাকার সদস্য হয়ে উঠতে পেরেছে৷ সংকটের মুখে ব্যাংকিং ব্যবস্থার কড়া সংস্কার করতে পেরেছে দেশটি৷ বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে৷ ফলে আজ সে দেশের সমৃদ্ধির ভিত্তি বেশ মজবুত৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের সমৃদ্ধির অভ্যাস নেই’
পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারেক বেলকা একবার পূর্ব ইউরোপের মানুষের সহ্যশক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের এখনো সমৃদ্ধির অভ্যাস হয়নি৷’’ তাঁর মতে, এই অঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, সংকট সামনে এলে সংস্কারের মাধ্যমে তা অতিক্রম করা যায়৷ আজকের কষ্ট আগামীকাল সুফল বয়ে আনে৷
ছবি: AP
গ্রিক ট্র্যাজিডি
গ্রিস একেবারেই সংস্কারে নারাজ – এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়৷ আন্তর্জাতিক দাতাদের চাপে সে দেশ এখনো পর্যন্ত যে সংস্কার চালিয়েছে, তার ফলে সাধারণ মানুষেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু বিশাল আমলাতন্ত্র, কর আদায়ে গাফিলতি, প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয়ের মতো কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না৷ অতীতের ঋণভার ছাড়াও রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক গ্রিসের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছে৷
ছবি: Reuters/S. Rapanis
7 ছবি1 | 7
গণভোটের পরই ইইউ-র সঙ্গে গ্রিসের আলোচনার পরিবেশ ভালো করার স্বার্থের কথা বলে পদত্যাগ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস৷ বুধবার সংসদে ভোট অনুষ্ঠানের পর তিনি বলেছেন, ইইউ গ্রিসের সঙ্গে যে আচরণ করছে, ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির সঙ্গেও একই আচরণ করা হয়েছিল৷ ভারুফাকিস, বর্তমান জ্বালানি মন্ত্রী পানাগিওটিস লাফাজানিস এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী দিমিত্রিস স্ট্রাটুলিস বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ সিরিসা পার্টি এবং সিপ্রাস সরকারের ভেতরের মতপার্থক্য আরো পরিষ্কার করেছে আরেকটি পদত্যাগ৷ এবার অর্থ প্রতিমন্ত্রী নাদিয়া ভালাভানিও দায়িত্ব ছেড়ে সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন৷
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে গ্রিসের সব ব্যাংক বন্ধ৷ অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাথে সাথে জনজীবনের বিপর্যয়ও সীমা অতিক্রম করছে৷ অবস্থা কিছুটা ভালো হতে পারে বৃহস্পতিবার ফ্রাংকফুর্টে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় কেন্ত্রীয় ব্যাংক (ইসিবি)-র পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা শেষ হলে৷ এ সভায় জরুরি তহবিল ছাড়ের মাধ্যমে গ্রিসের ব্যাংকগুলো খুলতে সহায়তা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ইইউ-এর দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের বিশেষ সভাও হচ্ছে বৃহস্পতিবার৷ এ সভায় গ্রিসকে ৭ বিলিয়ন ইউরো দেয়ার সিন্ধান্ত হতে পারে৷