জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীসহ বিভিন্ন দলের নেতারা কিছুটা আগের জমানার ফিরে গেছেন৷ আগামী ২৪ সেপ্টম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বারে দ্বারে গিয়ে সম্ভাব্য ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁঁরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে৷ চ্যান্সেলর পদে আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং মার্টিন শ্যুলৎসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন প্রত্যাশ্যা হয়ত কম, তবে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই ভালোই জমবে৷ ফলে প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতা৷ আর এই প্রক্রিয়ায় যোগ হয়েছে এক পুরনো কৌশল – ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময়৷
সম্ভাব্য ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে দরজায় টোকা দেয়ার এই পন্থার এক অন্যতম সমর্থক সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দলের মায়া লাসিচ৷ গত নির্বাচনের আগে এমনটা করে ভালোই সুফল পেয়েছিলেন তিনি৷ লাসিচ বলেন, ‘‘ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ায় আমি বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলাম৷ তাঁদের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে দ্বারে দ্বারে যাওয়াটা আদর্শ উপায়৷ এভাবে আপনি মানুষ সম্পর্কে পাবলিক ইনফরমেশন স্টান্ডের চেয়ে বেশি জানতে পারবেন৷’’
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
6 ছবি1 | 6
তবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার এই কৌশল সর্বত্র কাজে নাও আসতে পারে৷ লাসিচ স্বীকার করেছেন যে, বিভিন্ন দলের গোড়া ভোটারদের এভাবে কাবু করার সম্ভব নয়৷ আর সম্প্রতি এক গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, অধিকাংশ মানুষই এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে নির্বাচনের আলাপ পছন্দ করেন না৷
কিন্তু তারপরও প্রার্থীরা এই পন্থা বেছে নিচ্ছেন কেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিমন ক্রুশিনস্কি বলেন, ‘‘অনেক ভোটার নিজেদের মনস্থির করতে একদম শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন৷ প্রার্থী দরজায় টোকা দিলে এধরনের ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়৷’’
লাসিচ বলেন, ‘‘আমরা প্রায়ই এমন মানুষের মুখোমুখি হই, যাঁরা নিশ্চিত নন এসপিডি তাঁদের অধিকার রক্ষায় আদৌ কাজ করছে কিনা নিয়ে৷ একজন প্রার্থী যিনি তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেখা করতে যান, তিনি এই নিশ্চিয়তা দিতে পারেন৷’’
বলাবাহুল্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর ব্যাপারটি জার্মানিতে কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জনপ্রিয় ছিল না৷ তবে ক্রুশিনস্কি বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে এ ধরনের প্রচারণা বাড়তি ভোট পেতে সহায়ক৷ তবে শুধু বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া নয়, অনলাইনেও ভোট চাওয়ার দিকে ঝুঁকছে রাজনৈতিক দলগুলো৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তগণতন্ত্রী দল (এফডিপি) এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে রয়েছে৷ অন্যরাও সক্রিয় অফলাইন এবং অনলাইনে৷
জেফারসন চেজ/এআই
প্রিয় পাঠক, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন...
নির্বাচনে ব্যবহার করা কিছু গান
জনপ্রিয় বলে এই গানগুলো প্রচারের কাজে ব্যবহারের সুযোগ অনেকেই ছাড়তে চান না৷ তাই নির্বাচনি প্রচারেও ব্যবহার করা হয়েছে এ সব গান৷ ফলে বিচিত্র সব কাণ্ডও ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
ইউ টু: বিউটিফুল ডে
আয়ারল্যান্ডের ব্যান্ড ইউ-টু’র কিছু গান বেশ রাজনেতিক বক্তব্যসমৃদ্ধ৷ ২০০৫ সালে ব্রিটেনের সংসদ নির্বাচনে লেবার পার্টি তাদের এমন একটি গানই ব্যবহার করেছিল৷ ‘বিউটিফুল ডে’ শিরোনামের সেই গানটি ব্যবহারের আগে অনুমতিও নেয়া হয়নি৷ ইউ-টু’ও তাতে বিশেষ দোষের কিছু দেখেনি৷ ক্ষতিপূরণের মামলাই করেনি তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
এমজিএমটি: কিডস
২০০৯ সালে ফ্রান্সের নির্বাচনে নিকোলা সার্কোজির নির্বাচনি প্রচারের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাজানো হয়েছিল এমজিএমটি ব্যান্ডের ‘কিডস’ শিরোনামের গানটি৷ অনুমতি না নিয়ে প্রচার করে পরে অবশ্য প্রতিকী ক্ষতিপূরণ হিসেবে এমজিএমটি-কে ১ দশমিক ২৫ ইউরো দিয়েছিল সার্কোজির দল৷ তারপরও ঝামেলা এড়ানো যায়নি৷ ক্ষতিপূরণ মামলা জিতে ৩০ হাজার ইউরো আদায় করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রক ব্যান্ড এমজিএমটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warzawa
রোলিং স্টোনস: অ্যানজি
রোলিং স্টোনস চাইলে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউ-কেও হয়ত মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হতো৷ ২০০৫ সালের নির্বাচনে রোলিং স্টোনসের ‘অ্যানজি’ শিরোনামের গানটি সিডিইউ সমর্থকদের মুখে মুখে ফিরেছে৷ কিন্তু রোলিং স্টোনস মামলা না করায় জার্মানির রাজনীতির ‘অ্যানজি’ আঙ্গেলা ম্যার্কেল বা তাঁর দলকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি৷
ছবি: Reuters
আন্দ্রেয়া ভানটিনি: মেনো মেল চে সিলভিও চে
২০০৮ সালে ইটালির নির্বাচনে অবশ্য জনপ্রিয় কোনো ব্যান্ড বা পপ স্টারের গান বাজানো হয়নি৷ সিলভিও বার্লুসকোনির গুণকীর্তনে বাজানো হয়েছিল ইটালির আন্দ্রেয়া ভানটিনির গান ‘মেনো মেল চে সিলভিও চে’৷ ‘মেনো মেল চে সিলভিও চে’ কথার অর্থ ‘সিলভিওর জন্য ঈশ্বর তোমাকে ধন্যবাদ৷’ সেবার নির্বাচনে জিতে ইটালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বার্লুসকোনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Dal Zennaro
আডেলে: রোলিং ইন দ্য ডিপ
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আডেলের গানের ভক্ত৷ তাই ট্রাম্পের প্রতিটি নির্বাচনি প্রচারানুষ্ঠান বা ভাষণের আগে আডেলের ‘রোলিং ইন দ্য ডিপ’ গানটি বেজেছে৷ আডেলের অনুমতি ছাড়াই বাজানো হচ্ছে গানটি৷