1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

‘ভোক্তাদের বেদনা তারা শুনতে পারবে বলে মনে হয় না'

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
১৭ জানুয়ারি ২০২৫

শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় জীবনযাত্রায় কেমন প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন৷

বাংলাদেশের একটি কাঁচাবাজারে সবজি কেনাবেচা চলছে
কর ফাঁকি বন্ধ না করে নানা পণ্য়ে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে পারেছবি: Rashed Mortuza/DW

ডয়চে ভেলে: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে শতাধিক পণ্য সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

এস এম নাজের হোসেন: অর্থবছরের মাঝে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর ঘটনা এর আগে ঘটেনি। বাজেটের সময় ভ্যাট সমন্বয় করা হয় বলে এবার মানুষ প্রস্তুতও ছিল না। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। এটি মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। কারণ, মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু খরচের পাল্লা বেড়ে গেছে। যখন খরচ বাড়বে, তখন মানুষকে কাটছাঁট করে, ধারদেনা করে চলতে হবে অথবা না খেয়ে থাকতে হবে। এসব করেই কিন্তু মানুষ ম্যানেজ করে।

মোবাইলে কথা বলা ইন্টারনেটের খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব কেমন হতে পারে?

অনেক সময় মনে হয় মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার চাল-ডালের থেকেও এখন নিত্যপ্রয়োজনীয়। এখন মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার খুবই অত্যাবশ্যকীয়। লাইফস্টাইল নয়, প্রতিটি কদমে কদমে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট ছাড়া জীবন যেখানে অনেকটাই অচল, সেখানে এই খাতে ভ্যাট বাড়ানো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। খরচ যখন বেড়ে যাবে তাকে এটি ম্যানেজ করতে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে। সরকার যখন সব সেবাকে ডিজিটাল করতে যাচ্ছে, তখন ইন্টারনেটের খরচ বাড়িয়ে দেওয়া মানে ওই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনা। এই খাতে ভ্যাট বাড়ানো অযৌক্তিক।

রেস্তোরাঁর মালিকদের আন্দোলনের মুখে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। অন্যরাও এভাবে প্রতিবাদ করলে ভ্যাট প্রত্যাহার হবে কি?

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিবাদ জোরালো ছিল। কিন্তু অন্য পণ্যের ভোক্তারা সংগঠিত নয়। তাদের জোরালোভাবে প্রতিবাদ করার মতো শক্তি-সামর্থ্য নেই। ফলে কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করি না। বিগত সরকার যেভাবে করেছিল, এই সরকারও সেই পথেই করছে। ভোক্তাদের বেদনা তারা শুনতে পারবে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না। কারণ, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু যারা চালিকাশক্তি, অর্থাৎ আমলারা আগের সরকারেরই আছেন। তারা দেখছেন যে, কাকে সুবিধা দেওয়া যায়। যার শক্তি-সামর্থ্য আছে, বড়লোক, তার জন্য সুবিধা। গরিব, প্রান্তিক আয় ও সাধারণ মানুষ তারা তো প্রতিবাদ করতে পারবে না, তাদের প্রতিবাদ সেভাবে হবেও না, ফলে তাদের প্রতিবাদগুলো সেভাবে আমলেও নেওয়া হবে না। এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে, আপনি কষ্টের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলেন। মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।

ভ্যাট বর্ধিত করায় নতুন করে কিছু কিছু ওষুধেরও দাম বাড়বে। এটা কতটুকু যৌক্তিক হলো?

১৮ কোটি মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই কোনো-না-কোনো ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এমনিতেই প্রতি মাসে ওষুধের দাম বাড়ছে। সেই জায়গায় নতুন করে ওষুধের দাম বেড়ে গেলে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসার খরচ আরেক দফা বাড়াবে। আগে থেকেই বাংলাদেশে ব্যয়বহুল চিকিৎসা-সেবাকে আরো ব্যয়বহুল করবে। একটি বড় অংশ চিকিৎসা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এগুলো মানুষের পেটে লাথি দেওয়ার মতো ঘটনা।

এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে, আপনি কষ্টের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলেন: এস এম নাজের হোসেন

This browser does not support the audio element.

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারের কাছে কোনো বিকল্প ছিল?

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক না বাড়িয়েও সরকারের হাতে বিকল্প ছিল। ১২ হাজার কোটি টাকার জন্য তারা মানুষের কষ্ট বাড়াচ্ছে। কিন্তু কর ফাঁকির উৎসগুলো বন্ধ করতে পারলে ১২ লাখ কোটি টাকা আদায় হতো। বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপ কর দিচ্ছে না। এনবিআর কর্মকর্তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করা হয়। যার কারণে সরকার রাজস্ব পায় না। এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তারা লাভবান হচ্ছেন। ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করলে বেশি মানুষ ভ্যাট-ট্যাক্স দেবে। বিশাল অঙ্কের ব্যবসায়ী এখনো ভ্যাটের বাইরে রয়েছেন।

ভ্যাট সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা সরকারি চাকরি করেন না, তাদের কী হবে?

সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ্য ভাতার সিদ্ধান্ত দ্বৈত আচরণের মতো। কারণ, একদিকে সরকার বলছে, রাজস্ব আয় কম, রাজস্ব বাড়াতে চাই। অন্যদিকে মহার্ঘ্য ভাতার মতো যেসব বিষয় চিন্তা করবে তাতে খরচ বাড়বে। এমনিতেই সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়িয়ে মানুষের ওপর দুর্ভোগ তৈরি করেছে। সরকার বাজেট অনেক বড় করে ফেলেছে। এখন মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। কারণ, বিপুলসংখ্যক প্রান্তিক আয়ের মানুষ, যারা বেকার এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যারা আছেন, তাদের জন্য কিছু না করে সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা দিলে চাকরির বাজারে আরেকটি বড় বৈষম্য হবে। মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখন অনেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে যারা সুবিধা পাচ্ছে, তাদের সুবিধা আরো বাড়াচ্ছেন, এটা তো বড় বৈষম্য তৈরি করবে।

আইএমএফের চাপে কি সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ালো?

কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে, তার মধ্যে একটি এটি হতে পারে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার চুক্তি আগের সরকার করেছে, ওই সময় ওই সরকারের টাকার খুব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এই চুক্তি পর্যালোচনা করতে পারতো। বিকল্প কি করা যায় তা বের করতে পারতো। আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য আপনি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ালেন! কিন্তু মানুষের কল্যাণের জন্যই তো এই টাকা আনছেন। পরোক্ষ কর বাড়ানোর মানেই হলো দরিদ্র মানুষের ওপর রাষ্ট্রের একটি অবিচারের অংশ। আপনি সরাসরি ট্যাক্স বাড়ান, কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করেন। অনেকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে, কিন্তু তা রাষ্ট্রের কোষাগারে যাচ্ছে না। এসব করতে পারলে সরকারকে অজনপ্রিয় কাজগুলো করতে হতো না বলেই আমি মনে করি।

অন্তর্বর্তী সরকারকে ভোটের হিসেবে করতে হচ্ছে বলেই কি এভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ালো তারা?

সরকার হয়ত সঠিক পথে নেই। সরকারের মূল কাজই হলো জনকল্যাণ। জনকল্যাণই যদি প্রথম অগ্রাধিকার হয়, সরকার অবশ্যই আগে সেই স্বার্থগুলো দেখবে। আগে অনেক পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হলেও ভোক্তা পর্যায়ে আসছে না। ফলে বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে না। এজন্য দরকার ছিল কোথায়, কী সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো তলিয়ে দেখা। কর্পোরেট ও বড় ব্যবসায়ীরা সব খেয়ে ফেলছে, ওখানে ড্রাইভ দিতে পারতো। সরকার যদি সঠিক পথে থাকে, তখন এসব বিষয় আমলে নেবে। আমরা বলে আসছি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করতে। এতে করে মানুষ কী চিন্তা করছে, কোনটাকে প্রাধান্য দিয়ে, কী করা দরকার তা বোঝা যায়। যখন আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত হবে, তখন কোনো একটা জায়গায় গ্যাপ থেকে যেতে পারে এবং এই গ্যাপটা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। আপনি বলছেন, বৈষম্য দুর করবেন, কিন্তু আপনার প্রতিটি কর্মকাণ্ড কিন্তু বৈষম্যকে উস্কে দিচ্ছে। যে ম্যানডেট নিয়ে জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, আপনারা নির্বাচিত না হলেও সাধারণ মানুষের সম্মতি ছিল এই সরকারের প্রতি। জনগণ এই সরকারকে যে সমর্থন দিয়েছিল তাতে ভাটা পড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ