1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোক্তা এবং ভারতের ক্রেতাসুরক্ষা আদালত

২৯ জুলাই ২০২২

ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ভারতে ভোক্তাদের অধিকার অনেকটাই নিরাপদ করেছে৷ তবে এখনো অনেক পথ চলার বাকি৷

Indien - Preisanstieg bei Medikamenten u. a.
ছবি: Payel Samanta/DW

বছর পাঁচ-ছয় আগের কথা৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী তখন প্রয়াত সাধন পাণ্ডে৷ মন্ত্রী মহোয়দয়ের সঙ্গে দহরম মহরম না থাকলেও সাংবাদিক হিসেবে সুসম্পর্ক ছিল৷ এক ব্যক্তিগত দরকারে পরামর্শ চাওয়ার জন্য ফোন করতে হয়েছিল তাকে৷ ওই ফোনকলের দিনকয়েক আগে একটি অনলাইন অ্যাপে একটি ইলেকট্রনিক গেজেট অর্ডার দিয়েছিলাম৷ জিনিসটি দ্রুত পৌঁছালেও ঠিকমতো কাজ করছিল না৷ অনলাইনে কেনার ফলে কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগও করে ওঠা যাচ্ছিল না৷ অগত্যা, সরাসরি ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রীরই দ্বারস্থ হওয়া গেল৷ কী করা উচিত?

মুহূর্ত অপেক্ষা না করে মন্ত্রী পরামর্শ দিলেন, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গিয়ে অভিযোগ জানাতে৷ ভরসা দিলেন, মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই অতি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্যরকম হয়নি৷ সত্যিই একমাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়৷ ইলেকট্রনিক গেজেটটি বদলে নতুন গেজেট পাঠিয়ে দেয় কোম্পানিটি৷

১৯৮৬ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আইন তৈরি হয় ভারতে৷ ২০১৯ সালে আইনটির সংশোধন হয়৷ এই আইনের বলে ভারতে মূল আদালতের কাঠামোর বাইরে তৈরি হয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত৷ ভোক্তা সেখানে গিয়ে ক্রয় করা জিনিস নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে৷ ক্রেতার অধিকার নিয়ে মামলা করতে পারে৷

প্রায় ১৪০ কোটির দেশে মূলস্রোতের আদালতে কী পরিমাণ চাপ, তা সকলেই জানেন৷ দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলার চাপ বিপুল৷ আগে ক্রেতার অধিকার সংক্রান্ত মামলার চাপও এই আদালতকেই সামলাতে হতো৷ কিন্তু ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তৈরি হওয়ার পর বিষয়টি সহজ হয়েছে৷ শুধুমাত্র ক্রেতার সমস্যা নিয়ে তৈরি হওয়া আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হয় দ্রুত৷ অভিযুক্ত আদালতের নির্দেশ না মানলে তাকে গ্রেপ্তারও করা যেতে পারে৷

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দীপাঞ্জন দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘গত কয়েক দশকে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সত্যিই খুব দ্রুত উন্নতি করেছে৷ মানুষ এই আদালতে উপকার পাচ্ছে৷ যত দিন যাচ্ছে, ক্রেতারা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হচ্ছেন৷'' দীপাঞ্জনের বক্তব্য, এই ধরনের আদালতে যাওয়ার জন্য উকিলের মর্জির উপরও নির্ভর করতে হয় না ক্রেতাদের৷ এই আদালতের নিয়ম-কানুনও সহজ৷ ভোক্তা খুব সহজে নিজে নিজেই মামলা ফাইল করতে পারেন৷

দীপাঞ্জনের সঙ্গে সহমত কলকাতা হাইকোর্টের আরেক আইনজীবী প্রসিত দেব৷ ক্রেতা সুরক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করেছেন৷ প্রসিতের বক্তব্য, ক্রেতা সুরক্ষা আদালত থেকে মানুষ যে উপকার পাচ্ছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তার মতে, ‘‘উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সমাজের একটি অংশ এই ধরনের প্রকল্পের লাভ পাচ্ছেন৷ সাধারণ মানুষ এখনো ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিষয়ে খুব বেশি ওয়াকিবহাল নয়৷ আর বাজারে তারাই সবচেয়ে বেশি ঠকেন৷'' প্রসিতের মতে, বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার, সেটা করতে পারলেই প্রকল্পটির স্বার্থকতা৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

বস্তুত, গত কয়েক দশকে একাধিক আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে৷ ভারতে সাহারার মতো চিটফান্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে সারদা, রোজভ্যালি৷ এর কয়েকটি মামলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গিয়েছিল৷ আদালত রায়ও দিয়েছিল৷ কিন্তু পরে কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে সমস্ত মামলার দায়িত্ব নির্দিষ্ট কমিশনের হাতে তুলে দেয়৷

আইনজীবীদের অনেকেরই বক্তব্য, এখনো গ্রামেগঞ্জে বিভিন্ন নামে এই ধরনের চিটফান্ড কাজ করছে৷ মানুষ সেখানে টাকা ঢালছেন, ঠকছেনও৷ কিন্তু ক্রেতা সুরক্ষা আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন না৷ তারা জানেনই না এমন আদালতের কথা৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে না তুললে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি সফল হবে না৷

ফেরা যাক সাধন পাণ্ডের কথায়৷ ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী হওয়ার পর এক আড্ডায় তিনি বলেছিলেন, মন্ত্রিসভার অনেক পদের চেয়ে এই পদটি দেখতে ছোট লাগে৷ ততটা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর নয়৷ কিন্তু কাজ করতে পারলে এই দপ্তরের মন্ত্রী সবচেয়ে বেশি মানুষের হৃদয় জয় করে ফেলতে পারেন৷ উপভোক্তার কাছাকাছি থাকতে পারা সবসময়ই ভালো৷

কথাটি যে সত্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ