1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতার উর্বরভূমি পশ্চিমবঙ্গ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২১ মে ২০১৯

ভারতে সংসদীয় নির্বাচনের ভোটপর্ব মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল, যদিও পাঞ্জাব, বিহার ও মধ্যপ্রদেশের মতো কিছু রাজ্যে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটে৷ তবে ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতা এবং ছাপ্পা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের স্থান একেবারে শীর্ষে৷

Wahlen in Indien
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

পশ্চিমবঙ্গে সাত দফা ভোটপর্বের প্রতিটি দফায় চলে ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা৷ খুন, জখম, মারপিট, পাথর-বৃষ্টি, ভাঙচুর, বোমাবাজি, ছাপ্পা ভোট, ভোটদানে বাধা, বুথ দখল কী নয়? তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে গত ১৫ই মে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড-শো চলাকালে কোলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড৷  তারপরই যথারীতি শুরু হয়, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধীদল বিজেপি ও বামপন্থি দলের দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের পালা৷ এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়৷ ভোট নিয়ে এই হিংসাত্মক আবহ অবশ্য রাজ্যে নতুন নয়৷ গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এমনটা হয়েছিল৷ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, নির্বাচন কমিশন যদি তৃণমুল কংগ্রেসের গুন্ডা-বাহিনীর বিরুদ্ধে আগে থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতো, তাহলে এইসব কাণ্ড-কারখানা অনেকাংশে এড়ানো যেতো, পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না৷

তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বুথ দখল এবং ছাপ্পাভোটের অভিযোগ রয়েছে৷ রাজ্যের তমলুক নির্বাচন কেন্দ্রের হলদিয়া বুথ দখলের অভিযোগ দায়ের করেছেন একজন মহিলা ভোটার৷ ভোট দিতে গিয়ে তিনি দেখেন আগেই তাঁর ভোট দিয়ে গেছে অন্য কেউ৷ ঐ কেন্দ্রে এই রকম অভিযোগ আরো জনা দশেক ভোটারের৷ বুথ দখল নিয়ে রীতিমতো মারপিট৷ দ্বিতীয় দফার ভোটে কোচবিহারের সিপিএম প্রার্থী আক্রান্ত হন৷  রায়গঞ্জের বর্তমান সিপিএম সাংসদ মোহাম্মদ সেলিমের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়৷ মুর্শিদাবাদের নির্বাচন কেন্দ্রে বোমাবাজিতে আহত তিনজন তৃণমূল কর্মী৷  অন্য একটি বুথে আক্রান্ত হন একজন কংগ্রেস কর্মী৷ চতুর্থ দফা ভোটে বীরভূম ও দুবরাজপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করা হলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়৷ পঞ্চম দফার ভোটে বারাকপুরে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের উপর হামলা চালায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা৷ ঐ দিনেই বনগাঁ লোকসভা আসনে শাসক ও বিরোধী দলের সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে আহত হন শাসক দলের একজন কর্মী ও একজন পুলিশ৷

৬ষ্ঠ দফার ভোটে বাঁকুড়ার জেলাশাসককে অপসারিত করে নির্বাচন কমিশন৷ অভিযোগ, তিনি সংঘর্ষ এড়াতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেননি৷ সপ্তম বা শেষ দফার ভোটেও সহিংসতার পরিস্থিতিতে হেরফের হয়নি৷ নির্বাচন প্রার্থী, নিরাপত্তা বাহিনী, এমনকি মিডিয়ার ওপরও হামলা চালানো হয়, ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়৷ সপ্তম দফার ভোটে বসিরহাটে প্রকাশ্যে অন্তত ১০০ জন ভোটারকে ভোটদানে বাধা দেয় তৃণমূল কর্মীরা৷ বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন৷ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী  নীলাঞ্জন রায়ের গাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমুল কংগ্রেস, এমনটাই অভিযোগ৷

দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গে ট্র্যাডিশন অফ ভায়োলেন্স এখনো চলছে: অমূল্য গাঙ্গুলি

This browser does not support the audio element.

 নির্বাচনকালে  পশ্চিমবঙ্গে হিংসা প্রবণতা সবথেকে বেশি কেন? প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলির কথায়, ‘‘বিজেপি এই প্রথম রাজ্যে নিজেদের জায়গা পাকা করতে মমতার দিকে এক বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে৷ তাছাড়া মমতার বড় সমস্যা হলো সিপিএমের গুন্ডা বাহিনীকে নিজের দিকে এনেছেন৷ সিপিএম লুম্পেন ব্রিগ্রেড বা গুন্ডা বাহিনীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো৷ কমিউনিস্টদের সেই শৃঙ্খলাবোধটা ছিল৷ মমতার সেই ক্ষমতা নেই৷ গত পঞ্চায়েত ভোটেও সেটা দেখা গেছে৷ সেদিক থেকে উনি একটু লাগামছাড়া৷ যেভাবে সবাইকে ধমকে, ভয় দেখিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেননি, তাতেই সেটা স্পষ্ট৷ সেটার জের এখনো চলছে৷ বিজেপিও কম যায় না৷ বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তপ্রদেশ থেকে হনুমান ব্রিগেড এনেছে৷ এইসব কারণেই মারামারি, এত তাণ্ডব৷ এ থেকে বেশি ফায়দা তুলেছে বিজেপি৷ আর মমতার ‘মুসলিম-প্রীতি' যেটাকে ভোটে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদের এটা পটভূমি ছিল৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী থেকে এন.সি চ্যাটার্জী৷ সেটা চাপা পড়ে গিয়েছিল বামপন্থিদের উত্থানে৷ কালে কালে বামপন্থিদের অস্তিত্ত্ব ধুয়ে মুছে গেছে৷ পার্টি ক্যাডাররা ছত্রভঙ্গ৷''

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে আরো বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বরাবরই সহিংসতার একটা ট্র্যাডিশন আছে৷ তেভাগা আন্দোলন থেকে আরম্ভ করে নকশাল আন্দোলন৷ দ্বিতীয়ত, বামপন্থিদের নিজেদের মধ্যেও ছিল সংঘাত৷ সিপিএম বনাম আরএসপি, সিপিএম বনাম সিপিআই, সিপিএম বনাম ফরোয়ার্ড ব্লক৷ নকশালরা আসার পর তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ৷ কাজেই সেই অর্থে পশ্চিমবঙ্গ চিরদিনই একটা সহিংস রাজ্য৷ তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে৷ একসময় বিহারেও এটা ছিল৷ এখন শান্ত হয়ে গেছে৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গে ট্র্যাডিশন অফ ভায়োলেন্স এখনো চলছে৷''

তবে এবার পাঞ্জাবেও ভোট নিয়ে সহিংসতা হয়েছে৷ রাজ্যের শাসকদল কংগ্রেস এবং বিরোধী শিরোমণি আকালি দল (স্যাড)-এর মধ্যে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়৷ তিন জন ‘স্যাড'-কর্মী আহত হন৷ কংগ্রেস ও আকালি দলের মধ্যে সংঘর্ষে সব মিলিয়ে জনা বারো আকালি সমর্থক আহত হন৷ মন্ত্রীর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়৷ উত্তরপ্রদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়৷ বিজেপি কর্মীরা জোর করে পাঁচ জন ভোটারের আঙুলে ভোট দেবার চিহ্ণ হিসেবে বিশেষ কালির দাগ লাগিয়ে দেয় এবং প্রত্যেককে পাঁচশ' টাকা করে ধরিয়ে দেয়৷ এখন ইভিএম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের নিরাপত্তা নিয়ে সব বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ