আজ থেকে ২৩ বছর আগে পরিকল্পনা করেই ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন৷ কোবরাপোস্ট নামে এক বেসরকারি সংস্থার স্টিং অপারেশনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর অযোধ্যার রামজন্মভূমি আন্দোলনের নামে ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু ধর্মান্ধ সদস্য৷ এতদিন পর্যন্ত দাবি করা হতো, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া উন্মত্ত জনতা নাকি ধ্বংসের জন্য দায়ী৷ কিন্তু কোবরাপোস্ট নামে এক বেসরকারি সংস্থার স্টিং অপারেশনে বদলে গেল ধ্বংসের নেপথ্য কাহিনিটা৷ বিস্ফোরক এই নেপথ্য কাহিনিটা কী?
রামজন্মভূমি আন্দোলনের গবেষণাধর্মী ইতিহাস রচনার নামে কোবরাপোস্টের অ্যাসোশিয়েটেড এডিটর অযোধ্যা, ফয়জাবাদ, মথুরা, লক্ষ্ণৌ, মোরাদাবাদ, মুম্বই, গোয়ালিয়র-সহ ১১টি জায়গা সফর করে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ২৩জন শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁদের কথোপকথনের গোপন রেকর্ডিং-এর ভিত্তিতে দাবি করা হয় যে, ‘অপারেশন জন্মভূমি' নামে বাবরি মসজিদ ভাঙার ছক কষা হয়েছিল অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে৷
ধ্বংসকাণ্ড যাতে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা হয়, তার জন্য সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখার ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নিয়ে তাঁদের ঐ কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে৷ ‘লক্ষণ সেনা' নামে ঐ ৩৮ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মী৷ প্রথম চেষ্টায় যদি বাবরি মসজিদ ভাঙা না যায়, তাহলে দ্বিতীয় বিকল্প হবে ডিনামাইট ব্যবহার করা৷ কথিত এই চক্রান্তের কথা জানতেন লালকৃষ্ণ আডবানি, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-সহ বিজেপির কিছু শীর্ষ নেতা৷ শুধু তাই নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও নাকি পরিকল্পনার কথা টের পেয়েছিলেন. কিন্তু ঠেকাবার কোনো কড়া পদক্ষেপ নেননি – এমনও অভিযোগ করা হয়৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
এই প্রসঙ্গে এক উর্দু সংবাদপত্রের সম্পাদক মনে করেন, বাবরি মসজিদ এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, যা ধ্বংস করা সাধারণ লোহার রড, শাবল, কোদাল, গাঁইতির দ্বারা সম্ভব নয়৷ ব্যবহার করা হয়েছিল কম শক্তির বিস্ফোরক, যার জন্য দরকার হয়েছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞের৷
বিতর্ক শুরু হয়েছে এই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের সময় নিয়ে৷ আর দিন কয়েক পরেই ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ ঠিক তার আগের সময়টাকেই বেছে নেয়া হলো কেন? সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে বিজেপি দুর্গে তোপ দাগায় স্বভাবতই বিচলিত বিজেপি শিবির৷ বিজেপির দাবি, এটা একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘স্পনসর্ড' অপারেশন৷ ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে, এমনও অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছে তারা, যারা হালে পানি পাচ্ছে না৷
নির্বাচন কমিশনকে দেয়া এক চিঠিতে বিজেপি বলেছে, নির্বাচনি প্রচার যখন নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলেছে, তখন এই সব তথ্য আবহাওয়া বিষিয়ে তুলবে৷ অবিলম্বে এর প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করা জরুরি৷ আম জনতার কাছে সাম্প্রদায়িকতা এখন আর বিজেপির নির্বাচনি ইস্যু নয়৷ নির্বাচনি ইস্যু হলো কংগ্রেসের অপশাসন৷ নাগরিক সমাজ ক্ষুব্ধ এই কারণে যে, ২৩ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডের কঙ্কাল তুলে আনা অহেতুক৷