1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটে জিতেই বিরোধী প্রার্থীদের শাসক দলে যোগদান

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ জুলাই ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনে 'বাইরন মডেল'। বিরোধী শিবিরের জয়ী প্রার্থীরা জেলায় জেলায় যোগ দিচ্ছেন শাসক দলে। গণনা কেন্দ্রেই দল বদল করে নজির গড়েছেন এক প্রার্থী।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট
ছবি: Payel Samanta

গ্রাম বাংলার নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার পরই দেখা যাচ্ছে দল বদলের হিড়িক। একেই বলা হচ্ছে শাসকদলের 'বাইরন মডেল'। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী বাইরন বিশ্বাস তিন মাসের মধ্যে জামা বদলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এই পথেই বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীরা শাসক দলে নাম লেখাচ্ছেন।

বুধবার এই যোগদান পর্বে দেখা গেল মডেলের 'প্রবক্তা' স্বয়ং বাইরনকে। বিধায়কের উপস্থিতিতে সাগরদিঘির তৃণমূল কার্যালয়ে বালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের জয়ী প্রার্থী মীরা খাতুন ও মনিগ্রামে কংগ্রেসের জয়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী সাবির শেখ ও আনারুল শেখ তৃণমূলে যোগ দেন। বাইরন তাদের হাতে পতাকা তুলে দেন।

সিপিএম প্রার্থীর 'নজির'

বাইরন তিন মাস সময় নিয়েছিলেন দল বদলাতে। এ ব্যাপারে তাকে বা অন্যান্য দলবদলকারী বড় মাপের নেতাদের টেক্কা দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের গীতা হাঁসদা।

কালনা ১ ব্লকের কাকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৯ নম্বর আসন জেতেন সিপিএমের গীতা। এই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের বাকিগুলিতে তৃণমূল জিতেছে।

গণনা কেন্দ্রেই দল বদলের কথা জানিয়ে গীতা বলেন, "আগে আমি তৃণমূলই করতাম, একটা কারণে সিপিএমের হয়ে লড়েছিলাম। এখন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছি।"

‘এটা ভোটারদের সঙ্গে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা’

This browser does not support the audio element.

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, গীতার সন্তানকে অপহরণ করে তাকে দল বদলাতে বাধ্য করেছে তৃণমূল। যদিও গীতা নিজে তা মানতে চাননি, তৃণমূল অভিযোগ খারিজ করেছে। যদিও চাপের মুখে গীতা সত্যি বলতে পারছেন না, এমনটাই দাবি বিরোধীদের।

পর্যবেক্ষক শুভময় মৈত্র এবিপি আনন্দে বলেন, "চাপের মুখে সত্যি কথা গোপন করা অসম্ভব নয়। অতীতে ছোট আঙারিয়ার মামলায় প্রধান সাক্ষী বক্তার মণ্ডল একাধিকবার বয়ান বদলেছেন।"  প্রয়াত বক্তারের বাড়িতে পাঁচ তৃণমূল কর্মী খুন হন ২০০১ সালে।

উন্নয়নের তাগিদ?

বাইরন দল বদলের সময় 'উন্নয়নে সামিল' হওয়ার কথা বলেছিলেন। অতীতে বহুবার দলবদলুদের মুখে এ কথা শোনা গিয়েছে। পঞ্চায়েতে যারা দল পাল্টাচ্ছেন, তাদের মুখেও একই রা।

বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর ব্লকের অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী সলমা মুর্মু বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনিও জানিয়েছেন যে উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে তিনি শাসক শিবিরে নাম লিখিয়েছেন।

পূর্ব বর্ধমানের শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতে জয়ী সিপিএম প্রার্থী ইউসুফ শেখ, মনোতারা বিবি ও কদরবানু বিবি এবং নির্দল প্রার্থী তনুশ্রী মণ্ডল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

দল বদল রুখতে বিজেপির সিউড়ি কার্যালয়ে জয়ী প্রার্থীদের রাখা হয়েছে। ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে এদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীদের ফোনও রয়েছে নেতৃত্বের হেফাজতে।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের দুই সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী

07:57

This browser does not support the video element.

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উন্নয়ন করা যাবে না এটা ভোটে জেতার পরই প্রার্থী কীভাবে বুঝলেন?  উন্নয়নের তাগিদ নয়, ব্যক্তিস্বার্থ থাকে এই সিদ্ধান্তের পিছনে।"

সরকারের ভূমিকা

সবমিলিয়ে একদল থেকে অন্য দলের যাওয়া জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের আগে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। নিউজ ১৮ বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "বিরোধী দলের যারা জিতবেন তারা ভোটের পর শাসক দলে যোগ দেবেন এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে।"

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, শাসক দলে না থাকলে কোনো পঞ্চায়েত সদস্য কেন উন্নয়নের কাজ করতে পারবেন না? যে পঞ্চায়েতগুলি বিরোধীরা দখল করেছে, তাদের কর্মকাণ্ড কি থমকে যাবে?

একে বিরোধীশূন্য রাজনীতির কৌশল বলে মনে করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার মতে, "বিরোধী দল থাকুক সেটা সরকার পক্ষ চাইছে না। তারা সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে।" তৃণমূলের পাল্টা সওয়াল, এই বিজেপি কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছে। তাদের মুখে কি এ কথা মানায়?

এক দলের প্রতীকে জিতেই অন্য দলে যোগদানে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শও গুরুত্ব পায় না। আশিস ঘোষের বক্তব্য, "এটা ভোটারদের সঙ্গে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা। সারা দেশেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দল ভাঙানো হচ্ছে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ