রোহিঙ্গা-নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও অং সান সু চি-র দলই পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিতল। অন্তত তাঁর দলের দাবি এটাই।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাদের জয় হয়েছে বলে দাবি জানালো অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি(এনএলডি)। রোববার মিয়ানমারে ভোটগ্রহণ হয়। দলের মুখপাত্র অং শিন বলেছেন, ''আপনাদের নিশ্চিতভাবে জানাতে চাই, আমরা এখনো পর্যন্ত ৩২২টি আসনে জিতেছি। ফলে ৬২২ সদস্যের পার্লামেন্টে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেছি। আমাদের আশা, আমরা অন্তত ৩৭২টি বা তার বেশি আসনে জিতব।''
সোমবার থেকেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা শুরু করেছে। কিন্তু পুরো ফল ঘোষণা করতে সপ্তাহখানেক লেগে যাবে। এখনো পর্যন্ত এনএলডির নয় জন প্রার্থীকে জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত সু চি-র দল ২০১৫ সালের ভোটে বিশাল জয় পেয়েছিল। সেটা ছিল পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের পর প্রথম ভোট। কিন্তু সামরিক শাসনের সময় ২০০৮ সালে যে সংবিধান সংশোধন হয়, তাতে বলা হয়েছে, ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর হাতে থাকবে। ফলে সাংবাধানিক সংস্কার বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা সেনার হাতে আছে।
রবিবার মিয়ানমারে নির্বাচন
৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রবিবার৷ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা অনেকটাই নিয়মরক্ষার নির্বাচন হতে যাচ্ছে৷ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
রাখাইনে ভোট হবে না
এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে রাখাইন রাজ্যসহ ৫৬টি শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Myanmar Army
ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ
রাখাইন ও চিন রাজ্যের আটটি শহরে ইন্টারনেট সংযোগ এরইমধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ফলে কেবল নির্বাচন নয়, করোনা নিয়ে তথ্য পাওয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে গেছে এসব এলাকায়৷ ২০১৯ সালের ২১ জুন সরকার রাখাইন স্টেটের আটটি টাউনশিপে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা এখনও বহাল রয়েছে৷
ছবি: Cape Diamond
ছাত্র আন্দোলন দমন
এবারের নির্বাচনে মোট নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ৷ এর মধ্যে ৫০ লাখ তরুণ ভোটার৷ ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি সরকার সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন দমাতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল৷ ফলে অল বার্মা ফেডারেশন স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
করোনা সংকট
করোনার কারণে দেশটিতে মারা গেছে অন্তত ৮০০ মানুষ৷ আক্রান্ত প্রায় ৩৪ হাজার৷
ছবি: AFP/Phyo Maung Maung
বিরোধীদের গ্রেপ্তার
সরকার তথা সেনাবাহিনীবিরোধী বক্তব্যের জন্য অনেক বিরোধীদলীয় সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
ছবি: Cape Diamond
নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন
নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম টেলিভিশন ও বেতারে তাদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিয়েছে৷ কিন্তু তাদের বক্তব্য আগে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
সেনা শাসন
১৯৬২ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী তৎকালীন বার্মার ক্ষমতা দখল করে৷ এরপর ১৯৯০ সালের ২৭ মে সামরিক শাসকদের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়৷ সেই নির্বাচনে সুচির দল জয়লাভ করেছিল৷ কিন্তু সামরিক জান্তা সে ফলাফল অস্বীকার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে৷
ছবি: AFP/Getty Images
২০১০ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা
দীর্ঘ ৫০ বছর সামরিক শাসনের পর ২০১০ সালে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে দেশটি৷ গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান শান্তিতে নোবেল জয়ী গণতন্ত্রীপন্থি নেত্রী অং সান সু চি৷
ছবি: AP
২০১৫ সালের নির্বাচন
ওই নির্বাচনে বড় জয় পায় সু চি’র দল এনএলডি৷ কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার ঝড় ওঠে সু চি’র বিরুদ্ধে৷ আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে৷ ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Myanmar Ministry of Information
মিয়ানমারের সংবিধান
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন নির্বাচন আয়োজনের পথে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে মিয়ানমারের সংবিধান৷ এটি অগণতান্ত্রিকও বটে৷ শুধু ৭৫ শতাংশ আসন পূর্ণ হয় জনগণের ভোটে, বাকি আসন শুধু মনোনয়ন৷ ২০০৮ সালে এ সংবিধান গ্রহণ করা হয়৷ এ সংবিধানের আলোকেই ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল৷ সংবিধানে এমনসব শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অং সান সু চি কোনোদিনই প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না৷
ছবি: Reuters/S. Zeya Tun
10 ছবি1 | 10
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি সু চি-র দল যে ব্যবহার করেছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তাছাড়া আশঙ্কা ছিল, এই নির্বাচনে ব্যাপক হিংসা হতে পারে। কিন্তু পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ক্রেডিবল ইলেকশন(পিএসিই) নামে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব চেয়ে বড় ইলেকশন মনিটরিং সংগঠন জানিয়েছে, রোববারের ভোট শান্তিপূর্ণ ছিল।
একসময় সু চিছিলেন আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে এই অঞ্চলে গণতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা। কিন্তু তাঁর সেই ভাবমূর্তিতে প্রবল ধাক্কা দেয় রোহিঙ্গা নিয়ে তাঁর দলের নীতি। রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রবল অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তাঁদের অনেকেরই মৌলিক নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তারপর সু চি-কে নিয়ে মোহভঙ্গ হয়েছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার।