ভোট খেয়াল রেখে কাজ এগোচ্ছে রাম মন্দিরের
২৪ অক্টোবর ২০২৩রামমন্দিরে মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার কাজ চলবে পাঁচ থেকে প্রায় আট-দশ দিন ধরে। একেবারে শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে কবে নরেন্দ্র মোদী রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় থাকতে পারবেন।
রামমন্দিরে রামলালার পুরনো মূর্তি থাকবে। তবে তা গর্ভগৃহে থাকবে না। গর্ভগৃহে থাকবে নতুন মূর্তি। সেটা শ্রীরামের চার থেকে পাঁচ বছর বয়সের। এরকম কোনো মূর্তি ভারতের মন্দিরে সম্ভবত নেই। তাহলে কীভাবে শ্রীরামের মূর্তি তৈরি হচ্ছে?
রামমন্দির নির্মাণ সমিতির প্রধান নৃপেন্দ্র মিশ্র ইন্ডিয়ান মাস্টারমাইন্ডস ডটকমকে জানিয়েছেন, ''শ্রীরামের চার থেকে পাঁচ বছর বয়সি কোনো মূর্তি দেখা যায় না। তাই আমরা বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার অধ্যাপককে বলি, এরকম একটি মূর্তির ডিজাইন তৈরি করতে। যে মূর্তি শ্রীরামের চার-পাঁচ বছর বয়সের হবে। সেখানে শ্রদ্ধা থাকবে, সেখানে শীল থাকবে, ঈশ্বরদর্শন হবে।''
নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, ''সেই আর্টওয়ার্ক হয়ে গেছে। একজন রাজস্থানের পাথর শিল্পী, দুইজন কর্ণাটকের শিল্পী আলাদা করে মূর্তি বানাচ্ছেন। রাজস্থানের শিল্পী পাথরের উপর কাজ করেন। কর্ণাটকের শিল্পীরা কৃষ্ণশীলা নিয়ে কাজ করেন। তিনটি মূর্তির মধ্যে একটি বেছে নেয়া হবে। সেটাই গর্ভগৃহে বসবে। বাকি দুইটি মূর্তির কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। আর মূর্তি বাছাইয়ের কাজটা করবে মন্দির ট্রাস্টের সদস্যরা।''
আর বাকি ৮০ দিনের মতো। তারপর রামমন্দির খুলে দেয়া হবে দর্শনার্থীদের জন্য। তবে পুরো রামমন্দির নয়। একতলা খুলে দেয়া হবে। এখন সেই একতলায় নির্মাণ কাজ চলছে। লোহার কাঠামো লাগানো আছে। এই ৮০ দিনের মধ্যে পুরো একতলার কাজ শেষ করে এই লোহার কাঠামো খুলে নেয়া হবে।
নির্মাণ সমিতির অনুমান, একেক বারে পাঁচ হাজার জন গর্ভগৃহের কাছে মন্দিরের মূল চত্বরে থাকতে পারবেন। ভারত থেকে দিনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ দর্শন করতে আসবেন। তাদের জন্যও পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। রাস্তা চওড়া হচ্ছে। হোটেল হচ্ছে। এত মানুষ আসার ফলে যাতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হয় তা দেখা হচ্ছে।
কিন্তু সেসব কাজ এখনো চলছে।
অযোধ্যার চেহারা
সাংবাদিক শরদ গুপ্তা সম্প্রতি অযোধ্য়া ঘুরে এসেছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আজকের তারিখে মন্দির চত্বর ধুলোর আস্তরণে ভরা। দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। শুধু পাথর কাটার শব্দ। ক্রেনে করে পাথর বসানো হচ্ছে মন্দির বা মন্দির চত্বরে। ''
আর মন্দিরের আশপাশে সব বাড়ি ভাঙা হয়েছে। রাস্তা পুরো তৈরি হয়নি। রামের পুরনো নগরীকে আধুনিক অযোধ্যায় পরিণত করা হচ্ছে। অযোধ্যায় পুরনো দিনের আলাদা আকর্ষণ ছিল। এখন তার জায়গায় ঝাঁ-চকচকে অযোধ্যা বানানো হচ্ছে। এটা নরেন্দ্র মোদীর অযোধ্যা।
এই অযোধ্যায় নতুন বিমানবন্দর হচ্ছে। অতি আধুনিক রেল স্টেশন,তৈরি হচ্ছে। বাস স্টেশন, হচ্ছে। ২০টি পাঁচতারা হোটেল হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের রাম মিউজিয়াম হচ্ছে। সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই-এর সাহায্য নেয়া হচ্ছে। মন্দিরের ভিতর ও বাইরের এন্ট্রি পয়েন্টে আধুনিক গ্যাজেট লাগানো হচ্ছে। তাতে কতজন ঢুকছে বেরোচ্ছে তার হিসাব রাখা যাবে।
গুপ্তারঘাট থেকে রাম কি পৌরি পর্যন্ত পুরো ঘাট বাঁধানো হচ্ছে। গুপ্তারঘাটেই শ্রীরাম জলসমাধি নিয়েছিলেন। সরযূতীরের এই জায়গা অযোধ্যা থেকে নয় কিলোমিটারের মতো।
সেই সরযূতে ক্রুজ চলবে। ফ্লোটিং রেস্তোরাঁ হবে। সব নৌকাকে মোটরবোট করে দেয়া হয়েছে। হাতে টানা নৌকা প্রায় নেই।
ফলে প্রাচীন নগরী থেকে আধুনিক শহরে উত্তরণ ঘটছে অযোধ্যার।
প্রশ্নও উঠছে
এখন তো শ্রীরামের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে মন্দিরের উদ্বোধন হবে। শরদ জানাচ্ছেন, অযোধ্য়ায় কিছু পণ্ডিতই তাকে বলেছেন, অসমাপ্ত রেখে কি মন্দিরের উদ্বোধন করা যায়?
কিন্তু তা সত্ত্বেও এভাবে উদ্বোধন করা হচ্ছে। শরদের মতে, ''ভোট বড় বালাই। এক মাস ধরে অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে বিশাল প্রচার চলবে। ভোটের আগে এই প্রচারই বিজেপি-র নির্বাচনী কৌশলের অন্যতম অঙ্গ।''