লাশেট এমনভাবে ব্যালট ভাঁজ করে বাক্সে ফেলেছেন যে, সকলে দেখতে পেয়েছেন তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন। লাশেট যে নিজের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তা সহজবোধ্য। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে ভোটদান হয় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে। জার্মানির রীতিও তাই। লাশেট ভুলভাল ব্যালট ভাঁজ করায় তা আর গোপন থাকেনি।
তবে এর জন্য তার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, তার ভোট বৈধ। কিন্তু তার এই ভুলের ছবি সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ভুল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনিও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন।
ভোট বৈধ
লাশেট যেভাবে ভোট দিয়েছেন, তা গোপন ব্যালটে ভোট দেয়ার ব্যবস্থার বিরোধী। তাই স্থানীয় রিটার্নিং অফিসার চাইলে তাকে ভোটদানে বাধা দিতে পারতেন।
ডিডাব্লিউর ফ্যাক্ট চেকিং টিম ফেডারেল রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি টুইট করে বলেছেন, একজন খুবই পরিচিত রাজনীতিক তার দলের পক্ষে ভোট দেবেন তা প্রত্যাশিত। তাদের সিদ্ধান্ত, এটা ভুলই। লাশেট কোনোভাবে ভোটদাতাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি।
জার্মানিতে ব্যালট বাক্স থেকে সরকার গঠনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া
জনগণের ইচ্ছার ন্যায্য প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷ অনেক নাগরিকেরও সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই৷ এমনই কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
নেই আলাদা ভোটার তালিকা
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler
ডাকযোগে ভোট দেবার সুযোগ
ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/picture alliance
নাগরিকদের দুটি করে ভোট
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷
ছবি: C. Ohde/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance
‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব
ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলিকেও বেশি আসন দিতে হয়৷
সব দল সংসদে স্থান পায় না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলির ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Tim Brakemeier/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণের দিন রোববার
জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়৷ নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
ভোটের ফল প্রকাশের পর জনগণ ‘ক্ষমতাহীন’
নির্বাচনি প্রচারের শেষে ভোট দেবার সময় পর্যন্ত ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী ও দলকে বেছে নিতে পারেন৷ তবে জার্মানিতে সাধারণত জোট সরকার ক্ষমতা গড়ে৷ নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু করে৷ সাধারণত প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর নির্দিষ্ট শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষির পর জোট সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি স্থির হয়৷
রিটার্নিং অফিসারের ব্যাখ্যা, ভুল করে ব্যালট উল্টোদিকে ভাঁজ করা হয়েছিল। তাকে নতুন একটা ব্যালট পেপার দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু ব্যালট একবার বাক্সে ফেলে দিলে আর কিছু করার নেই। তার ভোট বৈধ।
ভুলের নজির
লাশেটের অবশ্য ভুল করার নজির আছে। প্রচারের সময়ও একাধিক ভুল করেছেন তিনি। তার মধ্যে একটি ভুল বহু-আলোচিত।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট যখন টিভিতে ভয়ংকর বন্যা নিয়ে বলছিলেন, তখন পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে হাসতে দেখা গিয়েছিল।
এবার ভোটে লাশেটের নেতৃত্বাধীন সি়ডিইউ শলৎসের এসপিডি-র থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তবে লাশেট বলেছেন, ভোটগণনা যত এগোবে, ততই ব্যবধান কমবে।