উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের যে কোনো জায়গায় বসে ভোট দিতে পারবেন ভারতীয়রা। ঘোষণা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের দাবি, আগামী দিনে দেশের যে কোনো প্রান্তে বসেই নিজের বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ারও প্রয়োজন হবে না। ঘরে বসেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। আইআইটি মাদ্রাজের গবেষকরা নতুন এই প্রকল্পে কাজ করছেন।
ভারতে নির্বাচনে অনিয়ম রুখতে অ্যাপ, চিপ
১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত পর্যায়ে ভারতের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এবারের নির্বাচনে অনিয়ম রুখতে নানান ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: Reuters/A. Dave
ছবিসহ ভোট
এতদিন পর্যন্ত ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম-এ শুধু প্রার্থীর নাম ও দলীয় চিহ্ন থাকত৷ এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর নামের পাশে থাকবে প্রার্থীর ছবিও থাকবে৷ নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto/D. Chakraborty
ইভিএম-এর গায়ে চিপ!
এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমে থাকবে ‘জিপিএস’ চিপ, যার সাহায্যে বোঝা যাবে কোনো ইভিএম নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরেছে কি না৷ এতে করে ইভিএমের কারচুপি রোখা যাবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/P. Gill
হ্যাকিং রুখতে...
গত নির্বাচনের পর অভিযোগ ওঠে যে ইভিএম ‘হ্যাক’ করা সম্ভব৷ এই অভিযোগের মোকাবিলা করতে এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ ভোটদানের পর প্রতি ভোটারের নির্বাচিত প্রার্থীর বিবরণী আপনা থেকেই ইভিএম থেকে প্রিন্ট হয়ে বের হবে৷ দান করা ভোটের বিবরণী ভোটার নিজে চেক করে নেবার পর তা ভাঁজ করে পুরে দিতে হবে ব্যালট বাক্সে৷ এভাবেই ইভিএমের কারচুপি রুখতে দুই দফায় ভোট যাচাইয়ের সমাধান করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. P. Chaudhury
অপরাধী সাংসদ রুখতে...
বর্তমান লোকসভার ১৮৬ জন সাংসদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে খুন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগও৷ এবারের নির্বাচনে ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়েই তাঁদের ভোট দেন, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ প্রতি প্রার্থীকে টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Dave
মোবাইল অ্যাপ দিয়ে নজরদারি
প্রায় ৫,০০০ ভোটদান কেন্দ্র ও গণনাকেন্দ্রে থাকবে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বা সরাসরি সম্প্রচারের সুবিধা, যার সাহায্যে ভোটাররা নিজেদের ঘরে বসে দেখতে পারেন কেমন হচ্ছে ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া৷ এছাড়াও, আসতে চলেছে নতুন মোবাইল ‘অ্যাপ’, যার মাধ্যমে ভোটাররা ভোটপ্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখতে পারবেন৷ এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘সিটিজেন মনিটর’৷
ছবি: Reuters/J. Prakash
নারীদের জন্য
ভারতে বরাবরই নির্বাচনে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম৷ কিন্তু মোট ভোটার সংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীরা৷ তাই এবারের নির্বাচনে রয়েছে ‘নারীবান্ধব’ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, যেখানে ভোটদান থেকে ভোটগ্রহণ সব কাজ করবেন নারীরাই৷ উল্লেখ্য, শুধু কর্নাটকেই ইতিমধ্যে মোট ৬০০টি নারীবান্ধব ভোটকেন্দ্র ঘোষিত হয়েছে৷
ছবি: Bahujan Samaj Party
তৃতীয় লিঙ্গের জন্য
২০১৪ সালে একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর থেকে ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা ‘হিজড়া’দের দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভোটাধিকার৷ এবারের নির্বাচনে তাঁদের মোট ভোটারের সংখ্যা ৩৯,০০০ - যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
ফেসবুকের ভূমিকা কী?
নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবার পর থেকেই ফেসবুকে শুরু হয়েছে পক্ষ-বিপক্ষের নানা আলোচনা৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশ, প্রতি প্রার্থীকে কমিশনের কাছে দিতে হবে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত খুঁটিনাটি, যাতে কোনো প্রার্থীর প্রোফাইল থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
সামাজিক মাধ্যমে সততা
শুধু ফেসবুক নয়, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরেও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজর৷ সামাজিক মাধ্যমে আইনগতভাবে প্রচার চালাতে পারেন প্রার্থীরা, কিন্তু সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের গায়ে থাকতে হবে ‘পাবলিশড বাই’ বা ‘পেড ফর বাই’ তকমা৷ এতে করে সাধারণ জণগনের বুঝতে সুবিধা হবে, ঠিক কোন দলের বা গোষ্ঠীর হয়ে কোন প্রচার চালানো হচ্ছে৷ এতে মিথ্যা প্রচারণার ধারা কমবে বলে মনে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: AP
9 ছবি1 | 9
২৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস। দিনটিকে ভারতে জাতীয় ভোটার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সোমবার সকালে সেই উপলক্ষে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশন সুনীল আরোরা। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তিনি। তারই মধ্যে তিনি জানান, দ্রুত রিমোট ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই এর মহড়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইভিএমের সাহায্যে এখন ভোট হয় ভারতে। কিন্তু ভোটারদের নিজের কেন্দ্রে নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে ভোট দিতে হয়। কাজের সূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন, তাঁরা ভোট দিতে পারেন না। নতুন পদ্ধতিতে দেশের যে কোনো প্রান্তে বসে নিজের কেন্দ্রে ভোট দেওয়া যাবে। প্রযুক্তির সাহায্যে সে ব্যবস্থআ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছএন।
শুধু দেশ নয়, বিদেশে যে সমস্ত ভারতীয় আছেন, তাঁরাও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। নতুন ব্যবস্থায় তাঁরাও যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। সেখানেই কি নতুন ব্যবস্থা চালু হবে? নির্বাচন কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, এত দ্রুত নতুন ব্যবস্থা চালু করা যাবে না। তবে কিছু দিনের মধ্যেই নতুন ব্যবস্থার মহড়া চালু হবে। মহড়া হলে বোঝা যাবে, নতুন ব্যবস্থায় কী কী সমস্যা হতে পারে। তা বুঝে নিয়েই ব্যবস্থাটিকে কার্যকর করা হবে। এখনো প্রযুক্তিটি গবেষণার স্তরে আছে। মাদ্রাজ আইআইটির গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।