গত ২৪ ঘণ্টায় দুই রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। একজন কংগ্রেসের, অন্যজন তৃণমূলের।
বিজ্ঞাপন
রোববার বিকেলে পুরুলিয়ার ঝালদায় খুন হয়েছেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা তপন কান্দু। সদ্যসমাপ্ত পুরসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ঝালদার দুই নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিলেন তিনি। ওই পুরসভা এখনো ত্রিশঙ্কু। কংগ্রেসের শক্তি কমাতেই তাকে খুন করা হয়েছে বলে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ। মঙ্গলবার এলাকায় হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কলকাতালাগোয়া পানিহাটিতে রোববার সন্ধ্যায় খুন হন তৃণমূলের কাউন্সিলর অনুপম দত্ত। তিনিও সাম্প্রতিক পুরভোটে জয়ী হয়েছেন। তাকে গুলি করার অপরাধে এলাকা থেকেই এক সুপারি-কিলারকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভারতে পরিবারের ভেতর রাজনৈতিক লড়াই!
পারিবারিক রাজনীতি বরাবরই ভারতের অন্যতম চিত্র৷ কিন্তু অনেক রাজনীতিক পরিবার এমনও রয়েছে, যার সদস্যরা একে অন্যের বিপক্ষ আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
দুই বউ দুই দলে
কংগ্রেসের রাশ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নেহরু-গান্ধী পরিবারের হাতে৷ জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীবের পর ভার গেছে রাজীব-পত্নী সোনিয়ার কাছে৷ কিন্তু ইন্দিরার আরেক পুত্র সঞ্জয়ের অকাল প্রয়াণে রাজনৈতিক আলোয় এসে পড়েন তাঁর স্ত্রী মানেকা৷ শ্বশুরবাড়ির মানুষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মানেকা প্রতিষ্ঠা করেন ‘সঞ্জয় বিচার মঞ্চ’ নামের একটি কংগ্রেস-বিরোধী দল৷ বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ
সোনিয়া, মানেকা গান্ধী পরিবারের দুই বউ৷ তাঁরা দুজনেই দুজনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী৷ উত্তরাধিকার মেনে নিয়ে সোনিয়া-পুত্র রাহুল বর্তমানে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ মানেকা-পুত্র বরুণ গান্ধীও ভারতীয় জনতা পার্টি, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ৷ ছবিতে বরুণ, তাঁর মা মানেকা ও স্ত্রী যামিনী৷
ছবি: DW
মহারাষ্ট্রেও একই চিত্র
মারাঠি জাতীয়তাবাদী আদর্শে গঠিত শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে৷ তাঁর পর কে পাবেন দলের দায়িত্ব, এই নিয়ে যখন পুত্র উদ্ধব ও ভাইপো রাজের মধ্যে বচসা বাধে, দলের ভার পান উদ্ধব ঠাকরে৷ রাজ ঠাকরে শিব সেনা ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আরেকটি সম-আদর্শের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’৷ দুই দলের মধ্যে আদর্শিক কোনো দ্বন্দ্ব সেভাবে না থাকলেও, মহারাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে রাজ-উদ্ধব দ্বন্দ্ব আলোচিত৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
রাজপরিবারের ভেতরেও দ্বন্দ্ব
গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিতে আসার ঝোঁক৷ কিন্তু সদস্যদের মধ্যে নেই মতের মিল৷ কংগ্রেস-সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও-এর মা বিজয়রাজে সিন্দিয়া ছিলেন গোয়ালিয়রের শেষ রাজা জিবাজিরাও-এর স্ত্রী৷ প্রথম দিকে বিজয়রাজে সিন্দিয়া কংগ্রেস-বিরোধী স্বতন্ত্র পার্টিতে যোগ দিলেও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন৷ ওপরের ছবিতে মাধবরাও-এর বোন বসুন্ধরা, যিনি মায়ের মতোই কংগ্রেস-বিরোধী৷
ছবি: DW/J. Sehgal
নতুন প্রজন্মও দুই দলে বিভক্ত
মাধবরাও সিন্দিয়ার পথ ধরে তাঁর পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্দিয়াও কংগ্রেসে যোগদান করেন৷ বর্তমানে তিনি দলের অন্যতম জনপ্রিয় যুবনেতা৷ অন্যদিকে তাঁর বাবার দুই বোন, যশোধারা ও বসুন্ধরা যথাক্রমে মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ৷ শুধু তাই নয়, পিসি-ভাইপো’র মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদের জের এসে পড়েছে পারিবারিক সম্পর্কেও৷ সংসদেও একে অন্যের বিপক্ষে লড়তে দেখা যায় বসুন্ধরা ও জ্যোতিরাদিত্যকে৷
ছবি: AP
বাবার বিরোধী ছেলে
বাবা মুকুল রায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য যখন ২০১৭ সালের নভেম্বরে দল বদলে বিজেপি’তে যোগদান করেন, প্রশ্ন ওঠে, কী হবে তৃণমূল সাংসদ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? অবশেষে ২০১৯ সালের মে মাসে এসে তিনিও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে৷
ছবি: Ians
বলিউড পরিবারেও হলো যা...
বিখ্যাত অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ তাঁর স্ত্রী পুনম সিনহা যখন এ বছর রাজনীতির ময়দানে আসার ঘোষণা দেন, সবার মনেই ছিল প্রশ্ন– কোন দলে যাবেন তিনি? বিজেপি বা কংগ্রেস, দুই দলে না গিয়েই পুনম যোগ দিলেন সমাজবাদী পার্টিতে৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই দলের হয়েই তিনি লড়বেন বিজেপি’র রাজনাথ সিংয়ের বিরুদ্ধে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
রোববার সন্ধ্যায় প্রকাশ্য রাস্তায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয় অনুপমকে। গুলি করে ওই এলাকাতেই একটি হোগলাবনে লুকিয়ে পড়ে দুষ্কৃতী। কিন্তু পাড়ার লোকেরা তাকে দেখে ফেলে। হোগলাবনে ঢুকে শম্ভুনাথ নামের ওই সুপারিকিলার পোশাকও বদলে ফেলেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকার মানুষ বনটি ঘিরে ফেলে। তারপর তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বাইরে বেরোতে বাধ্য হয় শম্ভুনাথ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। শম্ভুনাথকে কে বা কারা সুপারি দিয়েছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে পুরুলিয়ার ঝালদায় খুন হয়েছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। রোববার দুপুরে এলাকায় তার সংবর্ধনা সভা ছিল। সেখান থেকে ফিরে বিকেলে বেরিয়েছিলেন তপন। তখনই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাঁচির হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা নেপাল মাহাতোর অভিযোগ, ''পুরসভায় কংগ্রেসের শক্তি কমাতেই তপনকে হত্যা করা হয়েছে। শাসকদলের নাম না করলেও সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন নেপাল।''
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই একের পর এক রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। শাসক-বিরোধী সব পক্ষের মানুষই নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বার বার সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু শাসক বরাবরই রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রোববারের দুই খুনের ঘটনার পর ফের রাজনৈতিক হত্যার প্রশ্নটি সামনে এসেছে।