পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে এতদিন সরব ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবার সেই কেন্দ্রকেই খানিক চাপের মুখে পড়তে হলো। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার এ বিষয়ে কেন্দ্রকে একটি নোটিস পাঠিয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো ওই নোটিসে তথ্যপ্রমাণ চাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছিল, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি যে দাবি করছে, তার তথ্য প্রমাণ নেই।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গেরভোট পরবর্তী সহিংসতার মামলাটি উঠেছিল। বিচারপতি বিনীত সরণ এবং অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি শোনে। সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের হয়ে বেশ কিছু মামলা তিনি লড়েছেন। এই মামলাটিও তিনি লড়ছেন।
এক নজরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১
২৯৪টি আসনের জন্য আট দফায় ভোট শেষ৷ এবার ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার পালা৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের খুঁটিনাটি জেনে নিন ছবিঘরে...
ছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW
করোনায় নির্বাচন
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেই পশ্চিমবঙ্গে সম্পন্ন হলো বিধানসভার ভোটগ্রহণ৷ শুরু থেকেই করোনাকালীন বিধি উপেক্ষার অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন সোচ্চার হয় নির্বাচনের শেষ লগ্নে৷ নতুন বিধিতে কমিশন জানায় যে, ফলাফল ঘোষণা ও পরবর্তীতে বিজয় উদযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে রাজনীতিকদের৷ ভোটগণনা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতেও সাথে রাখতে হবে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল বা দুই ডোজ করোনার টিকা পাওয়ার প্রমাণ৷
ছবি: Payel Samanta/DW
আট পর্বে ভোট
আট দফায় ভোটগ্রহণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি ইতিহাসে এই প্রথম৷ টানা ৬৬ দিন ধরে চলে নির্বাচন৷ ২৭ মার্চ, ১ এপ্রিল, ৬ এপ্রিল, ১০ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল ও ২৯ এপ্রিলে ভোট দেন পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা৷ ফলাফল ঘোষণা ২ মে৷
ছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW
মোট আসন
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মোট আসন ২৯৪টি৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গড়তে কোনো একটি দল বা জোটকে জয়লাভ করতে হবে অন্তত ১৪৮টি আসনে৷
ছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW
মোট ভোটকেন্দ্র
গোটা রাজ্যজুড়ে ৭৮হাজার ৭৯৯টি কেন্দ্রে চলে ভোটগ্রহণের কাজ৷ শুধু পোলিং বুথ বা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নয়, ৮০ বছরের বেশি বয়সের ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশন ঘরে বসে ভোটদানেরও ব্যবস্থা করেছিল৷ তবে ভারতের বাইরে বসবাসরত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা ছিল না এই নির্বাচনে৷ নতুন ভোটারের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৩৷
ছবি: Payel Samanta/DW
মোট দল
এবারের নির্বাচনের লড়াইয়ের ময়দানে মোট ১৮টি দল৷ এই দলগুলির মধ্যে তৃণমূল কংগ্রসের সাথে আসন সমঝোতায় রয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ এছাড়া, ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে রয়েছে অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন দলটি৷ বামফ্রন্টের শরিক সিপিআইএমসহ মোট পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সাথে এবার ‘সংযুক্ত মোর্চা’র আকারে হাত মেলালো কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট৷ এছাড়া বেশ কিছু নির্দলীয় প্রার্থীও এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মোট প্রার্থী
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবার ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন মোট দুই হাজার ১৩২জন প্রার্থী৷
পুননির্বাচন
ভোট গণনার আগে পর্যন্ত, করোনার কারণে চারজন প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ওই আসনগুলোতে পরে নির্বাচন হবে৷ এছাড়া, আট পর্বের বাইরে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে জঙ্গিপুর ও শামসেরগঞ্জ আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১৬ মে৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP
সহিংসতা
পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে মারামারি, হাতাহাতির ঘটনা৷ গোলাগুলি থেকে বোমাবাজি কিছুই বাদ পড়েনি৷ প্রতিপক্ষের হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ ভোটারের৷ এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে৷ নারী প্রার্থীরাও হয়েছেন হামলার শিকার৷
ছবি: Sudipta Das/Pacific Press/picture alliance
প্রার্থীদের শাস্তি
নির্বাচনি প্রচারের সময় বিধিভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি পেতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল আর বিজেপির দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহাকে৷ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই প্রার্থীদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার জন্য প্রচার বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
9 ছবি1 | 9
আদালতকে সিবাল জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে যে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ নিয়ে এসেছে, তা ভুলে ভরা। এমন ব্যক্তিকে সহিংসতায় মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে, বাস্তবে যিনি জীবিত। নিজের দাবির সপক্ষে আদালতে বেশ কিছু নথি দাখিল করেন সিবাল। সেই নথি দেখে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নোটিস দেয় আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ অক্টোবর। তার আগে কেন্দ্রকে ওই নোটিসের উত্তর দিতে হবে।
এদিন আদালতকে কপিল জানান, রাজ্য সরকার নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস অস্বীকার করছে না। কিন্তু তার যুক্তি, ওই সময় প্রশাসন রাজ্য সরকারের হাতে ছিল না। ভোটের ফল বেরিয়েছে ২ মে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৫ মে। মধ্যবর্তী সময়ে প্রশাসন ছিল নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে। ফলে ওই সময় যে সন্ত্রাস হয়েছে, তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
বিজেপি নেতা সৌরভ শিকদারের বক্তব্য, ভোটের সময় সহিংসতা কেবল ২মে থেকে ৫মে-র মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''ভোটের আগে থেকেই শাসকদল সন্ত্রাস চালিয়েছে। এখনো চালাচ্ছে। প্রতিদিন বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে প্রশাসন তাদের হাতে ছিল না বলে শাসকদল দায় এড়াতে পারে না।''
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে এখনো সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বৃহস্পতিবার ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। পাল্টা অভিযোগ করেছে তৃণমূলও। তারই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।