1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোট বর্জনের ডাক বিএনপির, উপেক্ষার আহ্বান আওয়ামী লীগের

৬ জানুয়ারি ২০২৪

যাত্রীবাহী ট্রেন, ভোটকেন্দ্র আর ধর্মীয় উপাসনালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

নির্বাচনের আগে থেকে নানা সহিংসতার ঘটনায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের আগে থেকে নানা সহিংসতার ঘটনায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

এদিকে, ১৫ বছর অধিকারবঞ্চিত থাকার প্রতিবাদে অন্তত রোববার দিন ভোট বর্জনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি৷

বিপরীতে, নির্বাচন বর্জনকারীদের সব ষড়যন্ত্র, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সব ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ৷

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের শঙ্কা

রোববার ভোট৷ কিন্ত তার আগেরদিনই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট আয়োজন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেই৷ তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে৷

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস' অনুষ্ঠানে এমন সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷

যাত্রীবাহী ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘ট্রেনে আগুন দিয়েছে৷ ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে৷ আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে৷ আগুন দেখে আমরা দু:খ ভারাক্রান্ত৷ কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি৷''

ভোটের আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ছবি: PID/Bangladesh

তারপরেও তিনি বলেন, ‘‘সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে৷ তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে৷ এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে৷ আশাকরি, ভোটাররা আসবেন৷''

অ্যামেরিকার ভিসানীতি নিয়ে জাপানের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি৷ বলেন, ‘‘এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে৷ কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য৷ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য৷ তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে৷ যারা এক্ষেত্রে বাধা দেবে, তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন৷''

বাংলাদেশে নির্বাচন: শান্তিপূর্ণ ভোট হবে কিনা, সংশয়ে কমিশনএ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না৷ আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে৷ আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি৷ আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই৷ কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়৷ ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না৷ এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর৷''

এবারের ভোটে ‘সিলেকশন' হয়ে গেছে বলে যে সমালোচনা রয়েছে, তার জবাও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরো কিছু বলছেন৷ আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না৷ এ সংকট রাজনৈতিক৷''

ভোটের গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই বলেও মনে করেন সিইসি৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি৷ আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন৷ এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে৷ গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র ওঠে আসলে, মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবেন৷''

নির্বাচনের আগেই এবার কারা সরকারে আসছেন, আর কারা বিরোধী দলে থাকবেন, সেটা সহজেই অনুমেয়৷ এমন পরিস্থিতিতে কমিশন বিব্রত কিনা জানতে চাওয়া হয় সিইসির কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের বিষয় নয়৷ নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই৷''

অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন৷ অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকেরা৷

নাশকতার ঘটনায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিয়ে শঙ্কিত নির্বাচন কমিশন৷ছবি: Habibur Rahman/Zuma/picture alliance

ভোট বয়কট করুনবিএনপি

ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ‘গণতন্ত্রকামী ভোটারদের' উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যারা আপনাকে গত ১৫ বছর অধিকারবঞ্চিত করে রেখেছে, তাদের অন্তত ৭ জানুয়ারি এক দিন বয়কট করুন৷''

এদিন সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে সারা দিন পরিবারকে সময় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷

রিজভী বলেন,‘‘আপনি, আপনার পরিবার, স্বজন-বন্ধুবান্ধব-পরিচিতজন ও প্রতিবেশীদের ভোটের নামে ‘বানর খেলার আসর বর্জন এবং ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করুন৷''

৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন রিজভী৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনায় নৃশংস হতাহতের খবরের পরেই বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি৷ প্রকৃত দোষীদের আটক ও শাস্তি দাবি করছি৷ ইতোমধ্যে রেলওয়ে তদন্ত কমিটি করেছে৷''

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ নবী উল্লাহ নবীকে অর্থদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান ডিবি প্রধান৷

এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘‘রাতে ট্রেনে আগুনের পর তারা এখন নানা কাহিনি সাজাচ্ছে, নাটক তৈরি করছে৷ এই গালগল্প করার জন্য এখন তারা বিএনপি নেতাদের আটক করে কনফেশন করাচ্ছে৷ জুলুমের ভয় দেখিয়ে এগুলো করা হচ্ছে৷''

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘‘ক্রসফায়ারের কাল্পনিক গল্পের মতো প্রতিটি নাশকতার ঘটনায় একই গল্প তৈরি থাকে৷ প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেন বিএনপিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহিংস দল হিসেবে দেখাতে পারে৷ এটাও তাদের একটা চালাকি পরিকল্পিত কৌশল৷ কিন্তু সারা পৃথিবীর সবাই এখন জানে যে বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়ার মূল হোতা আওয়ামী লীগ৷''

সরকারি তদন্তের ওপর জনগণের ন্যূনতম বিশ্বাস নেই বলেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো৷ আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়েছি যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে যেন, নির্বাচনের কোনো অনিয়ম-কারচুপি-ভয়ভীতির খবর যেন প্রকাশ না করে৷''

ভোট দিতে আসুনআওয়ামী লীগ

নির্বাচন বর্জনকারীদের ভয় না পেয়ে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার ক্ষমতা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া৷

শনিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে যায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল৷

এক প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমরা যেমন কোনো ভোটারকে তার বাড়ি-বাসা অফিস থেকে টেনে-হিঁচড়ে কেন্দ্রে নিতে পারি না, ঠিক একইভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভোটার, যারা ভোট দিতে আসবেন তারা যাতে ভোট দিতে না পারেন; ককটেল ফাটিয়ে, অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়ে তাদেরকেও আমরা বাধা দিতে পারি না৷ কারণ ভোটাধিকার হচ্ছে সাংবিধানিক অধিকার৷''

দেশের মানুষে সাংবিধানিক অধিকার চর্চায় বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই বলেও মনে করেন বিপ্লব বড়ুয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেশবাসীকে বলবো, সব ষড়যন্ত্র, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আগামীকাল যে গণতন্ত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন৷''

টিএম/এডিকে (দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ