মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি সরকারি হাসপাতালে আগুন লাগে। সদ্যোজাত শিশুদের ওয়ার্ডে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী থাকল ভোপাল। আগুনে প্রাণ গেল চার সদ্যোজাত শিশুর। কান্নার রোল হাসপাতালের সামনে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। শর্টসার্কিট থেকেই আগুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
ভারতে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ৩০ বছর পরও ন্যায়বিচার পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা৷ লোকালয়ের কাছে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ৷ আজও অনেক বাসিন্দার শরীরে গ্যাসের বিষক্রিয়া রয়ে গেছে৷
১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতের ভোপালে ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটে৷ বহুজাতিক সংস্থা ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লিক করে৷ সরকারের মতে অবশ্য মৃতের সংখ্যা ধরা হয় মাত্র ৩৭৮৭৷ তবে বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী, গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ধুঁকে ধুঁকে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের সহ নিহতের সংখ্যাটা হবে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ৷ আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন মাদার তেরেসা৷
ছবি: AP
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অভিশাপ
রাসায়নিক কারখানাটি ৩০ বছর পরও ভোপালের বাসিন্দাদের কাছে এক অভিশাপ৷ সেদিনের সেই বিস্ফোরণের ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এক থেকে অন্য প্রজন্মে৷
ওই কারখানার কাছে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের বেশিরভাগই জন্ম দিয়েছেন অস্বাভাবিক, অপরিণত শিশুদের৷ এরা নানা দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার৷ জড় বুদ্ধি, মানসিক বৈকল্য, শারীরিক পঙ্গুত্বের জীবন কাটাচ্ছে তারা৷
৩০ বছর পরও বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ কারখানা চত্বরেই পড়ে আছে৷ সরানো হয়নি৷ ইতিমধ্যে হাত বদল হয়েছে ইউনিয়ন কার্বাইডের৷ তারা সাফ জানিয়েছে আগের কোম্পানির কোনো দায়ভার তারা নিতে বাধ্য নয়৷ ফলে ঐ অভিশপ্ত কারখানার আশপাশ এলাকার ভূগর্ভস্থ বিষাক্ত জল খেতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের৷
বর্ধিত ক্ষতিপূরণের সরকারি আশ্বাস কাজে পরিণত হয়নি আজও৷ গ্যাস দুর্ঘটনায় নিহতদের সন্তান সন্ততিরা পঙ্গু জীবনযাপন করছে৷ সরকার নির্বিকার, উদাসীন, এই অনুযোগ অনেকের৷ তাই বাধ্য হয়ে আবার পথে নেমেছে পীড়িতরা এবং তাঁদের আন্দোলনে শামিল হয়েছে এনজিওগুলি৷
সোমবার রাত নয়টা নাগাদ হাসপাতালে প্রথম ধোঁয়া দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, কমলা নেহরু হাসপাতালের সদ্যোজাত শিশুদের ওয়ার্ডে আগুন ছড়াতে থাকে। হাসপাতাল কর্মীরা দ্রুত সেখান থেকে শিশুদের সরাতে থাকে। কিন্তু তার মধ্যেই তিনজন সদ্যজাত আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। চিকিৎসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। আরেক সদ্যজাতকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তারও মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে মৃত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের কাঁদতে দেখা যায়। আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান স্টেট মেডিক্যাল এডুকেশন মন্ত্রী বিশ্বাস সারাং। সাংবাদিকদের তিনি জানান, ''আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা উদ্ধারকাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু চারটি শিশুকে বাঁচানো গেল না। এটা দুঃখের। দমকলের প্রাথমিক অনুমান শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে।''
ঘটনার পর দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাজ্যেরমুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ''কয়েকটি শিশুকে বাঁচানো গেল না, এটা দুঃখের। মৃত শিশুদের পরিবার পিছু চার লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।''
রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা কমলনাথ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন। মঙ্গলবার শিবরাজ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মহম্মদ সুলেইমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।