ভোলায় ‘ফেসবুক ম্যাসেজ’ নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ৪
২০ অক্টোবর ২০১৯পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, ভোলা জেলার এসপিসহ ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ সন্ধ্যার দিকে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে৷
ভোলা জেলা হাসপাতাল ও বোরহানউদ্দিন থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলিতে চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ নিহতদের নাম জানা গেছে৷ তারা হলেন মাহফুজ পাটওয়ারী, মিজান, শাহিন এবং মাহবুব৷ তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি৷ সংঘর্ষের পর ভোলা জেলা পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও পৌর শহরের বাইরে বিক্ষুব্ধ লোকজন অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে৷
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্র নাথ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা মারা গেছেন তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন৷ হাসপাতালে আহত অবস্থায় ৪৭ জন ভর্তি হয়েছে৷ আরো আহত আসছেন, যারা আহত তারাও গুলিবিদ্ধ৷’’ আহতদের মধ্যে পুলিশের এডিশনাল এসপি ও একজন পুলিশ কনেস্টবল আছেন বলেও জানা গেছে৷ আর কোনো পুলিশ আহত হয়নি৷
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. এনামুল হক দাবি করেন, থানার কাছেই বোরহানউদ্দিন পৌর এলাকার ঈদগাহ মাদ্রাসার মাঠে মুসুল্লিদের পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে উত্তেজনা ছড়ানো হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ তাদের সমাবেশ দ্রুত শেষ করে চলে যেতে বললে উল্টো তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়৷
এলকাবাসী জানান, বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে এক হিন্দু যুবকের একটি কথিত ফেসবুক ম্যাসেজ নিয়ে ওই এলাকায় কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল৷ স্থানীয় ‘তৌহিদী জনতার’ অভিযোগ ফেসবুক মেসেজে নবী ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে তিনি কটূক্তি করেন৷ ওই ফেসবুক ম্যাসেজটি স্থানীয়ভাবে পোস্ট আকারে ছড়িয়ে দেয়া হলে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে৷ শুক্রবার বিকেলে ওই যুবক নিজেই বোরহানউদ্দিন খানায় গিয়ে অভিযোগ করেন যে তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে৷ সে এই অভিযোগে থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে৷
শনিবার তৌহিদী জনতার ব্যানারে ওই যুবকের বিচার দাবী করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এলাকাবাসী৷
রোববার সকালে তৌহিদী জনতার আহ্বানে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে লোকজন সদরে আসেন৷ সকাল ১০টার দিকে শত শত লোক জড়ো হয়৷ পৌর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ এতে কয়েকজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন৷’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘‘পুলিশ গুলি, ও রাবার বুলেট ছোড়ে৷’’ পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ার কথা স্বীকার করে পুলিশও৷
স্থানীয় সাংবাদিক জাকির হোসেন জানান, ‘‘সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়৷ সমাবেশের কথা একদিন আগেই মাইকে প্রচার করা হয়৷ শত শত লোক একযোগে বিপ্লবের ফাঁসি দাবি করতে থাকে৷ পুলিশ তাদের শান্ত করতে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায়৷ তখন পুলিশ ফাঁকা গুলি করলে পরিস্থতির অবনতি হয়৷ দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়৷ পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে আর বিপরীতে এলাকাবাসী তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে৷ প্রায় এক ঘন্টা এই সংঘর্ষ স্থায়ী হয়৷’’
পুলিশের একটি সূত্র দাবি করছে, ‘‘তাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে বিপ্লবের ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে৷ সেটা তারা উত্তেজিত জনতাকে বুঝাতে গেলে তারা তা শোনেনি৷ এমনকি মাদ্রাসার ইমামের কথাও তারা শোনেনি৷’’
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে আটক করেছে৷
সন্ধ্যায় ওসি মু. এনামুল হক ডয়চে ভেলেকে জানান, বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র মোবাইল পরীক্ষা করে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার আলামত পেয়েছেন তারা। যে ফেসবুক মেসেজের কথা বলা হচ্ছে সেটিও তার দেয়া নয়। ‘‘আমরা এক্সপার্ট মতামত নেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছি। সেই মতামত পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে,‘‘ বলেন মু. এনামুল হক৷