বিশ্বের সব দেশকে ভ্যাকসিন নিয়ে স্বার্থপরতা পরিহার করতে বলেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ বার্লিনে অনুষ্ঠানরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
রোববার সম্মেলনের প্রথম দিনে এক ভিডিওবার্তায় জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ থেকে কেউ নিরাপদ নয়, এটা থেকে আমরা সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আসলে কেউই নিরাপদ নয়৷ যারা নিজেদের সীমান্তের ভেতরে ভাইরাসকে জয় করেছে, তারাও অন্যরা জয়ী না হওয়া পর্যন্ত নিজের সীমানার ভেতরে বন্দি৷’’
বিশ্বের সব দেশকে সতর্ক করে দিয়ে স্টাইনমায়ার আরো বলেন, ‘‘মহামারির পরে আমরা যদি এমন পৃথিবীতে বাস করতে না চাই যেখানে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রত্যেকে আর সবাই শুধু নিজের জন্য’’ এমন নীতি প্রতিষ্ঠিত হবে, তাহলে আমাদের সমাজ এবং সরকারগুলোকে সবার জন্য ইতিবাচক ভাবতে হবে৷’’
তিন দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে অনেক দেশ যে শুধু নিজেদের জনগণের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাকসিন বেশি করে নিতে চাচ্ছে – এই প্রবণতারও সমালোচনা করে জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনাকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে৷
এ সময় ৮৬ লাখ মানুষের সংক্রমণ এবং এক লাখ ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে করোনায় সবচেয়ে বেশি দুরবস্তায় পড়া দেশ হিসেবে উল্লেখ করে দেশটির প্রতি কোভ্যাক্স উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভ্যাকসিন তৈরি এবং বিতরণে সহায়তার আহ্বান জানান৷
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের বক্তবের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন ডাব্লিউএইচও-র প্রধান টেড্রস আবহান ঘেনরেয়েজুস৷ তিনি বলেন, গরিব দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবে-এটা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল বিশ্ব থেকে করোনা দূর করানো যাবে৷
রিচার্ড কনর/এসিবি
কুকুর দিয়ে করোনা পরীক্ষা: সময় ও অর্থ সাশ্রয়
ফিনল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব৷ এজন্য মানুষকেও শারীরিক কোনো কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Lehtikuva/Reuters
ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে, ব্যয় সংকোচন করতে সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে এলেও কারো আর করোনা টেস্ট করানো হবে না৷ করোনা পরীক্ষা ও ট্র্যাক করা নিয়ে পুরো ইউরোপই অনেকটা দিশেহারা৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
ফিনল্যান্ডের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা কেবিনে এক টুকরো খাবারের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা করছে কুকুর ‘কোসি’৷ মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগছে তার৷ সাধারণ করোনা পরীক্ষায় যে পরিমাণ সময় লাগে তার তুলনায় অনেক কম সময় লাগে এখানে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
শারীরিক অস্বস্তি নেই
নাক থেকে কোনো শ্লেষা নেয়ার দরকার নেই৷ কোনো ব্যক্তির হাত বা ঘাড় মোছা কাপড় শুঁকে তৎক্ষণাৎ কুকুর জানিয়ে দেবে করোনার সংক্রমণের কথা৷ এমনকি করোনা সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু পাঁচদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন ব্যক্তিরও করোনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে কুকুরের পরীক্ষায় এবং তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আনা হিলেম-জোর্কমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই কুকুরগুলো করোনার হাত থেকে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে৷ তিনি জানালেন, কুকুর পরীক্ষার পর তারা অন্য মাধ্যমে পরীক্ষা করেও পরীক্ষাগুলো শতভাগ সঠিক ছিল৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
প্রশিক্ষিত কুকুর
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কুকুরকে রোগ নির্ণয়ের কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ বেডবাগস, ক্যান্সারের মতো রোগ নির্ণয়ে তাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে৷ প্রথমে প্রশিক্ষণের পর কুকুর ‘কোসি’র সাত মিনিট সময় লেগেছে প্রশিক্ষক আসলে কী চাইছেন তা বুঝতে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
১৫ কুকুরকে প্রশিক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে ১৫টি কুকুরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে এমন কুকুর আছে, যারা শরীর শুঁকে বলে দিতে পারে কারো ডায়াবেটিস আছে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রয়োজন অনুমোদন
এই পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী করতে প্রয়োজন অর্থের এবং অনুমোদনের৷ স্থানীয় মেয়র অবশ্য বিমানবন্দরে এসে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নিজেকে পরীক্ষা করিয়েছেন৷ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন মাত্র দুই মিনিটে পরীক্ষা হয়ে যেতে দেখে৷ চার মাসের এ পাইলট প্রকল্পে ৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
এক মাসে খরচ দশ লাখ ইউরো
বিমানবন্দরের এই প্রকল্পে গত এক মাসে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ইউরো৷ শীতকালে আরো ৩০ লাখ ইউরো খরচ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
ফিনিশ সরকারের অনুমোদন মেলেনি
জনগণের বিপুল সমর্থন সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড সরকার এখনো এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়নি৷ বিমানবন্দরের যাত্রীরা খুব আগ্রহের সাথেই এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রকল্প পৌঁছেছে জার্মানিতেও
এই পরীক্ষা এখন আর কেবল ফিনল্যান্ডে সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানির গবেষকরাও জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছেন৷ হানোফারের ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোলগার ফোল্ক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তহবিল প্রয়োজন, সেটা তারা পাচ্ছেন না৷ মহামারি মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷