শব্দ দূষণ যে কী, ঢাকা-কলকাতার মতো শহরের মানুষকে তা নতুন করে বলে দিতে হবে না৷ কিন্তু শব্দের দৈত্যকে কাবু করে মানুষের কানকে কিছুটা রেহাই দেওয়া তেমন কঠিন কাজ নয়৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ইলেকট্রিক সাফাইয়ের গাড়ি রাতে চলে, তবে আগেই প্র্যাকটিস শুরু করেছে৷ তবে বিকট শব্দ করে৷ দুই অ্যাকুস্টিক গবেষক সেটা বদলাতে চান৷ ড্রেসডেন শহরের আবর্জনা সাফাই বিভাগের সঙ্গে তাঁরা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চান৷ সাফাই বিভাগের প্রতিনিধি ক্যার্স্টিন ট্রাউডেভিশ বলেন, ‘‘ইলেকট্রিক ক্লিনার এমনিতে রাস্তায় বেশি শব্দ করে না৷ কিন্তু সমস্যা হলো, সেই শব্দও বাকিদের ছাপিয়ে যায়৷ আমাদের আশা, অ্যাকুস্টিক গবেষকরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শব্দের উৎস আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন৷''
ইউরোপের সবুজ শহর
পরিবেশ বাঁচানো ও জ্বালানি খরচ কমানো সহ অন্যান্য কারণে ইউরোপের শহরগুলোতে দিন দিন ‘সবুজ জ্বালানি’-র ব্যবহার বাড়ছে৷
ছবি: CC/Negu
বিশুদ্ধ বাতাসের শহর স্টকহোম
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে চলাচলরত যানবাহনের প্রায় ৭৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে৷ এছাড়া ‘যানজট কর’ এড়াতে অনেক মালিক নিজের গাড়ি ছেড়ে গণপরিবহণ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ইউরোপের অন্যতম বিশুদ্ধ বাতাসের শহর এখন স্টকহোম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Paul Eckenrot
কার্বন নিরপেক্ষ শহর
নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই ইউরোপের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শহর হয়ে গেছে ইটালির ‘সিয়েনা’৷ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বায়োমাস ও জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং বন রক্ষা করে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে সিয়েনা৷
ছবি: cc-by-sa/Massimo Catarinella
হাইড্রোজেন বাস
অবস্থানের কারণে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব৷ এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে পুরো শহরকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এখনই সেখানকার গণপরিবহণে হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আর শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনে জিওথার্মাল উৎস থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নঁতে ট্রাম
ফ্রান্সের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর নঁতে বায়ু দূষণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে স্ট্রিটকার (ট্রাম) চলাচল চালু করা হয়েছে৷
ছবি: imago/McPHOTO
সবুজের সমাহার
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়ুসে দিন দিন পরিবহণের সংখ্যা বাড়ছে৷ কিন্তু তারপরও সেই শহরের বাতাস ইউরোপের অন্য অনেক শহরের চেয়ে ভাল৷ এর কারণ শহরকে ঘিরে রয়েছে বড় বন, বাগান আর পার্ক৷ রাজনীতিবিদরা সেগুলো টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর৷
ছবি: Fotolia/Aleksandr Volkov
আবর্জনা দিয়ে ঘর গরম
ইংল্যান্ডের ডিডকট শহরের বাসিন্দারা নিজেদের আবর্জনা দিয়ে গ্যাস উৎপাদন করে, সেটা দিয়ে ঘর গরম রাখে৷
ছবি: Getty Images
বৃষ্টির পানি ধরে রাখা
বার্লিনের কেন্দ্রে একটি অংশে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরে সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই পানি আশেপাশের ভবনগুলোর টয়লেটে ও অগ্নিনির্বাপক সংস্থায় ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: imago/Schöning
7 ছবি1 | 7
পরীক্ষার জন্য গবেষকরা চালকের সিটে এক ধরনের গতি মাপার সেন্সর লাগিয়েছেন৷ এই অ্যাকসিরেলোমিটার সিটের মধ্যে সব রকম ভাইব্রেশন বা কম্পন পরিমাপ করে৷ তারপর ল্যাবে তা বিশ্লেষণ করে কম্পনের চরিত্র বোঝা যায়৷ ভাইব্রেশন যত তীব্র হয়, বিকট শব্দের মাত্রাও তত বাড়ে৷ সেটাই কমানোর চেষ্টা চলছে৷ চালক গাড়ি চালানোর সময় অ্যাকসিরেলোমিটার ভাইব্রেশন রেকর্ড করে৷ ল্যাবে তা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কোন প্রক্রিয়ার সময় সবচেয়ে বেশি শব্দ হয়৷
এক স্বেচ্ছাসেবীকে সেই রেকর্ডিং শোনানো হয়৷ সে বলে দেয়, কোন শব্দ তার সবচেয়ে বেশি কানে লাগছে৷ শুধু ডেসিবেল নয়, শব্দ সম্পর্কে মানুষের অনুভূতির বিষয়টিই হলো আসল কথা৷ এই সব পরীক্ষার ফলে জানা যায়, কোথায়, কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে৷ পরীক্ষার ফলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যে ব্রাশ চলার সময় তীব্র শব্দ হয়৷ বাতাসের বেগের কারণে কম্পনের শব্দ তো রয়েছেই৷ আর আবর্জনার আধার লাউডস্পিকারের মতো কাজ করে, ফলে সব শব্দ মিলে আরও বিকট শব্দের সৃষ্টি করে৷ তবে সবচেয়ে বড় উৎস হলো বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ৷ এই সব বিরক্তিকর শব্দ বন্ধ করতে হলে এবং কম্পন কমাতে গবেষকদের ফ্যানের আশেপাশে বিশেষ ধরনের ইনসুলেশন মেটিরিয়াল লাগাতে হবে৷
এরকান আলটিনসয় ও ইয়ুর্গেন লান্ডগ্রাফ – দুই গবেষকই পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট৷ কী ভাবে শব্দ কমানো যায়, তা বোঝা গেছে৷ তাঁদের আশা, যদি ফ্যানের শব্দের কিছুটা কমানো যায়, চাপ নির্ধারিত কমিয়ে আনা যায়, তাহলে কাজ হবে৷ এই সব কম শব্দের গাড়ি নিয়ে ড্রেসডেন শহরে ভবিষ্যতে রাতেও সাফাই চালানো সম্ভব হবে৷ ফলে বিশাল সুবিধা হবে৷
কিন্তু ঘর পরিষ্কার করার ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দও কি কমানো সম্ভব? এমনই একটি সাধারণ ক্লিনার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ এক গৃহিণী বললেন, এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বড্ড বেশি শব্দ করে৷ জঘন্য, বিরক্তিকর, একটানা শিষের শব্দ মেজাজ খারাপ করে দেয়৷
সর্বাধুনিক ‘মা’ এবং অন্যান্য
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে প্রতিবছর ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো’ অনুষ্ঠিত হয়৷ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-পণ্যের দেখা মেলে সেখানে৷ ছবিঘরে দেখুন ২০১৪ সালের মেলার আকর্ষণ৷
ছবি: Reuters
‘মা’-এর দাম ১৯৯ ডলার!
ফ্রান্সের সেনস কোম্পানির ‘মাদার’ নামের এই ডিভাইসটি অনেকটা মায়ের মতোই ঘরের সবকিছুর খোঁজখবর রাখে৷ কফি শেষ হয়ে গেলো কিনা, সন্তান দাঁত ব্রাশ করেছে কিনা – এমন সব খবর রাখে মাদার৷ দাম ১৯৯ ডলার৷ এই লিংকে http://www.youtube.com/watch?v=Sw4yb0dNSbY গেলে এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মার্ট টুথব্রাশ
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট-কানেক্টেড টুথব্রাশ ‘কোলিব্রি’৷ আপনার ব্রাশ করা কেমন হলো, ঠিকভাবে হলো কিনা, দাঁত কতখানি পরিষ্কার হলো – এ সবই জানিয়ে দেবে এই স্মার্ট টুথব্রাশ৷ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো একসময় অনলাইনে এই টুথব্রাশের জন্য অর্ডার দেয়া যাবে৷ দাম সংস্করণভেদে ৯৯ থেকে ১৯৯ ডলার৷ কোলিব্রি সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন http://www.youtube.com/watch?v=oEDMzFYqW9k৷
ছবি: Robyn Beck/AFP/Getty Images
সাইকেলের নেভিগেশন সিস্টেম
এই ডিভাইসটি সাইকেলে লাগিয়ে নিলে সেটাই আপনাকে বলে দেবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে আপনাকে কোন দিক দিয়ে যেতে হবে৷ সেখানে পৌঁছতে আপনার কত সময় লাগবে৷ আর তাতে আপনার ক্যালরি কতখানি খরচ হবে৷ শোইন কোম্পানির এই ডিভাইসটির (http://www.youtube.com/watch?v=zwlFGoI_pRI) নাম ‘সাইকেলনা৷’
ছবি: Reuters
শরীরচর্চার তথ্য
‘তাও ওয়েলশেল’ (http://www.youtube.com/watch?v=E_kTVvpVpYg) ডিভাইসটি আপনি কতখানি দৌঁড়ালেন, আপনার হৃদস্পন্দন কত, সব আপনার স্মার্টফোনে জানিয়ে দেবে৷ এছাড়া ছোট্ট এই ডিভাইসটি দিয়ে আপিন যেকোনো সময়, যে কোনো অবস্থায় ‘আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ’ করতে পারবেন৷ চলতি বছরের শেষ ভাগে পণ্যটি কিনতে পাওয়া যাবে৷ দাম পড়বে ৩০০ ডলারের মতো৷
ছবি: Reuters
ম্যাজিক পার্কিং
শহর এলাকায় অল্প জায়গায় গাড়ি পার্কিং-এর কাজটি অনেকের জন্য জটিল৷ বিএমডাব্লিউ-র আইথ্রি মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িতে রয়েছে ‘পার্কিং অ্যাসিস্টেন্ট’, যেটা চালু করার পর চালক শুধু ব্রেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, আর গাড়ি নিজে থেকেই পার্কিং-এর জায়গায় চলে যাবে৷ এই লিংকের (http://www.youtube.com/watch?v=8Vj4xLCxwhw) ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হওয়া যাবে৷
ছবি: Reuters
আইফোন দিয়ে রান্না নিয়ন্ত্রণ
‘স্লো কুকার’৷ যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে যারা থাকেন তারা হয়ত এই ধরনের কুকারের (http://en.wikipedia.org/wiki/Slow_cooker) সঙ্গে পরিচিত৷ মার্কিন একটি কোম্পানি ‘ক্রোক-পট উইমো স্মার্ট স্লো কুকার’ (http://www.youtube.com/watch?v=T43NcPYMVZE) বের করেছে, যেটা আইফোনের জন্য তৈরি একটি অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷
ছবি: Reuters
বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভয়?
অন্তত শৈলেন্দ্র সুমনের সেটা নেই৷ কারণ তিনি এমন একটি এলইডি-বাল্ব উদ্ভাবন করেছেন যার মধ্যে ব্যাটারি রয়েছে৷ এর ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ব্যাটারি থাকার কারণে বাতিটি চার ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলতে পারবে৷
ছবি: Reuters
হাই-রেজুলিউশন ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি
এই টিভিগুলোর রেজুলিউশন এইচডি টিভির চেয়ে প্রায় চারগুন বেশি৷ তবে দুঃখের ব্যাপার, এ ধরণের সর্বাধুনিক টিভিতে দেখার মতো কোনো সিনেমা নেই৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
এরকান আলটিনসয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দ কমাতে চান৷ সাউন্ড-প্রুফ একটি ঘরে তিনি এক সহকর্মীকে নিয়ে প্রথমটির সঙ্গে একটি অপটিমাইজড মডেলের শব্দের তুলনা করছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি এবার দুটি ক্লিনারই চালু করবো৷ প্রথমে একটার শব্দ শুনবো, তারপর অন্যটার৷ কোনটা বেশি বিরক্তিকর তা সহজেই বলা যায়৷ কে শুনছে, তাতে কিছুই এসে যায় না৷ সবার কাছেই একটা বিরক্তিকর, অন্যটা অনেক অনেক শান্ত৷'' অপটিমাইজড মডেলের তুলনায় অন্যটি অনেক বেশি শব্দ করে৷ এই পর্যায়ের আওয়াজের মুখে মানুষের কান অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ মাত্রায় বেশ তফাত রয়েছে৷ দুটির মাত্রা এক করে দিলে দেখা যাক কী হয়৷
কোনো ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দ কী ভাবে বদলানো যায়, খেলনার এক ঘড়ি দিয়ে পরীক্ষা করলেই তা বোঝা যাবে৷ যেখানে মোটর থাকে, সেখানে ঘড়িটি চালালে মনে হয় যেন লাউডস্পিকার চলছে৷ শব্দের তীব্রতা কমাতে ইনসুলেশন নিয়ে কাজ চলছে৷ চেম্বারে পশম জাতীয় উপাদান বসিয়ে তার উপর ঢাকনা দিলে বাইরে প্রায় কোনো শব্দ শোনা যায় না৷
এই নীতি প্রয়োগ করেই এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দ কমানো হচ্ছে৷ বিভিন্ন জায়গায় পশম জাতীয় উপাদানের স্তর বসিয়ে সত্যি ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ শব্দের মাত্রা অপটিমাইজড মডেলটির মতোই কমে গেছে৷