ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান ভ্যাটিকানে যে আর্কাইভ আছে, তার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ নামের সঙ্গে থাকা ‘গোপন' শব্দটি মুছে দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এতদিন ‘সিক্রেট আর্কাইভ' নামে আর্কাইভটি পরিচিত ছিল৷ এখন থেকে তার নাম হবে ‘ভ্যাটিকান অ্যাপোস্টলিক আর্কাইভ'৷
পোপ ফ্রান্সিস বলছেন, নামের সঙ্গে ‘সিক্রেট' অর্থাৎ গোপন শব্দটি থাকার কারণে মানুষের মধ্যে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছিল৷
সতের শতকের শুরুতে তৎকালীন পোপ পল পঞ্চম আর্কাইভটি চালু করেছিলেন৷ সেখানে অষ্টম শতক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ভ্যাটিকান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ও নথি জমা আছে৷
১৮৮১ সালে পণ্ডিত ব্যক্তিদের জন্য এসব নথি দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়৷ তবে তাঁরা অষ্টম শতক থেকে শুরু করে পোপ পিয়স একাদশের সময়কাল (১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নথিপত্র দেখতে পারেন৷
পোপ ফ্রান্সিসের পাঁচ বছর
ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ করলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ এ সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন, কখনো কখনো কোনো কোনো মহলের সমালোচনারও শিকার হয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Agentur Andina/J. C. Guzmán
সেই সন্ধ্যা
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন হর্খে মারিও ব্যার্গোগলিও৷ সেন্ট পিটার্স স্কয়্যারে সেদিন ছিল লাখো ভক্তের ভিড়৷ পোপ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেয়া ভাষণ শুরু করেছিলেন দু’টি মাত্র শব্দ দিয়ে, ‘বুয়োনা সেরা ’, অর্থাৎ ‘শুভ সন্ধ্যা!’
ছবি: Reuters
সংস্কার কমিটি ‘কে নাইন’
পোপ হয়েই ন’জন কার্ডিনালকে নিয়ে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করেন ভ্যাটিকান প্রধান৷ চার্চের সংগঠন এবং নির্দেশনায় সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L'Osservatore Romano
দুর্বলের পাশে
আফ্রিকা থেকে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে তখন অনেকের প্রাণ যাচ্ছিল৷ পোপ বলেছিলেন বিষয়টি তাঁর ‘হৃদয়ে কাঁটা’ হয়ে বিঁধে৷ ২০১৩ সালে ইটালির লাম্পেডুসা সফরে গিয়েছিলেন পোপ৷ শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী সেদিন আশা করেছিলেন, পোপের আগমন উপলক্ষ্যে হয়ত তাঁদের ইটালিতে থাকার অনুমতি দেবে সরকার৷ সে আশা অবশ্য পূরণ হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিনম্রতার প্রতীক
ছবির এই গাড়িটি ৩০ বছরের পুরোনো রেনল্ট বা রেনঁ মডেলের৷ গাড়িটি তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন ভেরোনার এক যাজক৷ পোপ ফ্রান্সিস নিজে চালাতে চেয়েছিলেন গাড়িটি৷ কিন্তু নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলে সেই অনুমতি তাঁকে দেয়া হয়নি৷
ছবি: Reuters
সেলিব্রিটি ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিসের জনপ্রিয়তা বিশ্বের অনেক সেলিব্রিটির মনেই হিংসার জন্ম দিতে পারে৷ খ্রিষ্টান নন, এমন কোটি কোটি মানুষও তাঁকে পছন্দ করেন৷ তাই তো ইতিহাসের প্রথম পোপ হিসেবে রোলিংস্টোন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa/ROLLING STONE
সেতুবন্ধন
পোপ ফ্রান্সিস সবসময় সংঘাত, হানাহানির বিরুদ্ধে৷ তাই কখনো মধ্য আফ্রিকা এবং কলম্বোর বিবদমান দুই পক্ষ, কখনো যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা, কখনো বা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগে দেখা গেছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Agentur Andina/J. C. Guzmán
সব ধর্মে বন্ধুত্ব
সব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বন্ধুত্বের মনোভাব উৎসাহিত করতে দৃষ্টান্তমূলক কিছু কাজ করেছেন তিনি৷ জেরুসালেমে গিয়ে যেমন প্রার্থনা করেছেন, একইসঙ্গে গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে আসতেও ভোলেননি৷ মিশরে গিয়েও কপটিক চার্চের প্রধান এবং গ্র্যান্ড ইমাম দু’জনের সঙ্গেই দেখা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Roque
জনতার পোপ
গত জানুয়ারিতে চিলি সফরে গিয়েছিলেন পোপ৷ রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে বিমানে উত্তরের শহর ইকিকে যাচছেন৷ বিমানের দুই ক্রু এসে তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক পর্যায়ে জানালেন যে তাঁরা পরস্পরকে বিয়ে করবেন৷ পোপ তো বেজায় খুশি৷ ওই বিমানে তক্ষুণি দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে দিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Osservatore Romano
সমালোচনা
পোপ ফ্রান্সিসের সমালোচনাও নেহাত কম নয়৷ ধর্মযাজকদের একটি অংশ তাঁকে খুব কট্টর মনে করেন৷ ওপরের পোস্টারে গির্জার ভিতরে কারো প্রতি ন্যূনতম ক্ষমা প্রদর্শন না করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে৷ অনেকে আবার মনে করেন, তিনি অতিরিক্তি ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁর মানবতাবোধও অতিরিক্ত সাহসী৷ কেউ কেউ বলেন, পোপ ফ্রান্সিস খুব বেশি প্রচারমুখী, তাই যেভাবে যেখানে গেলে প্রচার জুটবে সেখানে ঠিক সেভাবেই হাজির হন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press
9 ছবি1 | 9
এরপর পোপ পিয়স দ্বাদশ পোপের দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ তিনি মারা যান ১৯৫৮ সালে৷
প্রচলিত নিয়মে একজন পোপের দায়িত্ব শেষ হওয়ার ৭০ বছর পর তাঁর নথি উন্মুক্ত করা হয়৷ সে হিসেবে পোপ পিয়স দ্বাদশের সময়কার কাগজপত্র ২০২৮ সালে দেখতে পাওয়ার কথা৷ কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস সেই সময়টা এগিয়ে এনেছেন৷ আগামী বছরের ২ মার্চ থেকে পণ্ডিতরা এসব নথি দেখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
পোপ পিয়স দ্বাদশ এমন সময়ে পোপ ছিলেন যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল৷ সেই সময় তিনি হলোকস্ট নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার ছিলেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেন৷ পোপ ফ্রান্সিস আশা করছেন, উন্মুক্ত হওয়া নথি পোপ পিয়স দ্বাদশকে সেই অভিযোগ থেকে উতরে যেতে সহায়তা করবে৷
শরণার্থীর পায়ে চুমু খেলেন পোপ
ইস্টারের ঐতিহ্য আর ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে এক শরণার্থী শিবিরে হাজির হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ সেখানে গিয়ে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বলতে গেলে সব ধর্মাবলম্বী শরণার্থীদেরই পা ধুয়ে পায়ে চুমুও খেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
ধর্ম এবং মানবপ্রেম
সব ধর্মেই আছে মানুষকে ভালোবাসার কথা৷ কিন্তু ধর্মানুষ্ঠানে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সম্মান জানানোর নজির খুব বিরল৷ বৃহস্পতিবার বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ গুডফ্রাইডের ঠিক আগের দিন কিছুটা সময় তিনি কাটাতে চেয়েছিলেন শরণার্থীদের মাঝে৷ ইটালির রোম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এক শিবিরে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Medichini
‘শুধু নিজের ধর্মের মানুষকে নয়, সবাইকে সম্মান করুন’
কাস্টেলনুয়োভো ডি পোর্টো শরণার্থী শিবিরে গিয়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরু সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষের মধ্যে ঐক্যের কথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, মুসলমান, হিন্দু, ক্যাথলিক, কপ্ট, এভাঞ্জেলিকাল – সবাই ভাই ভাই৷ আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার শিশু৷ এই পৃথিববীতে আমরা সবাই মিলেমিশে, শান্তিতে থাকতে চাই৷’’ শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সবাইকে অন্য ধর্মের মানুষদের সম্মান করার আহ্বানও জানিয়েছেন পোপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Guerrero
শরণার্থীদের পা ধুয়ে চুমু
ধার্মিকদের কাছে ধর্মগুরুরা সব সময়ই সম্মানিত৷ তবে ইস্টারে ধর্মগুরুদেরও অন্যদের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হয়৷ এই উৎসবে সাধারণ মানুষের পা ধুয়ে দেন ধর্মগুরুরা৷ বৃহস্পতিবার পা ধুয়ে পায়ে চুমু খেয়ে ১১ জন শরণার্থী এবং তাঁদের মাধ্যমে ইউরোপে আশ্রিত সব শরণার্থীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানান পোপ ফ্রান্সিস৷
ছবি: Reuters
‘আজ আমি ওবামার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ’
মালি থেকে আসা এক মুসলিম তরুণেরও পা ধুয়ে দিয়েছেন পোপ৷ চুমুও খেয়েছেন পায়ে৷ কয়েকদিন ধরেই এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন ওই তরুণ৷ পোপ পা ধুয়ে দেয়ায় তাঁর মনে হয়েছে, ‘‘আমি যেন (বারাক) ওবামার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে ভালো মানুষ পোপ আমার পা ধুয়ে দিচ্ছেন – ভাবা যায়! ’’ ওপরের ছবিতে পোপের সঙ্গে এক শরণার্থীর সেলফি তোলার দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/Osservatore Romano
ভালোবাসার বিপরীতে ঘৃণা আর হত্যা
এ সপ্তাহেই ব্রাসেলসে বোমা হামলায় মারা গেছেন ৩১ জন, আহত হয়েছেন অনেকে৷ শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মীতা জানাতে গিয়ে ব্রাসেলসের হতাহতদেরও ভোলেননি পোপ ফ্রান্সিস৷ তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাতে গিয়ে পোপ বলেন, ‘‘মাত্র তিন দিন আগে ইউরোপের এক শহরে যুদ্ধ আর ধ্বংসের নমুনাও দেখলাম৷ যারা তা করেছে তারা শান্তিতে থাকতে চায় না৷’’