ভ্যাটিকানের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং পোপের শীর্ষ উপদেষ্টা কার্ডিনাল জর্জ পেল শিশু যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন৷ নব্বইয়ের দশকে দুই শিশুকে যৌন হয়রানির অপরাধে তাঁর সর্বোচ্চ ৫০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
এই তথ্য জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম৷ কার্ডিনাল জর্জ পেল ভ্যাটিকানের অর্থমন্ত্রী এবং পোপ ফ্রান্সিসের শীর্ষ উপদেষ্টা ছিলেন৷ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার এক আদালত জানায়, দুই শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি৷ নব্বইয়ের দশকে মেলবোর্নের সেন্ট প্যাট্রিক্স ক্যাথেড্রালে ১৩ বছরের দুই কিশোরকে যৌন হয়রানি করেছিলেন বলে জানিয়েছে আদালত৷
গত বছর ডিসেম্বরের ১১ তারিখ ১২ সদস্যের জুরি বোর্ড এই রায় দেন৷ কিন্তু বিচারক এক নির্দেশ জারি করায় গত বছরের মে মাস থেকে চলা এই বিচারপ্রক্রিয়ার কোনো সংবাদ প্রকাশ করা যায়নি৷ কিন্তু চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এই নির্দেশ উঠিয়ে নেয়া হয়, যখন আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেন, দ্বিতীয়বার এই মামলার শুনানির প্রয়োজন নেই৷
পেলের বয়স এখন ৭৭, যখন তিনি এই অপরাধ করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৫৫৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঐ কিশোরদের ‘ওরাল সেক্স' করতে বাধ্য করেছিলেন৷ এছাড়া স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন৷ এই অভিযোগে কার্ডিনাল পেলের সর্বোচ্চ ৫০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে৷ তাঁকে কতদিনের কারাদণ্ড দেয়া হবে, সে বিষয়ে শুনানি শুরু হবে বুধবার থেকে৷
যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে ৭ চলচ্চিত্র
গির্জায় শিশুদের ওপর যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে জার্মান ক্যাথলিক চার্চের নতুন গবেষণায় কয়েক দশকের অপকর্ম বেরিয়ে এসেছে৷ অনেক চলচ্চিত্রেই কলঙ্কের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ সে রকম চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘স্পটলাইট’ (২০১৬)
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ক্যাথলিক চার্চগুলোতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো তুলে আনছিলেন ‘বোস্টন গ্লোব’-এর প্রতিবেদকরা৷ তাদের বের করা সেই সত্য কাহিনি অবলম্বনেই এই জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন টম ম্যাককারথি৷ অস্কারের ছয়টি বিভাগে মনোনীত হয় ‘স্পটলাইট’ এবং সেরা পিকচার ও চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে৷ অপরদিকে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ২০০৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কায় পায়৷
বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরা চলচ্চিত্র৷ চিলির পরিচালক পাবলো লারাইন নির্মিত এই চলচ্চিত্রে একটি নির্জন বাড়িতে বসবাসরত প্রাক্তন চার যাজকের শিশুদের যৌন নিপীড়নসহ ভয়ানক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেখা৷ উচ্চ পর্যায়ের যাজক, যারা বিচার ও শাস্তি এড়াতে লুকিয়ে থাকতেন তাদের থেকে এই চলচ্চিত্র নির্মাণের রসদ পেয়েছিলেন পরিচালক৷
ছবি: Fabula
‘ফেরফেহলুং’ (২০১৫)
গ্যার্ড শ্নাইডার নির্মিত জার্মান চলচ্চিত্র ফেরফেহলুংয়ে (অসদাচরণ) একটি যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারি নিয়ে তিন যাজক বন্ধুর মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েন তুলে ধরা হয়েছে৷ তাদের একজনের বিরুদ্ধে কিশোরদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে এবং অপর দুজন তাদের পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ তারা যেভাবে এই সত্যের মোকাবেলা করে তাতে শুধু তাদের সম্পর্কই নয়, চার্চে তাদের ক্যারিয়ারের উপরও প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘ফিলোমেনা’ (২০১৩)
স্টিফেন ফ্রেয়ার্স এই চলচ্চিত্রে চার্চের আরেক প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানির চিত্র উন্মুক্ত করেন৷ যেসব নারীর কাছ থেকে বিবাহ বহির্ভূতভাবে জন্ম নেওয়া সন্তান কেড়ে নেওয়া হয় তাদের বেদনা তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷ ফিলোমেনা লি নামের এমন দুর্ভাগা এক নারীর কাহিনি নিয়ে তৈরি করা হয় এই চলচ্চিত্র৷ ফিলোমিনার ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এবং এক সম্পদশালী অ্যামেরিকানের কাছে বিক্রি করা হয়৷
ছবি: Imago/Zuma Press
‘ব্যাড এডুকেশন’ (২০০৪)
হত্যা রহস্য ঘিরে এই চলচ্চিত্র তৈরি হলেও এখানে বোর্ডিং স্কুলে এক কিশোরের একজন ক্যাথলিক যাজকের দ্বারা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি উঠে আসে৷ নিপীড়িত ওই শিশুকে পরে দেখা যায় হিজড়ার ভূমিকায়, যিনি নিপীড়ক ফাদারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন৷
ছবি: Imago/United Archives
‘দ্য ম্যাগডালেনে সিস্টারস’ (২০০২)
ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান ম্যাগডানেলে আশ্রয় কেন্দ্র, ম্যাগডালেনে লন্ড্রিজ নামে পরিচিত, সেটি ‘পতিত’ নারীদের সংশোধনাগার হিসেবে ব্যবহৃত হত৷ পিটার মুলানের ২০০২ সালের এই চলচ্চিত্র ওই রকম একটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘিরে, পরিবার থেকে পাঠানো চার তরুণীর প্রতি সিস্টারদের নিষ্ঠুরতা ও হয়রানির ঘটনা এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ এই ধরনের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/Impress
‘প্রাইমাল ফিয়ার’ (১৯৯৬)
একজন প্রভাবশালী আর্চবিশপকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন ১৯ বছরের এক বালক৷ এর বিচার প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে, সবার সম্মানের চোখে থাকা ওই আর্চবিশপের নিপীড়নের স্বভাব ছিল এবং তিনি ছেলেদের যৌন সম্পর্কে বাধ্য করতেন৷
ছবি: Imago/United Archives
7 ছবি1 | 7
রায়ের পর পেল আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি৷ তবে তাঁর আইনজীবীদের দাবি, তিনি নির্দোষ এবং তাঁরা এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন৷
সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ক্যাথলিক কর্মকর্তা অভিযুক্ত
বিচারপ্রক্রিয়ার পুরোটা সময় পেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন৷ আদালতে জুরিদের একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে ২০১৬ সালে পেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল রোমের পুলিশ, সেখানেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন৷ তবে এই ভিডিওর পাশাপাশি যৌন হয়রানির শিকার দুই কিশোরের মধ্যে একজনের ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে তিনি তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন৷
ঐ ঘটনার পর যৌন হয়রানির শিকার ঐ কিশোর দীর্ঘদিন ধরে লজ্জা, ভয় আর অবসাদগ্রস্ত ছিলেন৷ দ্বিতীয় কিশোর ২০১৪ সালে অতিরিক্ত হেরোইন সেবনে মারা যান৷
ক্যাথলিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত যারা অভিযুক্ত, তাঁদের মধ্যে পেল বয়ঃজ্যেষ্ঠ৷ তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেন৷ গত বছরের ডিসেম্বরে ভ্যাটিকান ঘোষণা করে যে, পোপের শীর্ষ উপদেষ্টার পদ থেকে পেলকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, তবে এর কোনো কারণ উল্লেখ করেনি তারা৷