ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নিপীড়ন বিষয়ক ঐতিহাসিক সম্মেলনের সূচনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এই সম্মেলন শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/V. Pinto
বিজ্ঞাপন
রবিবার পর্যন্ত চলবে সম্মেলন৷ ‘প্রোটেকশন অফ মাইনরস ইন দ্য চার্চ' শীর্ষক এই সম্মেলনে নানা কর্মশালায়, প্রশিক্ষণ ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ পোপ আশা প্রকাশ করেছেন, যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের, বিশেষ করে শিশু নিপীড়নের যে অভিযোগ রয়েছে, সেটির একটি সমাধান সম্ভব হবে এই সম্মেলনে৷
সারা বিশ্ব থেকে ১৯০ জন গির্জা প্রধান, ১১৪ জন বিশপ, ১০ নারী প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এই সম্মেলনে৷ ভ্যাটিকান থেকে জানানো হয়েছে, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা- এই তিন থিমকে সামনে রেখে সম্মেলন সাজানো হয়েছে৷ সম্মেলনের প্রথম তিনদিন একেকটি থিমের ওপর আলোকপাত করা হবে৷ শেষদিন এই তিন থিমকে সম্মিলিত করে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ হবে৷
যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে ৭ চলচ্চিত্র
গির্জায় শিশুদের ওপর যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে জার্মান ক্যাথলিক চার্চের নতুন গবেষণায় কয়েক দশকের অপকর্ম বেরিয়ে এসেছে৷ অনেক চলচ্চিত্রেই কলঙ্কের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ সে রকম চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘স্পটলাইট’ (২০১৬)
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ক্যাথলিক চার্চগুলোতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো তুলে আনছিলেন ‘বোস্টন গ্লোব’-এর প্রতিবেদকরা৷ তাদের বের করা সেই সত্য কাহিনি অবলম্বনেই এই জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন টম ম্যাককারথি৷ অস্কারের ছয়টি বিভাগে মনোনীত হয় ‘স্পটলাইট’ এবং সেরা পিকচার ও চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে৷ অপরদিকে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ২০০৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কায় পায়৷
বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরা চলচ্চিত্র৷ চিলির পরিচালক পাবলো লারাইন নির্মিত এই চলচ্চিত্রে একটি নির্জন বাড়িতে বসবাসরত প্রাক্তন চার যাজকের শিশুদের যৌন নিপীড়নসহ ভয়ানক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেখা৷ উচ্চ পর্যায়ের যাজক, যারা বিচার ও শাস্তি এড়াতে লুকিয়ে থাকতেন তাদের থেকে এই চলচ্চিত্র নির্মাণের রসদ পেয়েছিলেন পরিচালক৷
ছবি: Fabula
‘ফেরফেহলুং’ (২০১৫)
গ্যার্ড শ্নাইডার নির্মিত জার্মান চলচ্চিত্র ফেরফেহলুংয়ে (অসদাচরণ) একটি যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারি নিয়ে তিন যাজক বন্ধুর মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েন তুলে ধরা হয়েছে৷ তাদের একজনের বিরুদ্ধে কিশোরদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে এবং অপর দুজন তাদের পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ তারা যেভাবে এই সত্যের মোকাবেলা করে তাতে শুধু তাদের সম্পর্কই নয়, চার্চে তাদের ক্যারিয়ারের উপরও প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘ফিলোমেনা’ (২০১৩)
স্টিফেন ফ্রেয়ার্স এই চলচ্চিত্রে চার্চের আরেক প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানির চিত্র উন্মুক্ত করেন৷ যেসব নারীর কাছ থেকে বিবাহ বহির্ভূতভাবে জন্ম নেওয়া সন্তান কেড়ে নেওয়া হয় তাদের বেদনা তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷ ফিলোমেনা লি নামের এমন দুর্ভাগা এক নারীর কাহিনি নিয়ে তৈরি করা হয় এই চলচ্চিত্র৷ ফিলোমিনার ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এবং এক সম্পদশালী অ্যামেরিকানের কাছে বিক্রি করা হয়৷
ছবি: Imago/Zuma Press
‘ব্যাড এডুকেশন’ (২০০৪)
হত্যা রহস্য ঘিরে এই চলচ্চিত্র তৈরি হলেও এখানে বোর্ডিং স্কুলে এক কিশোরের একজন ক্যাথলিক যাজকের দ্বারা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি উঠে আসে৷ নিপীড়িত ওই শিশুকে পরে দেখা যায় হিজড়ার ভূমিকায়, যিনি নিপীড়ক ফাদারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন৷
ছবি: Imago/United Archives
‘দ্য ম্যাগডালেনে সিস্টারস’ (২০০২)
ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান ম্যাগডানেলে আশ্রয় কেন্দ্র, ম্যাগডালেনে লন্ড্রিজ নামে পরিচিত, সেটি ‘পতিত’ নারীদের সংশোধনাগার হিসেবে ব্যবহৃত হত৷ পিটার মুলানের ২০০২ সালের এই চলচ্চিত্র ওই রকম একটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘিরে, পরিবার থেকে পাঠানো চার তরুণীর প্রতি সিস্টারদের নিষ্ঠুরতা ও হয়রানির ঘটনা এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ এই ধরনের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/Impress
‘প্রাইমাল ফিয়ার’ (১৯৯৬)
একজন প্রভাবশালী আর্চবিশপকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন ১৯ বছরের এক বালক৷ এর বিচার প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে, সবার সম্মানের চোখে থাকা ওই আর্চবিশপের নিপীড়নের স্বভাব ছিল এবং তিনি ছেলেদের যৌন সম্পর্কে বাধ্য করতেন৷
ছবি: Imago/United Archives
7 ছবি1 | 7
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উন্মুক্ত আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নেবেন৷ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যৌন হেনস্থার শিকারদের বয়ান শোনানোর কয়েকটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে নিপীড়িতরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন এবং যাজকরা সেটি শুনে ভবিষ্যতে কীভাবে এটি বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে নীতিমালার প্রস্তাবনা দেবেন৷
ভ্যাটিকান থেকে আরো বলা হয়েছে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য গির্জার যৌন নিপীড়ন রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করা৷ বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার গির্জা ও বিশপদের প্রতি অধিক মনোযোগ দেওয়া হবে এই সম্মেলনে৷ কারণ তাঁরা দাবি করে আসছেন যে, চার্চে এ ধরনের নিপীড়নের কোনো ঘটনাই ঘটে না৷ অথচ অভিযোগ রয়েছে প্রচুর৷
এ সম্মেলন প্রসঙ্গে পোপ বলেন, শিশুদেরকে যৌন হেনস্থা করার যাজকদের অনৈতিক যে চর্চা চলমান, তা থেকে রোমান ক্যাথলিক গির্জাকে মুক্ত করে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে৷
ইতোমধ্যে গির্জায় যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া পাঁচজন তাদের নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন৷ তাদের সেই বক্তব্যের ভিডিও দেখানোও হয়েছে ভ্যাটিকানের সম্মেলনে৷
গির্জার নিপীড়নকে স্বীকার করে নিয়ে এর সমাধানের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলন নজিরবিহীন আখ্যা পেয়েছে৷ বিশ্ব নেতারা পোপ ফ্রান্সিসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷
এর আগেও পোপ ফ্রান্সিস মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে গির্জায় যৌন নিপীড়নের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেন৷ এবং এ ধরনের ঘটনা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন৷