একশ নবজাতক শিশুকে কেক কেটে, জামা-কাপড় আর উপহার দিয়ে পৃথিবীতে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিপিন্স৷ একশ শিশুর মধ্যে একজনের নাম জেনালিন সেন্টিনো৷ সামান্য এক ভ্যানচালকের মেয়ে৷ জন্মদিনে রীতিমতো রাজকন্যার মর্যাদা পেয়েছে সে!
বিজ্ঞাপন
রোববার ফিলিপিন্সের জনসংখ্যা ১০ কোটি ছুঁয়েছে৷ দিনটি উদযাপনের জন্য নেয়া হয়েছিল বিশেষ প্রস্তুতি৷ সরকারি হাসপাতালগুলোর দিকে ছিল বিশেষ নজর৷ উদ্দেশ্য একটাই- সমস্যায় জর্জরিত দেশটির একশ মিলিয়ন, অর্থাৎ দশ কোটিতম নাগরিককে চিহ্নিত করে তাকে স্বাগত জানানো৷ সারা দেশে একই সময়ে অনেক শিশুই জন্ম নিতে পারে৷ তাই একজনকে চিহ্নিত করা মুশকিল হতে পারে ভেবে একশজনকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল৷ সে অনুযায়ী রোববার একশ নবজাতককে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরণ করে নিয়েছে ফিলিপিন্স৷ সেখানে জেনালিন সেন্টিনো ছিল মধ্যমণি৷
শিশুর ক্যামেরায় নিজের জগত
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাইয়েলিচা এলাকার শিশুরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেসবের ছবি তোলে৷ ক্যামেরা হাতে আশেপাশের ছবি তুলে বেড়ায় ওরা৷ কাইয়েলিচায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস, তাঁদের প্রায় সবাই খুব গরিব৷
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
একদিনের রিপোর্টার
‘‘জীবনে সত্যি যা ভালোবাসো তা দেখাও’’ – ঠিক এই কথাটাই বলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছয় বছর বয়সি এই শিশুদের৷ এই প্রথম ক্যামেরা হাতে নিয়েছে ওরা৷ কয়েক ঘণ্টা ক্যামেরা চালানো শেখার পর নেমে পড়েছে সেরা ছবি তোলার কাজে৷
ছবি: Karin Banduhn
‘নতুন বাড়ি’
কোসা ভাষায় কাইয়েলিচা মানে ‘নতুন বাড়ি’৷ সরকার চায় এলাকায় নতুন ঘর-বাড়ি হোক৷ কিন্তু লিখতার পরিবারের মতো অনেকেরই কাঠের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠার সাধ্য নেই৷
ছবি: Liktha/Karin Banduhn
ভরপুর বাড়ি
সিফোকাজির পরিবারে এক ছাদের নীচে বাস করে তিন প্রজন্ম৷ কাইয়েলিচার বেশির ভাগ পরিবারের মতো এ পরিবারেরও মূল উপার্জনকারী বাবা, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্য বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মা৷ মা-বাবা যখন কাজে ব্যস্ত, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন দাদা-দাদি৷
ছবি: Siphokazi/Karin Banduhn
অমূল্য সম্পদ
খেলনা খুব প্রিয় মাহলের৷ বেশিরভাগ খেলনাই তার স্কুলে আসে জার্মানির হামবুর্গ শহরের শুলকাম্প প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে৷ কাইয়েলিচা সংস্থা ওদের স্কুলের পাশে আছে সবসময়৷
ছবি: Mahle/Karin Banduhn
ছেলেদের খেলনা
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি একটা গাড়ি থাকলে কার না ভালো লাগে! জায়গা নেই বলে কাইয়েলিচার বাচ্চারা বাড়িতে খুব একটা খেলতে পারে না৷ খুদে ফটোগ্রাফার ইভিভসে তাই খালি ক্যান দিয়েই বানিয়ে নিয়েছে রেস ট্র্যাক৷
ছবি: Ivivse/Karin Banduhn
ক্ষুধা নিবারণ
লুলুথো স্কুল থেকে ফেরে ভীষণ ক্ষুধা নিয়ে৷ ঘরে সবসময় খাওয়ার মতো কিছু না কিছু থাকে বলে রক্ষা৷ কাইয়েলিচার অধিকাংশ পরিবার খাবারের পেছনে প্রতিদিন খরচ করে ২২ রান্ড, অর্থাৎ ১.৭০ ইউরোর মতো৷
ছবি: Lulutho/Karin Banduhn
ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন জীবন
স্থানীয়দের অধিকাংশই কোসা জনগোষ্ঠীর৷ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁদের ভাষা এক৷ তাঁদের কাছে ঐতিহ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সাধারণত মেয়েরা রান্না করে আর ছেলেরা কাজ করতে যায় বাইরে৷
ছবি: Yandise/Karin Banduhn
কাইয়েলিচার শিশুরা
ফটোসাংবাদিক এলেথুর জন্য বন্ধুরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সুখি মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এটা দরকারও, কেননা শিশুদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যৎ!
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
8 ছবি1 | 8
রাত ১২টা ৬ মিনিটে ম্যানিলার হোসে ফাবেলা হাসপাতালে জন্ম নেয় এই কন্যাশিশু৷ অন্য কোনো দিনে জীবনের প্রথম সূর্যোদয় দেখলে জেনালিনের খোঁজ কেউ নিতো কিনা সন্দেহ৷ কিন্তু রোববার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কেক কেটে জন্মের প্রথম মুহূর্ত উদযাপন করা হয় তার৷ ভ্যানচালক বাবা ক্লেমেন্তে সেন্টিনো আর মা ড্যালিন ক্যাবিগায়ানকে মিষ্টিমুখ করিয়ে হাতে তুলে দেয়া হয় ফুলের তোড়া, পোশাক-আশাক আর চমৎকার কিছু উপহার৷
অথচ জেনালিনের পৃথিবীতে আগমন কিন্তু খানিকটা অপ্রত্যাশিত৷ ক্লেমেন্তে জানিয়েছেন, ড্যালিনের সঙ্গে তাঁর এখনো বিয়ে হয়নি, সন্তান নেয়ার ইচ্ছেও তাঁদের ছিল না৷ এখন অবশ্য বাবা হিসেবে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন, ভাবছেন বিয়েটাও সেরে নেবেন শিগগির৷
চ্যালেঞ্জ
জনসংখ্যা দশ কোটি হয়ে যাওয়াকে একই সাথে সুখবর এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ফিলিপিন্স৷ নবজাতক শিশুদের বরণ অনুষ্ঠানে তাই জনসংখ্যা কমিশনের পরিচালক হুয়ান অ্যান্টনিও পেরেজ বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য একাধারে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ৷ চাইলে আমরা (জনসংখ্যা বৃদ্ধির) সুবিধা আদায় করতে পারি৷ সেই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে কাজ শুরু করেছি৷''
ফিলিপিন্সে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় অন্তরায় জনমনে রোমান ক্যাথলিক চার্চগুলোর প্রভাব৷ ধর্মযাজকরা শুরু থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে আসছেন৷ গত এপ্রিলেই কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত একটি আইন কার্যকর করতে পেরেছে সরকার৷ ফিলিপিন্সের নারীরা গড়ে তিনটি করে সন্তান জন্ম দেন৷ সরকারের লক্ষ্য, ‘দুই সন্তান' নীতি কার্যকর করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে কিছুটা লাগাম টানা৷