ভ্রমণের স্মৃতি বেশিদিন স্থায়ী হয় না৷ কিন্তু সঙ্গে আনা স্যুভেনিয়ার দেখলে অনেক স্মৃতি আবার জেগে ওঠে৷ জার্মানির এক শিল্পের ইতিহাসবিদ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ভ্রমণ করে এমন সব বস্তু সংগ্রহ করে তাঁর দোকানেও বিক্রি করেন৷
বিজ্ঞাপন
কিয়েভ শহরের এক ফ্লি মার্কেটে কাটারিনা কপেনভালনার ইউক্রেনের চিরায়ত স্যুভেনিয়রের খোঁজ করেন৷ সেইসঙ্গে ঐতিহ্যগত এমব্রয়ডারি করা পোশাকও দেখতে পান৷ তিনি কিছু নমুনা দেখিয়ে বলেন, ‘‘এটা ছেলেদের জামা৷ অশুভ আত্মা দূরে রাখতে শরীর দেখা যায়, এমন অংশে এমব্রয়ডারি করা হয়েছে৷ এগুলিকে এখানে ভিশিভাংকা বলা হয়৷’’
কাটারিনা প্রায় ২০ বছর ধরে এ সবের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ এর মধ্যে তিনি ৫০টিরও বেশি দেশ ঘুরেছেন৷ যেমন উজবেকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চল ও চীন৷ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভ্রমণের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সখ্যতা, তাদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আমার জন্য জরুরি৷ তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমি জানতে চাই, সেই সুযোগ পেতে চাই৷ আমি এমন সব দেশে যেতে চাই, যেখানে আধুনিকতা এখনো সবকিছু গ্রাস করে নেয় নি৷’’
যারা এমন বিশ্বভ্রমণ করতে পারেন না, তাদের জন্য কাটারিনা বার্লিনে তাঁর দোকানে বিভিন্ন দেশের সামগ্রী রেখেছেন৷ তিনি নিজেই সে সব সংগ্রহ করেন৷ বিশেষ করে কাপড় তাঁর পছন্দের জিনিস৷
সেরা স্যুভেনিয়য়ারগুলি নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন৷ নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাটারিনা কপেনভালনার বলেন, ‘‘আমি আসলে সবসময়ে এমন জায়গার খোঁজ করি, যেখানে সাধারণ মানুষের থাকার সামর্থ্য রয়েছে৷ পর্যটকদের জন্য আমার লোককথার প্রয়োজন নেই৷ সব মানুষ পরে, এমন ঐতিহ্যগত পোশাক আমার পছন্দ৷ অনেক এলাকায় মানুষ দৈনন্দিন জীবনেও এমন পোশাক পরে৷’’
শিল্পের ইতিহাস খোঁজেন যে জার্মান
04:03
ভ্রমণ শেষে তিনি প্রায় কখনোই খালি হাতে ঘরে ফেরেন না৷ যেমন রুমেনিয়া থেকে তিনি সেরামিকের পাত্র এনেছেন৷ বুলগেরিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে এক বিশেষ মুকুট পরা হয়৷ ইটালিতে এক ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া আছে৷ নিজের সাধের কথা বললে সেটি নাকি ইচ্ছাপূরণ করতে পারে৷ কাটারিনার মতে, এমন সব বস্তু সবচেয়ে ভালো গল্প বলতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্যুভেনিয়রের আইডিয়া আমার খুব ভালো লাগে৷ কোনো একটি বস্তুর সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, এই বিষয়টিও আমার পছন্দ৷ কারণ চলচ্চিত্রের মতো স্মৃতি কিন্তু স্থায়ী হয় না৷ প্রত্যেকে বস্তুর সঙ্গে নিজস্ব যোগসূত্র গড়ে তুলতে পারে৷ সেটি ছবির মতো কোনো নির্দিষ্ট রূপ তুলে ধরে না৷’’
শিল্পের ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যাত্রার পরিকল্পনা করেন৷ ভ্রমণকাহিনি ও অন্যদের অভিজ্ঞতার বয়ান পড়েন তিনি৷ এছাড়া তিনি এমন জায়গারও খোঁজ করেন, যেখানে সম্ভবত বিস্মৃত হস্তশিল্প রয়েছে৷ ইউক্রেন ভ্রমণের আগেও তিনি ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ কাটারিনা বলেন, ‘‘ইউক্রেন আমার কাছে এক অজানা দেশ৷ সম্প্রতি আমাকে রুমেনিয়া, বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে ঘন ঘন যেতে হয়েছে৷ এবার ইউক্রেনের পালা৷ দেশটির আয়তন বেশ বড়৷ পশ্চিম ও পূর্বের মাঝের অংশ আমার কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷’’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক ফ্লি মার্কেটে পণ্যের বৈচিত্র্য কম নয়৷ বিয়েতে পরার এক স্কার্ফ তাঁর মনে ধরেছে৷ ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটি আজীবন বিবাহবন্ধন অটুট রাখতে সাহায্য করে৷ কাটারিনার মতে, ‘‘এমন এক জমজমাট হাটে সবই পাওয়া যায়৷ অনেক তরুণ-তরুণী আসে, শনিবার বা সপ্তাহান্ত সেখানেই কাটায়৷ এ সব স্যুভেনিয়য়ার শুধু ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য রাখা হয় নি৷ সাধারণ মানুষ সে সব পছন্দ করে৷’’
সে কারণে কাটারিনা কপেনভালনার-এর ভ্রমণ আসলে এমন অভিজ্ঞতা, সঙ্গে করে আনা স্যুভেনিয়য়ারগুলির মুখে যার গল্প শোনা যায়৷
প্রেচ/কনোলি/এসবি
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১৫টি পর্যটন কেন্দ্র
পৃথিবীর মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ৷ সমুদ্র-পাহাড়-নদী – সব পর্যটন আকর্ষণই আছে এই দেশটিতে৷ বাংলাদেশের ১৫টি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের কথা তুলে ধরা হলো এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য৷ কক্সবাজারকে তাই বলা হয় বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী৷ কক্সবাজার শহরে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের হোটেল-রিসোর্ট৷
ছবি: DW/M. Mamun
একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন৷ টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্র গর্ভে জেগে ওঠা এ দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার৷ এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকত জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সারি সারি নারিকেল বৃক্ষ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সমুদ্রের নীল জলরাশি আর স্থানীয়দের বিচিত্র জীবনযাপন৷ প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস এই দ্বীপে৷ এ দ্বীপের আরেক নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্জন সমুদ্র সৈকত
বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরিবিলি ও পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত টেকনাফ৷ নির্জনে যারা অবকাশ যাপন পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি
বান্দরবান জেলাসদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এ পর্যটন কেন্দ্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ এখান থেকে মেঘ ছুঁতে পারেন পর্যটকরা৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে কয়েকটি রিসোর্টও আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঘে ঢাকা নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উচ্চতায় এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে মেঘের লুকোচুরি দেখা যায়৷ নীলাচল থেকে পাখির চোখে দেখা যায় বান্দরবান শহরকেও৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়ের বাঁকে কাপ্তাই লেক
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্রায় ১৭৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটির অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য৷ কাপ্তাই লেকের ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়৷ এছাড়া কাপ্তাই লেকের অন্যতম আকর্ষণ নৌকা ভ্রমণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাথর বিছানো বিছনাকান্দি
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা বিছনাকান্দি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ী ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা ষাট গম্বুজ
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শহর বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ৷ ১৯৮৩ সালে এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে৷ নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদটিতে মূলত একাশিটি গম্বুজ আছে৷ খান জাহানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি এটি৷ ধারণা করা হয়, ষাট গম্বুজ মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন ১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দের কিুছুকাল আগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন
বাংলাদেশ ও ভারতজুড়ে প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এর বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার৷ ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ বিপন্ন বেঙ্গল টাইগারের নিরাপদ আবাসস্থল এটি৷ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যায়গাটি বেশ পছন্দের৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাঙ্গামাটির ছাদ সাজেক ভ্যালি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক ভ্যালিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’৷ ভৌগোলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি হয়ে৷ সাজেকের আশপাশের গ্রামগুলোতে লুসাই,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের বসবাস৷ কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেকে কফিও চাষ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দক্ষিণের ভাসমান বাজার
দক্ষিণের জেলা শহর ঝালকাঠী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালের শতবর্ষের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার৷ প্রায় সারা বছরই এ হাট বসলেও পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে প্রায় তিন মাস এ হাট জমজমাট থাকে৷ সপ্তাহের প্রতিদিনই বসে ভাসমান এ হাট৷ ঝালকাঠী থেকে ছোট ছোট খালে ঘুরে এ সব এলাকার মানুষের বিচিত্র জীবনযাত্রাও দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাগরকন্যা কুয়াকাটা
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর শেষপ্রান্তে অবস্থিত৷ এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়৷ এছাড়া কুয়াকাটার পাশেই আছে ফাতরার বন, যেটি সুন্দরবনেরই একটি অংশ বিশেষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির
পুরনো ঢাকার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ কিংবদন্তী আছে রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি পেয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেটিকে সেখানে স্থাপন করেন৷ আর নাম দেন ঢাকেশ্বরী মন্দির৷ অনেক ঐতিহাসিকের মতে এই ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই ‘ঢাকা’ নামের উৎপত্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
লালবাগ দুর্গ
পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এ দুর্গটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজাদ ১৬৭৮ সালে নির্মাণ শুরু করেছিলেন৷ পরে শায়েস্তা খান এসে ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন৷ এ দুর্গের ভেতরে পরীবিবির সমাধি, দরবার হল ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ সোনারগাঁও
প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকেই সোনারগাঁও নামের উদ্ভব৷ বঙ্গ অঞ্চলে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে ১৬১০ সালে ঢাকা নগরের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র৷ সোনারগাঁও এলাকার প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খাসনগর দীঘি, দুলালপুরের নীলকুঠি, গোয়ালদি শাহী মসজিদ, আমিনপুর মঠ, দামোদরদি মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন, বড় সরদার বাড়ি প্রভৃতি৷