কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে ১২ দিনের মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন জাপানি ধনকুবের ইউসাকু মায়েযাভা ৷
বিজ্ঞাপন
পর্যটক হিসেবে বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেরানোর সখ অনেকেরই৷ এর জন্য খরচের খাতাটাও খোলা রাখতে হয়৷ তবে ভ্রমণের জন্য শত কোটি টাকা খরচের ইতিহাস হয়তো খুব একটা নেই৷ জাপানের বিলিয়নিয়ার ইউসাকু মায়েযাভা কিন্তু সেটিই করেছেন৷ তবে তার ভ্রমণের জায়গা পৃথিবীর কোনো দর্শনীয় স্থান নয়৷ তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন মহাকাশ৷
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১২ দিন কাটানোর পর সোমবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন তিনি৷ আর এ ১২ দিনের ভ্রমণের জন্য তিনি খরচ করেছেন আনুমানিক ৬১৩ কোটি টাকা৷
নিজের ব্যক্তিগত সহকারি ও ফিল্ম প্রডিউসার ইয়োযো হিরানো এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী আলেকজান্ডার মিসুরকিন-কে নিয়ে কাজাখস্তান থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি৷ ১২ দিনের সফর শেষে আবার কাজাখস্তানেই অবতরণ করেন৷
১২ দিনের এ সফরে কী কী করছেন সে বিষয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ছবি এবং ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি৷ এসব পোস্টে তিনি কীভাবে মহাকাশের ভরশূন্য অবস্থায় চা বানাতে হয় তা দেখাচ্ছিলেন৷ তাছাড়া মহাকাশ স্টেশনে অতিরিক্ত অন্তর্বাসের ঘাটতির বিষয়টিও আলোচনা করতে দেখা গেছে তাকে৷
টম ক্রুজকে পেছনে ফেলে রুশ অভিনেত্রীর মহাকাশ যাত্রা
হলিউড, টম ক্রুজ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার- সবাইকেই পেছনে ফেলে দিলো রাশিয়া৷ অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কোর মহাকাশ যাত্রা শুরুর পর তাই ক্রেমলিনের ঘোষণা, ‘‘মহাকাশে আমরাই অগ্রপথিক৷’’ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
‘প্রথম’ হতে চেয়েছিলেন ক্রুজ
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছিল, হলিউডের একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করতে স্পেসএক্সের রকেটে চড়ে মহাকাশে যাবেন অভিনেতা টম ক্রুজ৷ জানানো হয়েছিল চলচ্চিত্রটির নাম এবং কাহিনি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ছবি: Imago
রাশিয়ার তুরুপ
কিন্তু টম ক্রুজের সেই ছবির নাম ঠিক হওয়ার আগে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কাজও শুরু করে দিলো রাশিয়া৷ মঙ্গলবার ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ নামের একটি ছবির শুটিং করতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন রাশিয়ার অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কো৷
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
আবার এগিয়ে গেল রাশিয়া?
মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিযোগিতা চলছে স্মৃতি হয়ে যাওয়া সেই ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ সময় থেকে৷ দু দেশেরই বড় কিছু অর্জন রয়েছে৷ মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইট এবং প্রথম মানুষ পাঠিয়েছিল রাশিয়া৷ তবে চাঁদে প্রথম সফল অভিযানটা যুক্তরাষ্ট্রের৷ চাঁদে প্রথম পা রাখা মানুষের নাম তাই নিল আর্মস্ট্রং৷ এবার স্পেস স্টেশনে শুটিং করা প্রথম অভিনয় শিল্পী হতে চলেছেন রাশিয়ার ইউলিয়া পেরেসিল্ড৷
ছবি: Roscosmos Space Agency via A/picture alliance
ইউলিয়ার মহাকাশ যাত্রা
মঙ্গলবার কাজাখস্তানের কাছের বাইকনুর নভোযান উড্ডয়ন কেন্দ্র থেকে ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং ক্লিম শিপেঙ্কোকে নিয়ে রওনা দেয় রাশিয়ার সয়ুজ এমএস-১৯ মহাকাশযান৷ মস্কোর সময় বুধবার ৩টা ১২ মিনিটে তাদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
ছবি: Ramil Sitdikov/Sputnik/dpa/picture alliance
১২ দিনের কর্মযজ্ঞ
মহাকাশে ১২ দিন থাকবেন ইউলিয়া পেরেসিল্ড এবং ক্লিম শিপেঙ্কো৷ সঙ্গে দুজন পেশাদার নভোচারীও থাকছেন এই অভিযাত্রায়৷ ওপরের ছবিতে ইউলিয়া এবং শিপেঙ্কোর সঙ্গে ‘কসমোনট’ আন্তন শ্কাপলারভ৷
ছবি: Roscosmos Space Agency/AP/picture alliance
চিকিৎসক ইউলিয়া
টম ক্রুজের ছবির নাম ঠিক করতে দেরি হলেও রুশ পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তার ছবির নাম ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’৷ ছবিতে এক চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করবেন ইউলিয়া৷ একজন নভোচারীর প্রাণ বাঁচাতে মহাকাশ স্টেশনে যেতে হয় তাকে। যাওয়ার পরের ঘটনাগুলোরই চিত্রায়ন হবে ১২ দিনে৷
ছবি: Sergei Savostyanov/TASS/dpa/picture alliance
ক্রেমলিনের বক্তব্য
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন,‘‘মহাকাশে আমরাই অগ্রপথিক৷ হ্যাঁ, অন্যরাও আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে, এখানে যে সদর্থে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে তা ঠিক। এ ধরনের ফ্লাইট আমাদের অর্জনকে জনপ্রিয় করে৷ মহাকাশ নিয়ে মৌলিক চিন্তার জন্যও এটা সুখবর।”
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
7 ছবি1 | 7
সব মিলিয়ে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার এ ভ্রমণটি তিনি বেশ উপভোগ করেছেন বলা যায়৷
স্পেস স্টেশন থেকে এক লাইভ ইন্টারভিউতে ইউসাকু মায়েযাভা বলেন, ‘‘এমন চমৎকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যে কতোটা মূল্যবান তা আপনি শুধু মাহাকাশে আসলেই বুঝতে পারবেন৷''
এদিকে ভ্রমণটিতে কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে এমন প্রশ্নের অবশ্য সরাসরি উত্তর দেননি ইউসাকু মায়েযাভা৷ তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভ্রমণে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৬১৩ কোটি টাকা৷ টাকার অংকটি ঠিক কতো তা প্রকাশ করতে না চাইলেও ইউসাকু মায়েযাভা জানান, অংকটি অনেকটি এরকমই৷
প্রথমবারের ভ্রমণ শেষে এবার ২০২৩ সালে আবারো মহাকাশে যাওয়ার পরিকল্পনা তার৷ এবার লক্ষ্য চাঁদে যাওয়া৷ নিজের সাথে আরো আটজনকে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী৷
উল্লেখ্য, ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ইউসাকু মায়েযাভা ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ষোল হাজার কোটি টাকা৷
মহাকাশ ঘুরে এলেন স্টার ট্রেকের উইলিয়াম শ্যাটনার
স্টার ট্রেক সিরিজের এই বিখ্যাত অভিনেতা সম্প্রতি পর্যটনের জন্য পাড়ি দিলন মহাকাশে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: imago images/Cover-Images
নিউ শেপার্ডের যাত্রী যারা
ব্লু অরিজিন সংস্থার রকেটে চেপে মহাকাশের দিকে রওয়ানা দিলেন চার যাত্রী৷ স্টার ট্রেক সিরিজের অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনারের সাথে রয়েছেন ব্লু অরিজিন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অড্রি পাওয়ার্স, প্ল্যানেট ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস বশুইজেন ও মেডিডেটা সলিউশানস সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা গ্লেন ডে ভ্রিস৷ নিউ শেপার্ড বা এনএস-১৮ রকেটে চেপে তারা উড়ে যান বুধবার৷
ছবি: Cover-Images/imago images
রকেটটি যেমন
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেটের প্রতিরূপ৷ টেক্সাসের ভ্যান হর্ন অঞ্চল থেকে এমন রকেটেই উড়লেন ৯০ বছর বয়েসি উইলিয়াম শ্যাটনার ও বাকি তিন যাত্রী৷
ছবি: Mario Tama/Getty Images
রকেটের পেছনে যিনি
এই রকেটটির এটি দ্বিতীয় যাত্রা৷ আমাজন সংস্থার প্রধান জেফ বেজোস, যিনি একাধারে ব্লু অরিজিনেরও পৃষ্ঠপোষক, তিন মাস আগেই এই রকেটে চেপে মহাকাশ ঘুরে আসেন৷ আগামী যাত্রার জন্য ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে টিকিট বিক্রি, যা থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন বেজোস৷ তবে বুধবারের রকেটের টিকিটের দাম জানা না গেলেও শ্যাটনার ছিলেন এই যাত্রায় আমন্ত্রিত অতিথি৷
ছবি: Patrick T. Fallon/AFP
৯০ বছরে মহাকাশে
উইলিয়াম শ্যাটনার বুধবার মহাকাশের উদ্দেশ্যে উড়ে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করলেন৷ ১০ মিনিট দীর্ঘ এই যাত্রা সম্পন্ন করে শ্যাটনার বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মহাকাশ যাত্রী হলেন৷
ছবি: Blue Origin/REUTERS
সাব-অরবিটাল পর্যটন কী?
সাব-অরবিটাল মহাকাশ যাত্রায় কোনো রকেট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরিয়ে মহাকাশে ভেসে থাকার বদলে কিছু দূর গিয়ে আবার পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণের টানে ফিরে আসে৷ সাধারণ রকেটের মতো তা মহাকাশে ভেসে থাকে না বা নিজের অক্ষপথে থাকে না৷ এই ধরনের রকেট বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে স্পেস ট্যুরিজম বা মহাকাশ পর্যটনে, যার আওতায় রয়েছে এনএস-১৮ রকেটটিও৷
ছবি: Mike Blake/REUTERS
যেমন অনুভূতি হলো শ্যাটনারের
দশ মিনিটের এই ট্যুরে শ্যাটনার অনুভব করলেন মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন ভেসে থাকার মুহূর্ত৷ উত্তেজিত শ্যাটনার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই অনুভূতি থেকে আমি কোনো দিন বেরোতে চাই না৷ আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি৷ জীবন আর মৃত্যু যে কতটা আকস্মিক, তা উপলব্ধি করলাম৷ এক কথায় অসাধারণ! সব মানুষের এই দৃশ্য দেখা উচিত৷’’