1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গর্ভপাত করানোর অনুমতি দিল আদালত

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৫ জুলাই ২০১৭

জটিল রোগে ভুগছে গর্ভস্থ ভ্রূণ৷ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই প্রয়োজন একাধিক অস্ত্রোপচারের, যাতে আছে প্রাণহানির আশঙ্কা৷ এ পরিস্থিতিতে ভ্রুণের জন্ম রুখে দেওয়ার আবেদন করেন এক মা৷ দেড় মাস আইনি লড়াইয়ের পর জয়ী হন তিনি৷ কিন্তু এটা কি জয়?

ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images

মায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে অবশেষে এক অভুতপূর্ব অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ ভ্রূণের অস্বাভাবিকতার মাত্রা বিবেচনা করে ২৬ সপ্তাহ পরেও গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হলো আবেদনকারী মাকে৷ ‘‌সন্তান প্রসব করা বা না করা নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার’ - এই মন্তব্য করে আবেদনের ভিত্তিতে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে আদালত৷ বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি এম খানউইলকরের বেঞ্চ বলেছে, ‘‌‘‌সব মহিলারই তাঁর নিজের শরীরের উপর অধিকার রয়েছে৷ শিশু বাঁচবে না জেনেও সেই ভ্রূণকে গর্ভে ধরে রাখা অতীব যন্ত্রণাদায়ক৷’’

পশ্চিমবঙ্গের বারাসতের এক অন্তঃসত্ত্বার ভ্রুণের বয়স যখন ২৩ সপ্তাহ, তখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি৷ কারণ তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট বলেছিল, গর্ভস্থ সন্তান মোটেই স্বাভাবিক নয়৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ভ্রূণের হৃৎপিণ্ডে রয়েছে বড়সড় সমস্যা৷ শিশুর জন্মের পর তিন মাসের মধ্যে একাধিক বার ‘‌ওপেন হার্ট সার্জারি’ করাতে হবে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপ্রবণ এবং কষ্টদায়ক৷ তাছাড়া তারপরও শিশুটি বাঁচবে কিনা, সেটা বলা মুসকিল৷ সেই কারণেই গর্ভপাতের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেই মা৷

ভারতের বর্তমান আইন অনুযায়ী, এ দেশে ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর গর্ভপাত করানো যায় না৷ ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে গর্ভপাত বেআইনি হিসেবে গণ্য হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করলেও, তা বেশিদূর এগোয়নি৷ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ২০ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ সেক্ষেত্রে মা ও শিশুর শারীরিক অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত৷ জরুরি ভিত্তিতে কোনও মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে চিকিৎসকদের পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷

‌সুপ্রিম কোর্টে বারাসতের দম্পতির আইনজীবী স্নেহা মুখার্জি ডয়েচে ভেলকে জানালেন, ‘‌‘‌১৯৭১ সালে যখন গর্ভপাত আইন তৈরি হয়েছিল, তখন হয়ত ২০ সপ্তাহের সময়সীমা ঠিক ছিল৷ কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পরে গর্ভপাত হলে মায়ের প্রাণের ঝুঁকি থাকে৷ কিন্তু এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ২৬ সপ্তাহ বা তার পরেও গর্ভপাত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত৷’’ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কলকাতার এসএসকেএম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানেই গর্ভপাত করানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷

‘‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ২৬ সপ্তাহ বা তার পরেও গর্ভপাত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত’’

This browser does not support the audio element.

‌‌আদালতে অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পক্ষে স্নেহা সওয়ালে বলেছেন, ইকো-‌কার্ডিওগ্রাফি করার পর জানা যায় ভ্রূণটি ‘‌টেট্রালজি অফ ফ্যালট’-‌এ ভুগছে৷ এটা এমন একটা হৃদরোগ, যা জন্মের সময়ই বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়৷ এই রোগের ফলে জন্মানোর সময় বাচ্চার গায়ের রং হয় নীল৷ কিন্তু এই কথা যখন বাচ্চার বাবা-মা জানতে পেরেছেন, ততদিনে ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ অতিক্রম করে গেছে৷ তারপর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন ওই দম্পতি৷ সে কারণেই গর্ভপাতের আর্জি৷

বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউলের বেঞ্চ ওই দম্পতির আর্জি শুনে গত ২৩ জুন একটি চিকিৎসক দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে মত জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷ সেইমতো এসএসকেএম-এর সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল৷ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরাও আবেদনকারী মহিলার আর্জিতে সম্মতি জানিয়েছেন৷ অবশেষে দম্পতির আর্জিতে সম্মতি জানায় কোর্ট৷

স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ অমিয়ভূষণ সরকার জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌গ্রামাঞ্চলে বহু দম্পতি এই সমস্যায় পড়েন৷ কিন্তু এক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছে তেমন সবসময় হয় না৷ কারণ সুপ্রিম কোর্ট তো অনেক দূর, নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার মতো সামর্থ্যও বহু মানুষের থাকে না৷ চিকিৎসকরাও আইনের প্যাঁচে পড়ে কিছুই করতে পারেন না৷ এখন যদি কেন্দ্র সরকার অথবা সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭১ সালের গর্ভপাত আইনটি সংশোধন করে ২৬ সপ্তাহ বা ২৮ সপ্তাহ করে, তাহলে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে৷’’

‘‘গর্ভপাত আইন সংশোধন করলে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে’’

This browser does not support the audio element.

এদিকে বারাসতে আবেদনকারিণীর স্বামীর কথায়, ‘‘কত রাত আমরা কেউ ঘুমোইনি৷ বারবার ভেবেছি, কী রায় হবে, জিতব তো? আবার ভেবেছি, হায় এ কীসের জয়! এ তো আমাদের প্রথম সন্তান!’’

মহিলার শ্বশুরমশায় নিজে বারাসতের স্বনামধন্য চিকিৎসক৷ তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘‌একই সঙ্গে খুশি এবং গভীর দুঃখের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ওই শিশু ভূমিষ্ঠ হলে সে কতটা কষ্ট পেত, তার শরীরে কী কী সমস্যা ছিল তার সব রিপোর্টই আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল৷ নিয়ম নেই বলে এরকম ক্ষেত্রে চেয়েও ভ্রূণ নষ্ট করা যেত না৷ সেদিক থেকে আদালতের এই রায়ে অনেকেরই সুরাহা হবে৷ তবে পাশাপাশি কোনো পরিবারে এমন ঘটনা ঘটলে কতটা দুঃখ হতে পারে তার আন্দাজ সবাই করতে পারে না৷’’

এর আগেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাব ছিল, ২০ সপ্তাহ সময়সীমাটি বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হোক৷ শুধু বিবাহিত দম্পতি নয়৷ অবিবাহিত মহিলাদেরও গর্ভপাতের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক৷ কিন্তু তাতে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলেছে, এর ফলে গর্ভপাতের চক্রগুলির বাড়বাড়ন্ত হতে পারে৷ লিঙ্গ নির্ধারণের পর ভ্রূণ হত্যাও বাড়তে পারে৷ দু'পক্ষের টানাটানির ফলে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ