আবার লড়াই শুরু হওয়ায় গাজা ভয়ংকর ক্ষুধা সংকটে পড়বে, জানালো জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম।
বিজ্ঞাপন
সাতদিন ধরে যুদ্ধবিরতি ছিল। তখন গাজায় কিছু ত্রাণসামগ্রী ঢুকেছে। তা বিতরণ করার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। কিছু মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ওায়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম(ডাব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ''দুঃখের বিষয় হলো, এই বিষয়ে যতটা এগোনো জরুরি ছিল, তা হয়নি।''
তারা জানিয়েছে, ''নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার ফলে ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে কর্মীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে বেসামরিক সাধারণ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। গাজায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল হলো এই ত্রাণের খাদ্যশস্য।''
ডাব্লিউপিএফ বলেছে, ''আমাদের কর্মীদের জন্য গাজা ভূখণ্ডে নিরাপদ, বাধাহীন ও দীর্ঘকালীন যাতায়াতের ব্যবস্থা চাই। তাহলেই তারা মানুষের কাছে জীবনদায়ী ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে। একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী শান্তি হলেই এই মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। ডাব্লিউপিএফ তাই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি চায় এবং সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান চায়।''
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
পণবন্দিদের পরিবারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠক
যারা মুক্তি পেয়েছেন এবং যারা এখনো হামাসের হাতে বন্দি, তাদের ও তাদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গত দুই মাসের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে যথেষ্ট উত্তজনা ছিল।
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ''আমি এমন কহিনি শুনেছি, যাতে আমার মন ভেঙে গেছে। আমি ক্ষুধা ও তৃষ্ণার, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কাহিনি শুনেছি। যৌন নির্যাতন ও ভয়ংকর ধর্ষণের কথাও শুনেছি। মুক্তি পওয়া পণবন্দিরা এই কাহিনি শুনিয়েছেন।''
ইসরায়েলের মিডিয়া জানিয়েছে, এই বৈঠকে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল এবং শেষের দিকে প্রায় অর্ধেক মানুষ বৈঠক ছেড়ে চলে যান।
দানি মিরানের মেয়ে এখনো হামাসের হাতে বন্দি। তিনি ইসরায়েলের টেলিভিশনে বলেছেন, ''আমি বৈঠকে কী হয়েছে তা বিস্তারে বলব না। শুধু এইটুকু জানাব, পুরোটা ছিল কুৎসিত, অপমানকর এবং অগোছালো।''
আকস্মিক সংঘাতে অসহায় ফিলিস্তিন
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতে পরিস্থিতি এমন যে গাজা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মরিয়া কয়েক লাখ মানুষ৷ কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি সত্ত্বেও মিশর সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা এখন মহাবিপদে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া
২৩ লাখ মানুষের ভূখণ্ড গাজা এখন আতঙ্কের নগরী৷ জাতিসংঘের মানবিক বিষয়াদি সম্পর্কিত সংস্থা অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) জানিয়েছে, গাজায় মৃত্যুভয়ে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে৷ সংঘাতের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত গাজা-র অন্তত তিন লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছে বলে জানিয়েছে তারা৷
ছবি: Majdi Fathi/NurPhoto/picture alliance
স্কুলঘরে আশ্রয়
অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া তিন লাখ গাজাবাসীর দুই তৃতীয়াংশই এখন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ওপরের ছবিতে এক স্কুলে আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার৷
ছবি: Rola Farhat/DW
ধ্বংসস্তূপ ডিঙিয়ে শান্তির সন্ধানে
ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা মিসাইলের আঘাতে ধসে পড়েছে ঘর-বাড়ি৷ চারপাশে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন৷ তার মাঝেই কয়েকজনের বাঁচার পথ খোঁজার চেষ্টা৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
রাফা সীমান্তে বাধা
জাতিসংঘ জানাচ্ছে, সোমবার গাজা থেকে রাফা সীমান্ত হয়ে মিশরে প্রবেশ করে অন্তত ৮০০ মানুষ৷ কিন্তু সেদিন সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় অন্তত ৫০০ জন মিশরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
সীমান্তে কড়াকড়ি
গাজার এক পাশে মিশর অন্য তিন পাশে সাগর অথবা ইসরায়েল৷ মিশর সরকার চায় না সেই দেশে গাজাবাসীর ঢল নামুক৷ তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছেন৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
তবুও মরিয়া আতঙ্কিত মানুষ...
রাফা সীমান্ত বন্ধ করেও গাজার অসহায় মানুষদের মিশরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না৷ এমনকি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম মানুষরাও প্রাণ বাঁচাতে পৌঁছে যাচ্ছেন রাফা সীমান্তে৷ ওপরের ছবিতে হুইল চেয়ারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়া এক গাজাবাসী৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
6 ছবি1 | 6
তিনি বলেছেন, ''সরকার দাবি করছে, তারাই সবকিছু করেছে। কিন্তু হামাস নেতা ইহাইয়াল সিনওয়ার আসলে আমাদের মানুষদের ফেরত দিয়েছেন। যখন সরকার দাবি করছে, তাদের নির্দেশে সবকিছু হয়েছে, তখন আমরা রাগ সামলাতে পারিনি। ওরা একটাও নির্দেশ দিতে পারেনি।''
জেনিফারের পার্টনার অ্যান্ড্রে এখনো বন্দি। তিনি জানিয়েছেন, ''বৈঠক ছিল রীতিমতো উত্তেজক। অনেকেই সেখানে চিৎকার করেছেন।''
বাইডেনের বক্তব্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ''গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আক্রমণ করে হামাস ভয়ংকর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। বিশ্ব এটাকে উপেক্ষা করতে পারে না। সব সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ীদের এই যৌন নির্যাতনের নিন্দা করতে হবে।''
বাইডেন বলেছেন, ''হামাস ইসরায়েলের মেয়েদের উপর অত্যাচার করেছে, তারপর হত্যা করেছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। যারা বেঁচে ফিরেছেন, তারা এই ভয়ংকর কাহিনি আমাদের জানাচ্ছেন।''