1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়াবহ ভাঙনে বিপর্যস্ত গঙ্গাসাগর

পায়েল সামন্ত ভারত
২৪ জুলাই ২০২৪

সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভাঙছে গঙ্গাসাগরের তট। কপিল মুনির আশ্রমের খুব কাছে এসে পড়েছে সমুদ্র। কেদারের মতো আর এক তীর্থ কি বিপর্যয়ের অপেক্ষায়?

কপিল মুনির আশ্রম
গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রমছবি: Avishek Das/SOPA Images/IMAGO

সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। ভারত জুড়ে গঙ্গাসাগরের খ্যাতিকে মাপা যায় এই একটি প্রবাদ বাক্যে। সেই তীর্থ সমুদ্রের গ্রাসে ভাঙনের মুখে রয়েছে দীর্ঘদিন। এখন বিপর্যয়ের মেঘ আরো ঘনিয়েছে।

সাগরে ভাঙন

দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগরে বছরভর পুণ্যার্থীদের আনাগোনা লেগে থাকে। মকর সংক্রান্তিতে হয় বিশেষ স্নান। হাজার হাজার মানুষ গঙ্গাসাগর মেলায় আসেন। এই তীর্থের কেন্দ্রে রয়েছে কপিলমুনির মন্দির। সেই মন্দিরের কাছাকাছি এসে পড়েছে সমুদ্র।

চলতি সপ্তাহে নিম্নচাপ ও ভরা কোটালের জেরে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। এর ফলে গঙ্গাসাগরের উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। সাগরের তটে এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর স্নানঘাট পর্যন্ত কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে গিয়েছে ঢেউয়ের দাপটে। এর ফলে এই স্নানঘাটগুলি আর ব্যবহারের উপযুক্ত নেই। ছয় নম্বর ঘাটে পুণ্যার্থীদের স্নান করতে অনুরোধ করছে প্রশাসন।

‘‘মাস্টার প্ল্যানে কতগুলি কংক্রিটের কাঠামো বানিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না’’

This browser does not support the audio element.

রাস্তার পাশাপাশি তট লাগোয়া অনেক অস্থায়ী দোকান ভেঙে পড়েছে। সমুদ্রের জলে তলিয়ে গিয়েছে দোকানের সামগ্রী। হাওয়ার দাপটে কয়েকটি দোকানের চাল উড়ে গিয়েছে। তট লাগোয়া গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি ও অন্যান্য যা কিছু সবটাই সমুদ্রের গ্লাসে চলে গিয়েছে।

ভাঙন মোকাবিলা

প্রশাসন সাগরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, "কোটাল থাকায় ধস নেমেছে। প্রতি বছরই ধস নামে, তবে এবার একটু বেশি হয়েছে।"

স্থানীয়দের অভিযোগ, ধস বা ভাঙনের সমস্যা গঙ্গাসাগরে লেগেই আছে। প্রতি বছরই একই ছবি। কিন্তু ভাঙন মোকাবিলায় কোনো দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হয় না বলে, বারবার একই সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন এলাকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা।

রাজ্য সরকার ভাঙন মোকাবিলায় একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছিল। গতবছর মেলার আগে মন্দিরের সামনে ভাঙ্গন আটকাতে সেচ দপ্তর প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ১৬ কোটি টাকা খরচ করে সেই প্রকল্প রূপায়িত হলেও সফল হয়নি।

এ বছরেও মকর সংক্রান্তির আগে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সেচ দপ্তর। কিন্তু সমুদ্রের কোপে সেটাও সফল হয়নি।

বড় মাপের একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল আরো আগে, ২০১৯ সালে। চেন্নাই আইআইটির সঙ্গে পরামর্শ করে একটি প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছিল। আইআইটির বিশেষজ্ঞরা সমীক্ষা করেছিলেন। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ কাজে সহযোগিতা করে। ক্ষয়ের কারণ চিহ্নিত করতে রিপোর্ট তৈরি হয়।

এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৪১ কোটি টাকার মাস্টার প্ল্যান হাতে নেয়া হয়। রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারের এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করার কথা ছিল। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির। পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও সেই কাজ শুরু হয়নি। রাজ্যের দাবি, কেন্দ্র তাদের ভাগের টাকা দেয়নি।

২৬ জুলাই উচ্চপর্যায়ের একটি দল গঙ্গাসাগরের তট সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। এরপর কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ

04:05

This browser does not support the video element.

কেদারের মতো শঙ্কা

ভাঙন রুখতে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হলে কেদারের মতো হাল হতে পারে এই পর্যটন ক্ষেত্রের। আগে সমুদ্র অনেকটাই দূরে ছিল কপিল মুনির আশ্রম থেকে। কিন্তু এখন সমুদ্র সৈকত থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব ৫০০ মিটারও নয়। অতীতে একাধিক মন্দির সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। একই আশঙ্কা গঙ্গাসাগরের প্রধান আকর্ষণ কপিলমুনির আশ্রম ঘিরে।

উত্তর ভারতের তীর্থক্ষেত্র কেদারনাথে ২০১৩ সালে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হয়েছিল। অতিবৃষ্টির জন্য হিমবাহে জল ভরে যাওয়ায় হঠাৎ বন্যায় ভেসে যায় এই এলাকা। একাধিকবার তুষার ধসের ঘটনা ঘটেছে। ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেই পার্বত্য অঞ্চলে বারবার তুষার ধস হচ্ছে। এর ফলে প্রাণ যাচ্ছে পুণ্যার্থীদের।

একইভাবে কপিলমুনি আশ্রমের সম্ভাব্য বিপদের পিছনে শুধু বিশ্ব উষ্ণায়ন বা সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিকে দায়ী করতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। উপকূল অঞ্চলে এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য মানুষের কাজকর্ম অনেকটা দায়ী বলে তারা দাবি করছেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, উপকূল বিশেষজ্ঞ অভ্র চন্দ ডিডব্লিউকে বলেন, "কপিলমুনি আশ্রমের সামনে দুই দশক আগেও চওড়া বালিয়াড়ি ছিল। সমুদ্রের ঢেউ সেখানে এসে বাধাপ্রাপ্ত হত। কিন্তু এখন আর বালিয়াড়ি নেই। সেই জায়গা সমান করে ফেলা হয়েছে। তার উপর তৈরি হয়েছে কংক্রিটের নির্মাণ। এছাড়া সেখানে ঝাউবন ছিল। এর ফলে সমুদ্রের দাপুটে হাওয়া গাছের সারিতে বাধা পেত। এখন সেই বাধাও দূর হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ভাঙনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।"

রাজ্য সরকারের মাস্টার প্ল্যান কি গঙ্গাসাগরকে রক্ষা করতে পারবে? সমুদ্রবিজ্ঞানী, অধ্যাপক তুহিন ঘোষ বলেন, "পরিবেশ সচেতন প্রশাসন হিসেবে যে কাজগুলি করার কথা ছিল, সেগুলি করা হয়নি। সেটা না করে বিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলে, তারপর একটা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মেরামত করার চেষ্টা হচ্ছে। এই ১৪১ কোটি কার টাকা? জনগণের করের টাকা। এই মাস্টার প্ল্যানে কতগুলি কংক্রিটের কাঠামো বানিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ