রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি জার্মানি থেকে ফিরছিলেন৷ বার্লিনের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি৷ স্নায়ুতে বিষপ্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনেন তিনি৷ দেশে ফেরার পরই আলেক্সির গ্রেপ্তার যেন আগুনে ঘি ঢেলেছিল৷ গ্রেপ্তারির বিরোধিতায় আন্দোলন চলেছিল সর্বত্র৷
সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রেপ্তারির এক বছরে তিনি স্পষ্ট করলেন, রাশিয়ায় ফেরা নিয়ে কোনও অনুশোচনা নেই তার৷ এটা তাদের দেশ, কোনও ভয় যেন রাশিয়ার নাগরিকদের চালিত না করে এমন বার্তাও দিয়েছেন তিনি৷
ক্রেমলিনের সমালোচক বলেন, তার পোস্ট লাইক করার কারণে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করার খবরও তিনি শুনেছেন৷
তার কথায়, 'আজীবন ভয় নিয়ে বেঁচে কী লাভ?' আলেক্সির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশের বক্তব্য, ১৭ জানুয়ারি জয়ের মুহূর্ত৷ পুটিন ভেবেছিলেন, নাভালনিকে হত্যা করবেন, কিন্তু তা হয়নি৷ আলেক্সি অক্ষত অবস্থায় ঘরে ফিরেছেন৷
আলেক্সির গ্রেপ্তারির পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন পুটিন৷ জার্মানির মানবাধিকার কমিশনার তথা গ্রিন পার্টির লুই আমট্সবুর্গ নাভালনির দ্রুত মুক্তির দাবি তোলেন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও নাভালনির মুক্তির দাবি জানায়৷ তার সমর্থকদের উপর নৃশংস অত্যাচারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে অ্যামনেস্টির টুইটারে৷
নাভালনির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চরমপন্থা বলে দাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ গ্রেপ্তারির পর এ নিয়ে চার বার আলেক্সির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল৷
২০২১ সালের ছবিঘর
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে রাজধানী মস্কোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে৷ এ পর্যন্ত আটক সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
বিক্ষোভের ডাক
১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ সেসময় সমর্থকদের উদ্দেশে বিক্ষোভের ডাক দেন তিনি৷
ছবি: Alexey Malgavko/REUTERS
ব্যাপক বিক্ষোভ
শনিবার থেকে রাজধানী মস্কোসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় পুটিনবিরোধী বিক্ষোভ৷ নাভালনির মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা৷ পাশাপাশি পুটিনের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা৷
ছবি: Sergei Shevchenko/REUTERS
তীব্র শীত উপেক্ষা করে আন্দোলনে
রাশিয়ায় এখন তীব্র শীত৷ তুষারপাত বা তীব্র শীতও দমাতে পারেনি বিক্ষোভকারীদের৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে নাভালনির মুক্তির দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Alexey Malgavko/REUTERS
পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ
কৃষ্ণসাগরের ধারে পুটিনের প্রাসাদ ঘিরে রোববার অবস্থান নেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে আহত হন বেশ কয়েকজন৷ এরপর পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এক পর্যায়ে ধড়পাকড় শুরু হয়৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
আটক সাড়ে তিন হাজার
রোববার পর্যন্ত দেশজুড়ে সাড়ে তিন হাজার নাভালনি সমর্থকের আটকের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি
বিক্ষোভ দমনে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় কয়েক হাজার নিরাপত্তাবাহিনী৷ তবে তাদের উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS/REUTERS
১০০ শহরে বিক্ষোভ
মস্কো, সেইন্ট পিটার্সবার্গসহ প্রায় ১০০ শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নাভালনি সমর্থকরা৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, মস্কোর র্যালিতে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল৷ তবে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল চার হাজার৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
দেশজুড়ে দাঙ্গা পুলিশ
মস্কোতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন করেছে৷ মস্কো থেকেই আটক করা হয় ১২শ’ মানুষকে৷
ছবি: Ksenia Korshun/REUTERS
নাভালনির স্ত্রীকে আটকের পর মুক্তি
বিক্ষোভের মধ্যে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়াকেও কিছুক্ষণের জন্য আটক করে পুলিশ৷ পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS/REUTERS
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়াযজুড়ে এত বড় বিক্ষোভ আগে কখনো দেখা যায়নি আর মস্কোতে গত দশ বছরের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
পুটিনের নিন্দা
এই ব্যাপক বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পড়েছে পুটিন সরকার৷ সোমবার এই বিক্ষোভ সমাবেশকে অনৈতিক ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
নতুন নিষেধাজ্ঞা নয়
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার বিক্ষোভ নিয়ে আলোচনায় বসেন৷ সেখানে বিক্ষোভ দমনে পুটিন প্রশাসনের সমালোচনা করা হলেও নতুন করে রাশিয়ায় কোনো অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
নাভালনি যে কারণে গ্রেপ্তার
গত বছরের আগস্টে নাভালনির ওপর স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়৷ এরপর থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি বার্লিনে ছিলেন৷ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতেই তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়৷ প্যারোলের নিয়ম ভঙ্গ করায় একটি মামলায় তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷