ভারতের প্রথম মঙ্গলগ্রহ অভিযানের সূচনা ভালোই হয়েছিল৷ আগামী সপ্তাহে সেই অভিযান এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে৷ এদিকে নাসার একটি যান আগামী রবিবার মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
গত নভেম্বর মাসে মহাকাশ পাড়ি দিয়ছিল ভারতের মঙ্গলযান৷ একের পর এক পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করে আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করতে চলেছে৷ এই কঠিন কাজটি করতে পারলে ভারতই হবে একমাত্র দেশ, যা প্রথম প্রচেষ্টায় সাফল্য পেলো৷ এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপ কয়েক বার প্রচেষ্টার পরই সাফল্য পেয়েছিল৷
মঙ্গলযানের লক্ষ্য হলো মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে চলা৷ ভূ-পৃষ্ঠ ও তার নীচে ধাতুর স্তর সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চান ভারতীয় বিজ্ঞানীরা৷ এছাড়া বায়ুমণ্ডলে মিথেনের অনুপাতও স্ক্যান করবে মঙ্গলযান৷ মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের পেছনেও মিথেনের বিশেষ অবদান ছিল৷
মঙ্গলগ্রহের পথে ভারতের ‘মঙ্গলায়ন’
মঙ্গলবার ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের পর তারা হবে চতুর্থ রাষ্ট্র যারা সফলভাবে মঙ্গল মিশন শেষ করবে৷
ছবি: picture-alliance/AP
যাত্রা শুরু
৫ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ এর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করল ভারত৷ মিশনের উদ্দেশ্য, লাল গ্রহের পরিবেশে মিথেনের উপস্থিতি আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৪.৫ বিলিয়ন রূপি
এই মিশনের জন্য ভারত ব্যয় করেছে ৪.৫ বিলিয়ন রূপি৷ একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমানের দাম তার চেয়ে দ্বিগুন৷ ‘মঙ্গলায়ন’ নামের এই অর্বিটারটি ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গল গ্রহের অর্বিটে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই দীর্ঘ সময়ে সে পাড়ি দেবে ৪২২ মিলিয়ন মাইল পথ৷
ছবি: Getty Images/Afp/Sajjad Hussain
সফল হলে এলিট ক্লাবে
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের মঙ্গল মিশন সফল হয়েছে৷ ফলে ভারত সফল হলে তারা এলিট ক্লাবে প্রবেশ করবে৷ এছাড়া এশিয়ার মধ্যে তারা হবে প্রথম৷
ছবি: imago/Xinhua
অর্ধেকই ব্যর্থ
এখন পর্যন্ত মঙ্গলকে ঘিরে প্রায় ৪০টি মিশন হয়েছে৷ এর মধ্যে ২০১১ সালে চীন আর ১৯৯৯ সালে জাপানের সহ ২৩টিই ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
দিল্লি-বেইজিং প্রতিযোগিতা?
রাশিয়া ও চীনের একটি মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হওয়ার কয়েক মাস পর গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং মঙ্গলায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ ফলে দিল্লি আর বেইজিংয়ের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতার গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্দেশ্য বহুবিধ
ভারত প্রতি বছর মহাকাশ কর্মসূচির জন্য প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে৷ এর আওতায় এখন পর্যন্ত কৃত্রিম উপগ্রহ ও অত্যাধুনিক রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির অবক্ষয়, বন্যার প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ সহ অনেক কাজ করা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরও পরিকল্পনা
২০০৮ সালে সফলভাবে প্রথম চন্দ্র মিশন শেষ করার পর ২০১৬-১৭ সালে আবারও চাঁদে মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এছাড়া মহাকাশচারীসহ স্পেস ফ্লাইট পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷ তবে এই বিষয়টা এখনও সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
7 ছবি1 | 7
ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরো-র বিজ্ঞানীরা মঙ্গলযানের সাফল্য সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী৷ ২৪শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশের নির্দেশ এরই মধ্যে আপলোড করা হয়েছে৷ মঙ্গলযানের মূল ইঞ্জিনটি গত ৩০০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে৷ মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছনোর দু'দিন আগে ৪ সেকেন্ডের জন্য সেটিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে৷ তাছাড়া গতিপথের সামান্য একটি ত্রুটিও দূর করা হবে৷ তবে কক্ষপথে প্রবেশের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল৷ নির্দিষ্ট সময়ে মহাকাশযানের গতিবেগ ও গতিপথের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের মধ্যেই সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে৷ কোনো কারণে মূল ইঞ্জিনটি চালু না হলে ৮টি ছোট ইঞ্জিন যানটিকে চালনা করবে৷
এদিকে নাসার ‘ম্যাভেন' মহাকাশযান রবিবারই মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণ শুরু করতে চলেছে৷ প্রায় ১০ মাস ধরে যাত্রা করে গন্তব্যের কাছেই পৌঁছে গেছে সেটি৷ অতীতে মঙ্গলগ্রহ ছিল ভিজে ও ঠান্ডা৷ ঠিক কী কারণে জলীয় বাষ্প উবে গেল এবং কার্বন ডাই অক্সাইডও কোথায় গেল – সেই রহস্য সমাধান করার চেষ্টা করবে এই যান৷ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে পর্যায়ক্রমে নানা পরীক্ষা চালাবে ‘ম্যাভেন'৷