লাল রঙের গ্রহে অবশেষে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে৷ কারণ সেখানে দস্তুরমতো জলের স্রোত বইছে বলে দাবি করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা৷ পানির অপর নাম জীবন৷ তাই এবার যদি মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব মেলে – তাহলে অবাক হবেন কি?
বিজ্ঞাপন
হ্যাঁ, নাসা জানিয়েছে রক্তিম এই গ্রহে নাকি জলের স্রোত বইছে গিরিখাত দিয়ে৷ এছাড়া গ্রীষ্মে গ্রহের অসংখ্য গহ্বরের মধ্যেও পানির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে৷ জলের দাগ মিলছে মঙ্গলের গায়েও৷
নাসার দাবি, মঙ্গলগ্রহের তাপমাত্রা শূন্য থেকে পঁচিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই জলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই পানি আসছে কোথা থেকে? বিষয়টি নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় নাসা৷ তবে তাদের ধারণা, মঙ্গলের মাটির নীচে বরফ বা নোনা কোনো কিছু থেকে জল আসতে পারে৷ তবে পানি যেখান থেকেই আসুক, এর ফলে মঙ্গলে প্রাণ আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আবারো জোরালো হতে শুরু করেছে৷ তাই ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানে যে সব এলাকায় জল আছে, সে সব এলাকাতেই মহাকাশযান অবতরণের উদ্যোগ নেবে নাসা৷ জলের নমুনা সংগ্রহ করে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও৷ আর প্রাণের সন্ধান মিললে মঙ্গল যাতে বাসযোগ্য হয়ে ওঠে, তার জন্য অক্সিজেন তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে নাসা৷
অবশ্য জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাল্ফ ইয়াউমান ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘মঙ্গলগ্রহে পানি পাওয়া গেছে ঠিকই৷ কিন্তু সেই জল অতিরিক্ত পরিমাণে লবণাক্ত৷ অর্থাৎ পান করার অযোগ্য৷ তবে মঙ্গল অত্যন্ত হিমায়িত হলেও, এই লবণাক্ততার ফলেই বরফ দ্রুত গলতে শুরু করবে৷ আর জলের ভারিত্বের কারণে তা বেশি সময় পর্যন্ত মঙ্গলপৃষ্ঠে থেকেও যাবে৷''
বলা বাহুল্য, মঙ্গলগ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল আজকের নয়৷ সেখানকার অনেক বৈশিষ্ট্য আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে মিলে যায়৷ সে কারণেই বহু বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে জানতে গবেষণা করে যাচ্ছিল৷
পৃথিবীর বুকে মঙ্গল অভিযান!
মানুষ মঙ্গলগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কিন্তু তার মহড়া তো চাই! মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে মিল থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রিয়ার এক হিমবাহে সেই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: Imago//K.-P. Wolf
আমাডি-১৫
অস্ট্রিয়ার মহাকাশ ফোরাম এই নামে কাউয়ার্ন উপত্যকার হিমবাহে দুই সপ্তাহের প্রকল্প শুরু করেছে৷ বার্লিনের কারমেন ক্যোলার ও স্পেনের ইনিয়োগো মুনিয়োস ‘মহাকাশচারী’ হিসেবে তাতে অংশ নিচ্ছেন৷ বিশ্বের অন্য কোথাও নাকি এমন ‘মঙ্গল’-জনক পরিবেশ পাওয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
ভারী পোশাক
স্পেস সুটের নিজস্ব ওজনই ৪৮ কিলো! অগ্নিনিরোধক সিন্থেটিক ফাইবার ‘কেভলার’ দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পোশাকে অ্যালুমিনিয়ামের স্তরও রয়েছে৷ কারমেন জানালেন, এই পোশাক পরে ওঠাবসা করা খুবই কঠিন৷ শুধু এই পোশাক পরার অধিকার পেতে তাঁকে ৫ মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে৷ কারমেন পেশায় গণিতবিদ ও আবহাওয়াবিদ৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মঙ্গলের মতোই বরফ ও নুড়িপাথরে ঢাকা
গ্রীষ্মে এই হিমবাহের উপরিভাগ জমাট বরফ ও নুড়িপাথরের স্তরে ঢাকা থাকে৷ ফলে মঙ্গলগ্রহের মতোই সেখানে চলাফেরা করা কঠিন৷ তবে এমন ‘আদর্শ পরিবেশ’ পেয়ে গবেষকরা আহ্লাদিত৷ তার উপর এবার দুটি ‘মার্স-রোভার’-ও পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে৷ বড় পাথরের টুকরোও এই যানকে থামাতে পারে না৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
পিস্টেনবুলি-র বদলে রোভার
রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে যে গাড়িটি চালানো হচ্ছে, সেটি অবিকল ‘অপারচুনিটি’ রোভার-এর মতো দেখতে৷ ২০১২ সালে ‘কিউরিয়সিটি’ মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে নামার পর প্রায় ১১ বছর ধরে এই রোভার সেখানে কাজ করে চলেছে৷ তবে পৃথিবীর বুকে এমন পরীক্ষা চালানো অনেক সহজ৷ মঙ্গলগ্রহে সিগনালের আদানপ্রদান করতে ২০ মিনিট লেগে যায়৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
দাঁতের ব্যথা হলেই মুশকিল!
মঙ্গলগ্রহে মানুষের অভিযান চলবে প্রায় ৩ বছর ধরে৷ এই সময়ে কত কিছুই না ঘটে পারে৷ ফলে বিজ্ঞানীরা অনেক দৈনন্দিন সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন৷ যেমন মহাকাশে হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হলে কী হবে? কোনো চিন্তা নেই৷ মহাকাশযানের থ্রিডি প্রিন্টার নকল দাঁত বানিয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
বাষ্প দিয়ে স্নান
প্রায় ১৯টি দেশের ১০০ গবেষক এমন অভিযানের নানা দিক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ ১২টি বিভিন্ন পরীক্ষা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে৷ যেমন বাষ্প দিয়ে স্নান করার এক শাওয়ারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা৷ এতকাল মহাকাশে ভিজে টিস্যু দিয়েই শরীর পরিষ্কার করতে হতো৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মহাকাশযানের বদলে কেবেল কার
যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম ও মানুষ স্কি-লিফট-এ করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হিমবাহের উপর পাঠানো হচ্ছে৷ আসল মঙ্গল অভিযানে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে প্রায় এক বছর৷ তখন মাঝপথে হেলমেট খুলে জিরিয়ে নেবার উপায় থাকবে না বলেই মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
মঙ্গলগ্রহে তুষারপাত হয় না
গ্রীষ্মের মাসগুলিতেই গবেষকদের এই প্রকল্পের কাজ সারতে হবে৷ তার ঠিক পরেই হিমবাহে বরফ পড়তে শুরু করবে৷ মার্স রোভারও তখন এমন গুঁড়ো বরফের উপর অচল হয়ে পড়বে৷ এই অভিযান সম্পর্কে আরও জানতে উপরে ডানদিকের লিংক ক্লিক করুন৷