স্পেস শাটল বা মহাকাশফেরি কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার পর থেকে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বেশ সমস্যায় পড়েছিল৷ এবার নতুন প্রজন্মের রকেট সেই দুর্বলতা কাটাতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালে প্রথম বার মহাকাশে পাড়ি দেবে এই রকেট৷ পোশাকি নাম ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম' বা এসএলএস৷ তার একটি সংস্করণের ওজন প্রায় প্রায় ৭০ মেট্রিক টন৷ তার ধাক্কায় প্রায় ১৩০ মেট্রিক টন মহাকাশে পাঠানো যাবে, যেমনটা এতকাল সম্ভব ছিল না৷ বিপুল শক্তিতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে দ্রুত মহাকাশের গভীরে নিয়ে যেতে পারবে এই রকেট৷ ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ ফলে এই প্রথম সৌরজগতের আরও গভীরে যাবার স্বপ্ন দেখতে পারে মানুষ৷
মঙ্গলগ্রহের পথে ভারতের ‘মঙ্গলায়ন’
মঙ্গলবার ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের পর তারা হবে চতুর্থ রাষ্ট্র যারা সফলভাবে মঙ্গল মিশন শেষ করবে৷
ছবি: picture-alliance/AP
যাত্রা শুরু
৫ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে ভারতের একটি অর্বিটার সফলভাবে মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে৷ এর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করল ভারত৷ মিশনের উদ্দেশ্য, লাল গ্রহের পরিবেশে মিথেনের উপস্থিতি আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৪.৫ বিলিয়ন রূপি
এই মিশনের জন্য ভারত ব্যয় করেছে ৪.৫ বিলিয়ন রূপি৷ একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমানের দাম তার চেয়ে দ্বিগুন৷ ‘মঙ্গলায়ন’ নামের এই অর্বিটারটি ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গল গ্রহের অর্বিটে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই দীর্ঘ সময়ে সে পাড়ি দেবে ৪২২ মিলিয়ন মাইল পথ৷
ছবি: Getty Images/Afp/Sajjad Hussain
সফল হলে এলিট ক্লাবে
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপের মঙ্গল মিশন সফল হয়েছে৷ ফলে ভারত সফল হলে তারা এলিট ক্লাবে প্রবেশ করবে৷ এছাড়া এশিয়ার মধ্যে তারা হবে প্রথম৷
ছবি: imago/Xinhua
অর্ধেকই ব্যর্থ
এখন পর্যন্ত মঙ্গলকে ঘিরে প্রায় ৪০টি মিশন হয়েছে৷ এর মধ্যে ২০১১ সালে চীন আর ১৯৯৯ সালে জাপানের সহ ২৩টিই ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
দিল্লি-বেইজিং প্রতিযোগিতা?
রাশিয়া ও চীনের একটি মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হওয়ার কয়েক মাস পর গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং মঙ্গলায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ ফলে দিল্লি আর বেইজিংয়ের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতার গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্দেশ্য বহুবিধ
ভারত প্রতি বছর মহাকাশ কর্মসূচির জন্য প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে৷ এর আওতায় এখন পর্যন্ত কৃত্রিম উপগ্রহ ও অত্যাধুনিক রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির অবক্ষয়, বন্যার প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ সহ অনেক কাজ করা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরও পরিকল্পনা
২০০৮ সালে সফলভাবে প্রথম চন্দ্র মিশন শেষ করার পর ২০১৬-১৭ সালে আবারও চাঁদে মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এছাড়া মহাকাশচারীসহ স্পেস ফ্লাইট পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷ তবে এই বিষয়টা এখনও সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
7 ছবি1 | 7
তবে শুধু শক্তিশালী রকেট থাকলেই চলবে না, চাই বহুদূর যাবার উপযুক্ত মহাকাশযানও৷ তাই আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ‘ওরিয়ন মাল্টিপার্পাস ক্রু ভেহিকেল'নামের যান তৈরির কাজ চলছে৷ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই সেটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হবে৷
এসএলএস রকেটের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে৷ এর মধ্যে বেশ অগ্রগতি ঘটেছে৷ তবে ২০১৮ সালের নভেম্বরের আগে রকেটটি আকাশে ওড়ার উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে নাসা৷ গত ৪০ বছরে নাসা এত বড় আকারের ‘হেভি লিফট লঞ্চ ভেহিকেল' তৈরি করেনি৷ প্রথম এর তিনটি সংস্করণ তৈরি করতে প্রায় ১,২০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে বলে নাসা অনুমান করছে৷ তবে যে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সরকারি ব্যয়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে, সেই জিএও নাসার এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছে৷ তাদের অভিযোগ, নাসার ‘কনস্টেলেশন' নামের বাতিল হয়ে যাওয়া একটি প্রকল্প থেকে হার্ডওয়্যার নতুন প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ নাসা জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগের জবাব দেবে৷