1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গলবার থেকে ফের কর্মবিরতিতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ অক্টোবর ২০২৪

ফের কর্মবিরতির পথে জুনিয়র চিকিৎসকেরা। দীর্ঘ বৈঠকের পর এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর ফলে উৎসবের মরশুমে ধাক্কা খেতে চলেছে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা।

আবার কর্মবিরতিতে জুনির ডাক্তারেরা
জুনিয়র ডাক্তারদের দ্বিতীয় দফার কর্মবিরতিছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম দফায় ৪২ দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ফের কাজে যোগ দেন। কিন্তু সাগর দত্ত হাসপাতালে নারী চিকিৎসকদের নিগ্রহের ঘটনায় পরিস্থিতি আবার ঘোরালো হয়ে উঠেছে।

কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি হয়। সেখানে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নির্দেশ দেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের পূর্ণ সময়ের জন্য কাজে ফিরতে হবে। আংশিক সময় কাজ করলে চলবে না।

সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট বৈঠকে বসে। সোমবার প্রায় রাতভর চলে সেই আলোচনা। প্রায় আট ঘন্টার বৈঠকের পর জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন সিদ্ধান্ত নেয়, মঙ্গলবার থেকে তারা পূর্ণ সময়ের কর্মবিরতি আবার শুরু করছেন।

ফ্রন্টের চিকিৎসকদের মধ্যে একাংশ শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মত ছিল, পূর্ণ সময়ের কর্মবিরতি না করলে দাবি আদায় করা যাবে না। দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়। বিচারের দাবি থেকে স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ, থ্রেট কালচারের অবসান থেকে দুর্নীতি রোধ, এমনই ১০ দফা দাবি সামনে রেখেছে ফ্রন্ট।

‘এই আন্দোলনের সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়াতে চাই’

21:38

This browser does not support the video element.

৪২ দিনের কর্ম বিরতি প্রত্যাহার করে ২১ সেপ্টেম্বর কাজে ফিরেছিলেন এই চিকিৎসকেরা। ২৭ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে রোগীর পরিবারের হাতে আক্রান্ত হন কয়েকজন নারী চিকিৎসক। রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তার পরিজনেরা।

এই ঘটনার পর সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। তাদের পাশে দাঁড়ায় জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তারা ঘোষণা করে, সোমবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু হবে রাজ্য জুড়ে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পরও সেই সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

জুনিয়র চিকিৎসকদের যুক্তি

পশ্চিমবঙ্গের ২৬টি মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিনের পরিষেবা অনেকটাই নির্ভর করে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর। তাদের ৪২ দিনের কর্মবিরতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা। যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিষেবা, তখন আবার কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের।

দুর্গাপুজো একেবারে দোরগোড়ায়, বুধবার দেবীপক্ষের শুরু। এই সময়টা সরকারি হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ ছুটিতে চলে যান। এতদিন এই সিনিয়ররা বহির্বিভাগে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জুনিয়রদের অনুপস্থিতিতে। উভয়েই গরহাজির থাকলে উৎসবের মরসুমে সংকট আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এর উপর রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি। সেখানকার মানুষজনকে জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা দেয়ার প্রয়োজন বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন আবার কর্মবিরতিতে ফিরতে হল জুনিয়র চিকিৎসকদের?

জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের অন্যতম নেতা অনিকেত মাহাতো বলেন, "আমরা বারবার হাসপাতালে সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু সাগর দত্তের ঘটনা দেখিয়েছে এখনো চিকিৎসকেরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে পরিষেবা দিতে পারেন চিকিৎসকরা?"

রাজ্য সরকারের দাবি, তারা জুনিয়র চিকিৎসকদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে দ্রুত কাজ করে চলেছে। মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ বলেন, "চিকিৎসকদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তার সবকটি ক্ষেত্রে কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। এটা নিয়ে অধৈর্য না হলেই ভালো। চিকিৎসকেরা উচ্চশিক্ষিত, পেশাদার। তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশা করি পরিষেবা চালু রাখবেন।"

যদিও আন্দোলনকারীরা অন্য দাবি করছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মুখ্য সচিবের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছিলেন, পরের দিন রাজ্য সরকার ১০ দফার নির্দেশিকা প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই ক্ষোভ জানিয়ে গত সপ্তাহে দুবার মুখ্য সচিবকে ইমেল করে ডক্টরস ফ্রন্ট। এর কোনো জবাব আসেনি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

সুপ্রিম নির্দেশ

সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে আরজি কর মামলার শুনানিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের পরিষেবার বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি নির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেন, সব ধরনের পরিষেবা জুনিয়র চিকিৎসকেরা দিচ্ছেন কিনা?

জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ জানান, তারা জরুরি ও আপৎকালীন পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, সব ধরনের পরিষেবা দিতে হবে। জুনিয়র চিকিৎসকদের বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, "কেবল মরণাপন্ন রোগীদেরই চিকিৎসা করবেন? কোনো শিশু সাধারণ অসুখ নিয়ে এলে চিকিৎসা করবেন না? জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্তর্বিভাগ ও বহির্ভাগের সব কাজই করতে হবে।"

চিকিৎসকদের ফের কর্মবিরতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "রাজ্যের ১১টি জেলা বানভাসি, এই পরিস্থিতিতে সিসিটিভি লাগানোর কাজে একটু দেরি হতে পারে। জুনিয়র চিকিৎসকদের নিরাপত্তা যেমন জরুরি, তেমন সরকারি হাসপাতালে যে কোটি কোটি মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন, তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। বন্যার পরিস্থিতিতে এই প্রয়োজন বেড়েছে। জনগণের করের টাকায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের পঠনপাঠন চলে, তাই জনতাকে পরিষেবা দিতে হবে। শীর্ষ আদালত বলার পরও তারা কর্মবিরতি করবেন কি না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।"

চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি তথা ছ'টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের অন্যতম কর্তা কৌশিক চাকী ডিডাব্লিউকে বলেন, "জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেয়ার পরও কলকাতা ও জেলার হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপ, রাজ্য প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও কেন এসব ঘটনা ঘটছে? বদলির নামে কয়েকজনের পদোন্নতি করা হল, স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ কর্তা এখনো স্বপদে বহাল। থ্রেট সিন্ডিকেটের পান্ডারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা কী করতে পারেন? তারা তো কাজে ফিরেছিলেন, কিন্তু তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?"

সাগর দত্ত হাসপাতালে নারী রোগীর মৃত্যুর জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের দিকে আঙুল উঠেছে। ডা. চাকী বলেন, "অতি সঙ্কটজনক রোগীকে বাঁচাতে জুনিয়র চিকিৎসকরা সবরকম চেষ্টা করেছিলেন। তাকে আইসিইউতে নেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু সেখানে শয্যা ফাঁকা ছিল না। হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানোর দায়িত্ব চিকিৎসক না প্রশাসনের?"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ