ব্রাসেলসে জি-সেভেন নেতৃবর্গের বৈঠক৷ নামটাই বলে দিচ্ছে, ১৬ বছর পর রাশিয়া আর বিশ্বের নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলির এই সম্মেলনে উপস্থিত নয় – কারণ ইউক্রেন সংকটের দরুণ রাশিয়ার উপস্থিতি কাম্য নয়৷
বিজ্ঞাপন
জি-এইট থেকে কমিয়ে জি-সেভেন৷ রাশিয়া বাদ৷ ঐ বাদ পড়াটাই বস্তুত তার শাস্তি৷ আপাতত এর বেশি কিছু নয়৷ অর্থাৎ ব্যাপারটা যাকে বলা হয় কিনা একটা ‘ডেমনস্ট্রেশন', মানে প্রতীকী আচরণ৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও ‘ডি-ডে'-র কমেমোরেশন উপলক্ষ্যে পশ্চিমে আসছেন৷ কিন্তু মঙ্গলবারে তিনি রাশিয়ায় বসেই ফরাসি মিডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যা-তে তিনি তাঁর নিজের, অর্থাৎ রাশিয়ার মনোভাব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে দিয়েছেন৷
‘‘আমরা এই সংকট ঘটাইনি,'' সাক্ষাৎকারে বলেছেন পুটিন৷ ‘‘আমরা রুশ জাতীয়তাবাদকে উসকানি দেবো না এবং আমাদের রুশ সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কোনো অভিপ্রায় নেই,'' ব্যঙ্গের সুরে বলেন পুটিন৷ ইউক্রেনে যা ঘটছে, তার পিছনে রাশিয়ার হাত আছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে পুটিন বলেন: ‘‘প্রমাণ দেখান৷ সারা বিশ্বের মনে আছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিভাবে ইরাকের গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের প্রমাণ হিসেবে একটি টেস্ট টিউবে ওয়াশিং পাউডার পুরে বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদে প্রদর্শন করেছিলেন৷''
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ব্রিটেন, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ব্রাসেলস থেকে জোরালো বক্তব্য রাখার প্রচেষ্টা করেছেন: ‘‘ইউক্রেনের সার্বভৌম বিষয়ে রুশ ফেডারেশনের অ-গ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউক্রেন সরকার ও ইউক্রেনের জনগণের পাশে আছি৷'' জে-সেভেন নেতারা যোগ করেন: ‘‘রাশিয়ার অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল এবং পূর্ব ইউক্রেনের স্থিতি হানির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় এবং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷''
অপরদিকে পুটিন তাঁর ইউরোপীয় এবং মার্কিনি ‘‘বন্ধুদের'' বিরুদ্ধে ইউক্রেনে একটি ‘‘সংবিধান বিরোধী সশস্ত্র অভ্যুত্থান''-কে সমর্থন করার অভিযোগ এনেছেন৷ তবে পুটিনের কণ্ঠেও আপোষের সুর শোনা গেছে: দৃশ্যত তাঁর ইউক্রেনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে মিলিত হতে কোনো আপত্তি নেই৷ প্যারিস ও নরমান্ডিতে তাঁর আসন্ন সফরে তিনি নাকি সকলের সঙ্গেই কথা বলতে প্রস্তুত৷ আপাতত তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন; শুক্রবার মিলিত হবেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে৷
মোট কথা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরোত্তর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকি বজায় রাখা হচ্ছে৷ এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট৷ অপরদিকে একাধিক ইউরোপীয় নেতা পুটিনের সঙ্গে একক বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন – কেননা রাশিয়ার সঙ্গে আরেক পর্যায় ঠান্ডা লড়াই কিংবা তুষার যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের ক্ষতিই বেশি৷