গত বুধবার মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই অশান্ত মণিপুর।
বিজ্ঞাপন
হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে নাগা ও কুকিরা পথে নেমে সহিংস প্রতিবাদ দেখাচ্ছে। এর ফলে নয় হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। সহিংসতা দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
মণিপুরে পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সেনাও নেমেছে। সেনা রুট মার্চও করেছে। তারপরেও উত্তেজনা কমছে না দেখে দাঙ্গাবিরোধী পুলিশের পাঁচশ জওয়ানকে মণিপুর পাঠানো হয়েছে।
কেন এই বিক্ষোভ?
মণিপুরে মেইতেইরা মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশেরও বেশি। নাগা ও কুকিরা ৪০ শতাংশের মতো। কিন্তু একদিন মেইতেইদের আদিবাসী বলে মানা হত না। কিন্তু এবার হাইকোর্ট তাদের সেই তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দিল। ফলে এতদিন মেইতেইরা নোটিফায়েড পাহাড়ি এলাকায় জমি কিনতে পারত না। এবার তারা পারবে। এটাই অন্য আদিবাসীদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
মণিপুরের বিজেপি সরকারও কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখে মেইতেইদের উপজাতির স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ করেছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানানো যেতে পারে। কিন্তু আপাতত প্রবল জনরোষের সামনে পড়েছে সরকার। সেটা সামলাতেই বিপুল পরিমাণে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকারের বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বাঁচাতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মণিপুরকে চিনে নিন
ভারতের রাজ্য মণিপুরের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সম্প্রতি লন্ডনে তাদের স্বাধীনতার ঘোষণা করে৷ মণিপুরের গল্প গোড়া থেকে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Owen
মণিপুর আসলে কেমন?
উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরের আয়তন ২২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি৷ প্রায় ২৯ লাখ মানুষের বাস সেখানে৷ দাপ্তরিক ভাষা মেইতেই ও ইংরেজি৷ এছাড়াও, মোট ৩০ হাজার বাংলাভাষী মানুষ সেখানে রয়েছেন৷ ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, মণিপুরে ব্যবহৃত হয় ৩৩টিরও বেশি ভাষা! জনসংখ্যার মোট ৪১ শতাংশ হিন্দু ও ৪১ শতাংশ খ্রিষ্টান৷ ৮ শতাংশ মুসলিমও রয়েছেন সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar
মণিপুরের সংস্কৃতি
দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে মণিপুরের সবচেয়ে বড় অবদান মণিপুরী নাচ, যা বর্তমানে ভারতে প্রচলিত শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর অন্যতম৷ এছাড়াও, সেখানে রয়েছে থাং-তা নামের মার্শাল আর্ট ও লোক আঙ্গিকের মঞ্চনাটকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kumar
এক নজরে মণিপুরের ইতিহাস
১৮৯১ সালে ব্রিটিশদের হাতে চলে আসার আগ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার বছর ধরে মণিপুর ছিল স্থানীয় মেইতেই গোষ্ঠীদের দখলে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মণিপুর ছিল জাপানি ও ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে অন্যতম সংঘর্ষস্থল৷ ইমফলে জাপানিবাহিনীদের পরাজয় ছিল যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের নিদর্শন৷
ছবি: imago/Zumapress
স্বাধীন ভারত ও মণিপুর
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র ৷ কিন্তু সেই রাষ্ট্রে যোগদান করেনি মণিপুর৷ ১৯৪৯ পর্যন্ত মেইতেই রাজার রাজত্ব ছিল সেই অঞ্চল৷ পরে, মহারাজা বোধচন্দ্রের তৎপরতায় ভারতে যোগদান করে মণিপুর৷ ১৯৭২ সাল থেকে অঙ্গরাজ্যের পূর্ণ মর্যাদা পায় মণিপুর৷ কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকড় দানা বাঁধতে শুরু করে ষাটের দশক থেকেই৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar
স্বাধীন মণিপুরের দাবি
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএনএলএফ, প্রথম মণিপুরী স্বাধীনতাকামী সংগঠন৷ এরপর থেকেই শুরু হয় সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ধারা৷ বলা হয়, এমন একাধিক গোষ্ঠীকে চীনের তরফে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ ১৯৮০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মণিপুরকে ‘অশান্ত এলাকা’ অভিধা দেয় ভারত রাষ্ট্র৷ ফলে একদিকে বাড়তে থাকে সেনাবাহিনীর প্রশ্নাতীত ক্ষমতা৷ অন্যদিকে, বাড়ে স্থানীয় মানুষের ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ক্ষোভ৷
ছবি: Fotoagentur UNI
উত্তরপূর্ব ভারত ও মণিপুর
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতো মণিপুরও ভারতের অন্যান্য ‘মেইনল্যান্ড’ রাজ্যগুলি থেকে অনেকটাই পিছিয়ে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সরকারী পরিষেবার পাশাপাশি নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তার মতো বিষয়কে ঘিরে মণিপুরের সাধারণ জনতার মধ্যে বেড়েছে অসন্তোষ৷ নিকটবর্তী নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনও এতে ইন্ধন জুগিয়েছে, মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাধীনতার ঘোষণা, মানে কী?
মঙ্গলবার লন্ডনে একটি সংবাদ সম্মেলনে স্বঘোষিত মণিপুর স্টেট কাউন্সিলের মন্ত্রী নারেংবাম সমরজিৎ ঘোষণা দেন যে এখন থেকে আর ভারতের অংশ নয় তারা৷ শিগগিরই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জাতিসংঘে আপিল করবেন তারা, জানান সমরজিৎ৷ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Owen
7 ছবি1 | 7
বিরোধী প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''বিজেপি ক্ষমতায় আসার ১৫ মাসের মধ্যে মণিপুর জ্বলছে। আর চোখের জল ফেলা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন কর্ণাটকের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।''
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''আমি খুবই বিচলিত। এখন মণিপুরকে আগে বাঁচানো দরকার। রাজনীতি ও ভোট পরেও করা যাবে।''