টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তাঁর ছেলে ফয়সাল ফারুকী৷ এ বিষয়েই আজকের ব্লগওয়াচ৷
বিজ্ঞাপন
ফারুকীর হত্যাকারীকে ধরতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে (আল্টিমেটাম) দিয়েছে ইসলামী ছাত্র সেনা৷ সকালে শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শহরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে৷ রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজ বাসায় বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী খুন হন৷ দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে হাত-পা বেঁধে তাঁকে গলা কেটে খুন করে৷ ফারুকী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মতিন) সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও আহলে সুন্নাতের নেতা ছিলেন৷ এ ছাড়া তিনি ইসলামিক মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন৷
কেন খুন হয়েছেন সাগর, রুনি?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে৷ কিন্তু আজও নিহতের পরিবার, শুভানুধ্যায়ী আর সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই বিষয়ে ছবিঘর দেখুন এখানে:
ছবি: DW
সেই কালোরাত
২০১২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি৷ সেদিন খুব ভোরবেলা জানা গিয়েছিল, ঢাকায় নিজের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ একই ফ্ল্যাটে থাকলেও প্রাণে বেঁচে যান তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ৷
ছবি: dapd
সাগর সরওয়ার
দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করার পর ২০১১ সালে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর সরওয়ার (ডানে)৷ সর্বশেষ সেই টেলিভিশন চ্যানেলেই কাজ করেছেন তিনি৷ ২০১২ সালের দশই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুন হন সাগর৷
ছবি: DW
মেহেরুন রুনি
একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় কাজ শুরু করেন মেহেরুন রুনি (বামে)৷ মাঝে স্বামীর সঙ্গে বছর দেড়েক জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর ২০১১ সালে আবারো ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে৷
ছবি: DW
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার!
১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন৷ বলাবাহুল্য, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷
ছবি: DW
সাংবাদিকদের আন্দোলন
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও সাগর-রুনি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে সব সংগঠন৷ খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা৷ জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW
ব্লগারদের প্রতিরোধ
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্লগাররা এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে৷ গত বছর এই ইস্যুতে ব্লগ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে এখনো রয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যানার৷
ছবি: DW
রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে ব্লগারদের সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকাসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে ব্লগ লিখে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে আবু সুফিয়ানের বাংলা ব্লগ৷ ছবিতে আন্দোলনরত আবু সুফিয়ান৷
ছবি: DW
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা
গত অক্টোবর মাসে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ বাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত সপ্তাহে৷ ব়্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের বলছে ‘সন্দেহভাজন’৷ আর পরিবার মনে করছে, এদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কার্যত ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পরিবার
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক বছর হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ ধরা পড়েনি মূল অপরাধীরা৷ তাই তাদের পরিবার এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছেন৷ রুনির ভাই নওশের রোমান জানিয়েছেন, তারা (ব়্যাব) তদন্তের চেয়ে হয়রানি করতে বেশি উৎসাহী৷ সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
জজ মিয়া নাটক চান না সাগরের মা
সাগরের মা সালেহা মনির এখনও কাঁদেন৷ তাঁর দাবি হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে হবে৷ এক বছর পর দারোয়ান এনামুলকে গ্রেফতার তাঁর কাছে জজ মিয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়৷ তাঁর মতে, এক বছরে নানা টালবাহানা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
11 ছবি1 | 11
সামহয়্যার ইন ব্লগে সোহান চৌধুরী লিখেছেন,‘‘একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ শুরু হবার পূর্বেই অতি উত্সাহী কিছু মানুষ এর ওর ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন৷ মূর্খতারও একটা সীমা থাকা উচিত৷ তদন্তই শুরু হলো না, এমনকি ফারুকী সাহেবের পরিবারের সদস্যরাও এখনো জানেন না কারা এবং কেন ফারুকী সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে৷ অথচ রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এক শ্রেণির ছাইপাঁশ লোকেরা কিছু না জেনেই অনুমান করে বলে দিচ্ছেন অমুক হত্যা করেছে তমুক দল জড়িত! এইসব লোকের এহেন অপরিণামদর্শী প্রচার প্রচারণা একদিকে যেমন সুষ্টু তদন্তে কাজে প্রভাব ফেলবে, তেমনি যারা আসল খুনি তারাই অশনাক্ত এবং বিচারের বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা আছে৷''
আরমান অরণ্য লিংকন লিখেছেন,‘‘মাওলানা ফারুকীকে তাঁর নিজ বাসায় জবাই করে হত্যা করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় যতটুকু না অবাক হয়েছি, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এই হত্যাকাণ্ডকে ‘সহীহ' (সঠিক) বানানোর চেষ্টা দেখে৷ অনেকেই অনলাইনে অনেক কথা বলছেন তাঁর মতবাদ নিয়ে, কিন্তু মতবাদের ভিন্নতা কি খুন করে ফেলাকে সমর্থন করে? একটা মানুষের সাথে মতের মিল হলো না বলে খুন করে ফেলাটা কি ইসলামিক পন্থা? দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের পুরো জাতির একটা বিশাল অংশ মানসিকভাবে অসুস্থ৷ এরা হত্যাকে সমর্থনের একটা কারণ খুজতে চায়, ধর্ষণকে সমর্থনের একটা কারণ খুজতে চায়, দুর্নীতি-সন্ত্রাসকে সমর্থনের কারণ খুঁজতে চায়, ভিকটিমকে কোনো না কোনোভাবে দায়ী করার কারণ বের করার জন্য এরা সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে৷''
গোলাম দস্তগীর লিসানি এই হত্যার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন,‘‘ঠিক ৭১ সনে বাংলাদেশের প্রতিটা শহরে যে ঘটনা ঘটতো, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে৷ ১৪ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার বিরোধী পশুশক্তি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করেছিল, সেই ঘটনার ছায়া খেলে গেল৷ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকার টিউনিশিয়া, লিবিয়া, বা মধ্য আফ্রিকার নাইজেরিয়ার দেশগুলোর মতো, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মতো, আরব দেশগুলোর মতো মতবাদের নামে নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে জবাই করে হত্যা করা বাংলাদেশেও শুরু হলো৷''
তিনিও আরমান অরণ্যের কথায় সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘মতবাদের পার্থক্যের কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না৷ ধর্মর নামে, ভাষা জাতি বর্ণের নামে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা যায় না৷ এই মধ্যপন্থি মানুষটা কোনোক্রমেই জামাত শিবির রাজাকার আলবদরের সাথে আপোষ করেননি৷ হেফাজতের নাটকে অংশ নেননি, বরং টেলিভিশনে, রেডিওতে মানুষকে সচেতন করেছেন৷ তিনি কোনোদিন অস্ত্র তুলে নিতে বলেননি, যুদ্ধ করতে বলেননি, আক্রমণ করতে বলেননি৷ যা তাঁর সত্য মনে হয়েছে, যা সত্য বলে তিনি জেনেছেন ৫৫ বছরের দীর্ঘ জীবনে, সেই কথাই বলেছেন৷ বাংলা মায়ের সাথে তিনি প্রতারণা করেননি, বাংলাদেশের সাথে ঘাতকতাকারীদের সাথে কোনোমতেই হাত মেলাননি৷''